গত ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট সারা দেশে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এসব মানবতা বিরোধী ঘটনাবলীর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তুলল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা সরকারের দেশত্যাগের আগের দিন ৪ আগস্ট বিকেল থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হিংসার চালচিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এ সময়ে দেশের ৬৮টি জেলা ও মহানগরে মোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, “এসব ঘটনায় ৯ জন হত্যার শিকার হয়েছে। ৬৯টি উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪ জন। ৯১৫টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙ্গচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ৯৫৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙ্গচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
বসতবাড়ি দখল হয়েছে ১টি। জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল হয়েছে ২১টি। শারীরিক নির্যাতনে জখম হয়েছে ৩৮জন। মোট ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় ১৭০৫টি পরিবারের সদস্যরা সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে। উক্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ১৫৭টি পরিবার রয়েছে যারা ইতোমধ্যে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এবং বর্তমানে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১ জন বাকপ্রতিবন্ধী। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার ১৭০৫টি পরিবারের মধ্যে ৩৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের পরিবার রয়েছে, যাদের বসতবাড়ি লুটপাট, ভাঙ্গচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিবারের জমি জবরদখল করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় প্রতিটি বিভাগেই এ ঘটনা ঘটেছে এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও লোকজন আক্রান্ত হয়েছে। এই ১৭ দিনের সাম্প্রদায়িক হিংসায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নর-নারী, কিশোর-কিশোরী, শিশু ও প্রতিবন্ধী মানুষ সরাসরি আক্রান্ত হয়েছে এবং ট্রমায় আক্রান্তের সংখ্যা সারা দেশে আনুমানিক ২ কোটি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী যারা বর্তমানে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিন কালাতিপাত করছে।
ঐক্য পরিষদের সভাপতি মি: নির্মল রোজারিও তাঁর পাঠ করা বক্তব্যে এই চিত্র তুলে ধরে বলেন, স্বাধীন দেশে ১৯৭২ পরবর্তী ১৯৯০, ১৯৯২, ২০০১ থেকে ২০০৬, ২০১৩ থেকে ২০২১ এবং তৎপরবর্তী সময়ে ২০২৪ সালে বর্তমান সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতিটি সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় (যাদের বৃহদাংশ হিন্দু সম্প্রদায়) নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে।
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, বিগত সামরিক-বেসামরিক কোনও সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সংঘটিত হাজারো নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনার একটিরও আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি বা দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের ১৯-২০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ২০২৪- এ নেমে প্রায় ৮.৬%-এ এসে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড: নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয় ও রঞ্জন কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ বসু, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ,
সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপঙ্কর ঘোষ, যুব বিষয়ক সহ-সম্পাদক বলরাম বাহাদুর, সহ-পেশাজীবী বিষয়ক সম্পাদক সুবীর দত্ত, যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি শিমুল সাহা প্রমুখ।