শ্রাবণ সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর ধুম বাঁকুড়ায়

 শ্রাবণ সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর ধুম বাঁকুড়া
জেলাজুড়ে। শহরের বিভিন্ন মনসা মন্দিরে পুজোর ব্যাপক আয়োজন। রাঢ় বঙ্গের এই জেলায় মনসা পুজোর প্রচলন বহু বছর আগের। বাকুঁড়া শহরের রাণীগঞ্জ মোড়ের প্রাচীন মনসা মন্দিরের স্হাপনা কাল ১৭৭২ সাল বলে উল্লেখ রয়েছে। শহরের প্রাচীন মহল্লায় বিশেষ করে নিম্নশ্রেণির অধিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় তেলিগড়্যা, লালবাজার চটপুকুর, পালিতবাগান, কুচকুচিয়া, রামপুর, শিখড়িয়াপাড়া, গোপীনাথপুর, পাটপুর, লোকপুর, কেন্দুয়াডিহি, দোলতলা বাগদিপাড়া, সেকেন্ড ফিডাররোড প্রভৃতি এলাকায় মনসা মন্দিরের আধিক্য। এছাড়াও ওন্দা, বিষ্ণুপুর, ছাতনা ঝাটিপাহাড়ি, শালতোড়া প্রভৃতি গ্ৰামীন এলাকাতেও রয়েছে প্রাচীন মন্দির। সকাল থেকেই মন্দিরগুলিতে তৎপরতা তুঙ্গে। সন্ধে নামলেই শুরু হবে পূজার্চনা।

পুরাতাত্ত্বিকদের মতে মনসা মূলতঃ লোকদেবী। রাঢ়বঙ্গের যেসব অঞ্চলে একসময় জৈন ধর্মের প্রভাব বেশি ছিল সেইসব অঞ্চলে মনসা পুজোর প্রচলন রয়েছে। তাদের অনুমান জৈন দেবী পরবর্তীতে মনসা রূপে পূজিতা। বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট পুরাতত্ববিদ্ অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মনসা মূলতঃ লোকদেবী, সর্পদেবী হিসাবে পূজিত। সাধারণত মনসার কোনও মূর্তি না থাকলেও সর্পবেষ্টিত পোড়া মাটির ঘট, হাতি ঘোড়া ইত্যাদিতে পূজা করা হয়। কোথাও কোথাও আবার পোড়া মাটির সর্প বেষ্টিত মনসার একধরনের মূর্তি স্হানীয় ভাষায় “মেড়” পূজা হয়। অধুনা কিছু কিছু মন্দিরে মনসার মূর্তি পূজিত হচ্ছে।

মনসা পুজোয় কঠোর বিধি রয়েছে। সেই বিধি মেনেই পুজোর আয়োজন করা হয়। পুজোয় যারা ব্রতী হন তাদের আগের দিন হবিষান্ন পালন করতে হয়। পুজোর দিন তাদের সারাদিন নির্জলা উপবাস থাকতে হয়। সন্ধ্যায় পোড়ামাটির সর্পবেষ্টিত বিশেষ ধরনের ঘট নিয়ে স্হানীয় ভাষায় “বারি” আনতে যাওয়া হয় পুকুরে। সেখান থেকে ঢাক, বাজনা নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে “বারি” মন্দিরে নিয়ে আসার পর শুরু হয় পূজার্চনা। অনেক রাত পর্যন্ত চলে পূজাপাঠ। তারপর ব্রতীরা প্রসাদ গ্ৰহণ করে উপবাস ভঙ্গ করেন। কোথাও কোথাও পরদিন পশুবলির রীতি রয়েছে। কোথাও রয়েছে বানফোড়া,আগুনের উপর হেটে যাওয়া ইত্যাদি কৃচ্ছসাধনার রেওয়াজ। এইসব প্রাচীন রীতিনীতির সঙ্গে যোগ হয়েছে আধুনিকতা। লাইট, সুদৃশ্য প‍্যান্ডেল, হরেক রকমের ব্যান্ডপার্টি সহযোগে উৎসবের মেজাজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.