মানুষের শরীরেই তৈরি হয় ‘ওজ়েম্পিক’! ওজন কমানোর আসল ওষুধ লুকিয়ে কোষের ভিতরেই, মিলল তার খোঁজ

ওজন কমাতে আর ওষুধ খাওয়া কেন। শরীরের কোষই তো তৈরি করে ফেলতে পারে ওজ়েম্পিকের মতো ‘ম্যাজিক পিল’, যা ওজন কমাবে খুব তাড়াতাড়ি। অর্থাৎ, ওজন কমানোর দাওয়াই আছে শরীরের অন্দরেই। ঠিক কোথায় সেই ওষুধ লুকিয়ে আছে, তার খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা।

আমেরিকার ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা দাবি করেছেন, যত রহস্য লুকিয়ে আছে শরীরের ভিতরেই। শুধু তার খোঁজ পাওয়া জরুরি। যেমন, অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষই যে ওজ়েম্পিকের মতো ওষুধ তৈরি করতে পারে, তা কি আগে জানা ছিল? আলফা কোষ এমন জাদু করতে পারে, যা এক ঝটকায় ওজনও কমাবে, আবার রক্তে শর্করাও নিয়ন্ত্রণ করবে।

অগ্ন্যাশয়ের আলফা কোষ হল অনেকগুলি কোষের সমষ্টি। একে বলা হয় ‘আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স’। এত দিন জানা ছিল, আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন নামে এক প্রকার হরমোন ক্ষরিত হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যাঁদের সুগার লেভেল কম বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া আছে, তাঁদের রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এই হরমোন। এখন গবেষকেরা জানালেন, আলফা কোষ যে শুধু গ্লুকাগন নিঃসরণ করে, তা নয়। এর আরও কাজ আছে। এই কোষ থেকে জিএলপি-১ হরমোনও বার হয়, যা আদতে ওজন কমাতে সাহায্য করে। ওজ়েম্পিক, ওয়েগোভি-র মতো ওষুধ এই জিএলপি-১ হরমোনকে সক্রিয় করে তুলেই ওজন কমায়। অথচ, শরীরেরই কোষ তা নিজে থেকে তৈরি করে। এখন মনে হতে পারে, তা হলে শরীরে এত মেদ জমে কেন। এর কারণ হল, আলফা কোষ নিজের মেজাজ মতো চলে। সে যখন তখন হঠাৎ করে জিএলপি-১ হরমোন তৈরি করবে না। সে কাজে তাকে উৎসাহ দিতে হবে। আর এই উৎসাহ দেবে দুই উৎসেচক পিসি২ ও পিসি১।

আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন বার করতে সাহায্য করে পিসি২ উৎসেচক। যত ক্ষণ পিসি২ সক্রিয় থাকে, পিসি১ তেমন ভাবে নাক গলাতে পারে না। যে মুহূর্তে পিসি২ স্তব্ধ হয়, পিসি১ তখন জিএলপি-১ হরমোন নিঃসরণ করতে শুরু করে দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায়, পিসি২ নিজেই রাজত্ব করে, পিসি১ তেমন ভাবে কাজ করতে পারে না। তাই ওজন কমানোর হরমোন সে ভাবে তৈরিই হয় না। গবেষকেরা দেখলেন, কোনও ভাবে যদি পিসি১ উৎসেচককে কাজে লাগানো যায়, তা হলে শরীরের ভিতরেই তৈরি হবে ওজন কমানোর ওষুধ। পাশাপাশি, রক্তে অতিরিক্ত শর্করাও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এক দিকে মেদ কমবে, অন্য দিকে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমবে। তবে গবেষণাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই আছে। ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। মানুষের শরীরে পরীক্ষার পরেই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন গবেষকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.