আমাদের ভারত, ২০ এপ্রিল: শ্রীরামকৃষ্ণ-পার্ষদ স্বামী অখণ্ডানন্দজী মহারাজ মুর্শিদাবাদ জেলার মহুলা-সারগাছিতে ১৩০৩ বঙ্গাব্দের (১৮৯৭ সালে) অন্নপূর্ণা পূজার দিন সেবাধর্মের সূত্রপাত করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সারগাছি রামকৃষ্ণ মিশন বেলুড়ের অধীন প্রথম শাখা কেন্দ্র। কয়েকটি অনাথ বালকে নিয়ে আশ্রমের কাজ শুরু করলেন তিনি। একটি চিঠিতে স্বামী বিরজানন্দকে তিনি লিখছেন, “১৩০৩ সালের শুভ অন্নপূর্ণা পূজার দিন ঠাকুর এখানে আমাকে রেখে তাঁর ‘অন্ন-ছত্র’ খুলিয়াছিলেন– ঠাকুর এই আশ্রমে আমাদের মা অন্নপূর্ণা।”
১৩৩৬ বঙ্গাব্দে (১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে) অন্নপূর্ণা পূজার দিনে এখানে ইষ্টকনির্মিত দ্বিতল দেবালয়ে ঠাকুরের অধিষ্ঠান হয়। আশ্রমের মন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তিনি অন্যত্র লিখেছেন, “আমার অন্তরে ঠাকুর জানিয়ে দেন যে, তিনি এখানে ব্যষ্টিরূপে অন্নপূর্ণা। তাই … কী আশ্চর্য শ্রীমন্দিরের সকল কার্য ঠিক সেই অন্নপূর্ণা পূজার পূর্বদিনেই শেষ হল।”
উনবিংশ শতাব্দীর একদম শেষ ভাগ। স্বামী অখণ্ডানন্দ বা দণ্ডীবাবা তখন বাংলার গ্রামাঞ্চলে পরিব্রজনরত। মুর্শিদাবাদের গোটা এলাকা জুড়ে তখন দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস। দণ্ডীবাবা মহুলা থেকে বহরমপুর চলে যাবেন ঠিক করেছেন। সেদিন সকালে অশরীরী বাণী শুনলেন, “কোথায় যাবি? তোর এখানে ঢের কাজ আছে, গঙ্গাতীর। ব্রাহ্মণের গ্রাম, সুভিক্ষস্থান। তোকে এখানে থাকতে হবে!” সেদিন ভাবতা স্কুলের পন্ডিত ও আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন স্বামিজী। এমন সময় জনৈক রজনী সান্যাল তাঁকে মহুলা গ্রামে তাঁর খুড়োমশাই সূর্য সান্যালের বাড়িতে মা অন্নপূর্ণার প্রসাদ পাবার নিমন্ত্রণ করলেন। ঘোর অন্নকষ্টের সেই দিনে মা অন্নপূর্ণা পূজার সুসংবাদ পেয়ে তাঁর হৃদয়ে ভাবান্তর হল। ‘স্মৃতি-কথা’-য় তিনি পরে লিখছেন, এই শুভদিন পথ হাঁটিতে হাঁটিতে কাটিয়া গেলে আমার পরিতাপের সীমা থাকিত না। এই ভীষণ অন্নকষ্টের দিনে নিরন্ন ও দুঃস্থ জনসাধারণের অন্নকষ্ট দূর করিবার জন্যই কি মা অন্নপূর্ণা আমাকে এখানে ধরিয়া রাখিলেন? প্রাণে প্রাণে আমি ইহা বিলক্ষণরূপেই অনুভব করিলাম এবং মনে মনে মাকে বলিলাম, এইবার তোমার সঙ্গেই আমার বোঝাপড়া হবে।” তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এখানেই আশ্রমের কাজ স্থায়ীভাবে পরিচালনা করতে হবে। দুর্ভিক্ষের কাজ সাধ্য মতো সম্পন্নও করলেন তিনি।
পক্ষাধিককাল থাকার পর চিঠিতে দুর্ভিক্ষের ক্রমাগত বর্ণনা দিলেন স্বামী প্রেমানন্দকে। লিখলেন, দুর্ভিক্ষ-পীড়িতগণের সেবা না করে এখান থেকে তাঁর যাওয়া হবে না। দার্জিলিং থেকে ফিরে স্বামিজী সেই চিঠি পড়লেন এবং উৎসাহিত করে দু’জন সেবককে টাকা দিয়ে মহুলায় পাঠালেন। বললেন, চুটিয়ে কাজ করে যেতে। স্বামী অখণ্ডানন্দজী করলেনও তাই। প্রথম ১৪/১৫ বছর পরগৃহে আশ্রম পরিচালিত হলেও, পরে আশ্রমের জন্য নিজস্ব জমি কেনা হয়৷ সেখানেই বর্তমান আশ্রমটি গড়ে উঠেছে সারগাছি স্টেশনের অদূরে।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী