পদ্মশ্রী ফেরালেন বজরং, সাক্ষীর অকাল অবসরের পর বিদ্রোহী আর এক কুস্তিগির

পদ্মশ্রী সম্মান ফিরিয়ে দিলেন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। সাক্ষী মালিক বৃহস্পতিবার কুস্তি ছেড়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নেন। কুস্তি ফেডারেশনের নির্বাচনের পর একে একে বিদ্রোহ করছেন দেশের নামী কুস্তিগিরেরা। বজরংদের অভিযোগ ছিল প্রাক্তন কুস্তি ফেডারেশন কর্তা ব্রিজভূষণ সিংহের বিরুদ্ধে। তাঁর ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিংহ এখন কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সেই নির্বাচনের পর থেকেই বিদ্রোহী কুস্তিগিরদের একাংশ।

শুক্রবার বজরং সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছেন যে, তিনি পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বজরং তাঁর বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লিখেছেন, “আমি আমার পদ্মশ্রী সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছি। আপনি নিশ্চয়ই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, তবুও আপনাকে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ দেশের কুস্তিগিরদের সঙ্গে এমন অনেক কিছু ঘটছে যার প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি।”

বজরং তাঁর চিঠিতে এই বছর জানুয়ারি থেকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তাঁরা শুরু করেছিলেন, সেটার উল্লেখ করেছেন। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌননিগ্রহের অভিযোগ ছিল কুস্তিগিরদের। দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে ধর্না দিয়েছিলেন বজরংরা। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবাদ বন্ধ করেছিলাম, কারণ সরকার আমাদের কথা দিয়েছিল ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তিন মাস কেটে গেলেও এফআইআর হয়নি। আমরা আবার প্রতিবাদ শুরু করি। কিন্তু জানুয়ারিতে ১৯টি অভিযোগ থাকলেও তা কমে আসে সাতে। এটা প্রমাণ করে যে ব্রিজভূষণ কতটা প্রভাবশালী। ১২ জন কুস্তিগির প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দেন।”

বৃহস্পতিবার ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সঞ্জয় সিংহ। তিনি অভিযুক্ত কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তার পরেই প্রতিবাদে কুস্তি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাক্ষী। সেই সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন অলিম্পিক্স পদকজয়ী কুস্তিগির।

রিও অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন সাক্ষী। বৃহস্পতিবার কাঁদতে কাঁদতে সাক্ষী বলেন, “আমাকে আর কেউ কখনও কুস্তি লড়তে দেখবে না।” তাঁর পাশে ছিলেন বজরং পুনিয়া। তিনি বলেন, “আমরা আর কুস্তি লড়তে পারব কি না জানি না। রাজনীতি কী ভাবে কাজ করে জানি না।”

নির্বাচনে সঞ্জয় জিতে আসায় বলাই যায় যে, বজরং পুনিয়াদের লড়াই কোনও দাম পেল না। তাঁরা ব্রিজভূষণকে সরানোর জন্য লড়াই করছিলেন। ধর্না দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রিজভূষণ সরলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই কুস্তি সংস্থার দায়িত্বে রইলেন। না থেকেও রয়ে গেলেন ব্রিজভূষণ। এর আগে সঞ্জয় উত্তরপ্রদেশ কুস্তি সংস্থার সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি ৪০টি ভোট পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে মাত্র সাতটি।

সাক্ষী, বজরংদের অভিযোগ ছিল মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থা করেছিলেন ব্রিজভূষণ। যন্তর মন্তরের সামনে ধর্না দিয়েছিলেন বজরংরা। ২৮ মার্চ নতুন সংসদ ভবনের দিকে পদযাত্রা করছিলেন তাঁরা। সেই সময় দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তাঁদের। ৭ জুন কুস্তিগিরেরা ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে কথা বলার পর প্রতিবাদ থেকে সরে আসেন। ক্রীড়ামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন ব্রিজভূষণের পরিবারের কেউ কুস্তি সংস্থার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সেটা না হলেও সঞ্জয় পরিচিত ব্রিজভূষণ ঘনিষ্ঠ হিসাবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.