‘এক দেশ, এক নির্বাচন’-এর পথে হেঁটে মোদী সরকার ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে সমস্ত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন করাতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু, দিল্লি, পঞ্জাব, কর্নাটক, হিমাচলের মতো রাজ্য থেকে প্রবল বিরোধিতা হবে। কারণ এই রাজ্যগুলির বিধানসভার মেয়াদ শেষ হতে এখনও অনেক দেরি রয়েছে। কংগ্রেস-সহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন, এই নিয়ে হইচই তৈরি করে দিয়ে আসলে আদানি-কাণ্ড, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, লাদাখে চিনের জমি দখলের মতো সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে চাইছে মোদী সরকার।
কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, চলতি বছরের শেষে ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মিজোরামের বিধানসভা নির্বাচন। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিমের বিধানসভা ভোট। ২০২৪-এ হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের ভোট। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভা ভোট করাতে হলে এই বছরের ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মিজোরামের ভোট পিছিয়ে দিতে হবে। এগিয়ে আনতে হবে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ডের ভোট। গুজরাত, অসম, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, গোয়া, পুদুচেরিতে বিজেপির সরকার। নরেন্দ্র মোদী চাইলে এই রাজ্যগুলিও বিধানসভা ভেঙে দিয়ে লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা ভোটে চলে যেতে পারে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, দিল্লি, পঞ্জাবের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ শেষ হতে অনেক দেরি। কর্নাটক, হিমাচলে সবে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে। এই সব রাজ্যে আগামী বছর বিধানসভা ভোট করাতে গেলে প্রবল বিরোধিতা হবে। সেই ঝুঁকি বিজেপি নেবে না। কংগ্রেস নেতা কে সি বেণুগোপালের বক্তব্য, ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ইন্ডিয়া-র অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা হবে।
‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ নিয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটি থেকে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী সরে দাঁড়িয়েছেন। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছিল, অধীর প্রথমে কমিটিতে থাকতে রাজি হয়েছিলেন। আজ অধীর জানিয়েছেন, ৩১ অগস্ট রাত ১১টার সময় তাঁর দফতরের সচিবের কাছে প্রধানমন্ত্রী প্রিন্সিপাল সচিব পি কে মিশ্রের ফোন আসে। তাঁকে জানানো হয়, সরকার তাঁকে কমিটিতে রাখতে চাইছে। মিশ্রকে অধীর আগে এই সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠাতে বলেন। তা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান। অধীরের কথায়, “প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেননি। একজন আমলা রাত ১১টার সময় ফোন করছেন!’’
কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে কমিটি তৈরিও অভূতপূর্ব ঘটনা। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, এক দেশ, এক নির্বাচন করতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কমিটির রিপোর্টের পরিণাম কী হবে, তা-ও আগে থেকেই বলে দেওয়া হয়েছে। আজ ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লা অভিযোগ তুলেছেন, বিজেপি আসলে আঞ্চলিক দলগুলিকে শেষ করতে চাইছে। প্রথমে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’, তার পরে ‘এক দেশ, শূন্য নির্বাচন’-এর পথে হাঁটবে।