নিজে ওসি পদমর্যাদার আধিকারিক। বীরভূমে কর্মরত। ছুটি নিয়ে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদে, পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে একটি হাসপাতালে অসুস্থ মাকে ভর্তি করানো নিয়ে বচসার সময় সেই ওসির বিরুদ্ধে আর এক ওসির গলা টিপে ধরার অভিযোগ উঠল। শুধু তা-ই নয়, বীরভূমের ওই ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন। হেনস্থা করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের। বচসার সময় দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ওসি আশরাফুল শেখকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে মুর্শিদাবাদের পুলিশ। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তাঁকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার আমনদীপ।
পুলিশ সূত্রে খবর, আশরাফুল বীরভূমের ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ওসি। কয়েক দিন আগে বিয়ের জন্য ছুটি নিয়ে তিনি মুর্শিদাবাদের লালবাগের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁর বিয়ে হয়েও গিয়েছে। এর পর মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর মা। অসুস্থ মাকে ওই রাতেই কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন আশরাফুল। সেখানে মাকে ভর্তি করানো নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বচসা বেধেছিল তাঁর। অভিযোগ, বচসার সময় চিকিৎসক-নার্সদের গালিগালাজ করেছেন আশরাফুল। মারধরও করেছেন তাঁদের। হাসপাতালের কর্মীদের দাবি, আশরাফুল সেই সময় মত্ত অবস্থায় ছিলেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল লালগোলা থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন লালগোলা থানার ওসি অতনু হালদার, সাব- ইনস্পেক্টর কল্যাণ সিংহ। অভিযোগ, তাঁদের উপরেও চড়াও হন আশরাফুল। ধস্তাধস্তি, হাতাহাতির সময় অতনুর গলাও টিপে ধরেছিলেন তিনি। হাতে চোট পেয়েছেন এসআই কল্যাণ।
ওই ঘটনার পরেই আশরাফুল, তাঁর স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা বিবি এবং পরিবারের চার জনকে গ্রেফতার করেছে মুর্শিদাবাদের পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি পৃথক অভিযোগ দায়ের হয়েছে। একটি করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর একটি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে।
ভগবানগোলার এসডিপিও উত্তম গড়াই বলেন, ‘‘অভিযুক্ত আশরাফুল শেখ তাঁর মাকে নিয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। আসার পর থেকেই ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছিলেন। তাঁদের গায়ে হাতও তুলেছিলেন। পুলিশকর্মীরা যখন ওখানে যান, তাঁদেরও হেনস্থা করা হয়। দু’টি পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে।’’
কৃষ্ণপুর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ এক রোগীকে নিয়ে এসেছিলেন কয়েক জন। রোগীর অবস্থা দেখে আমরা দ্রুত চিকিৎসাও শুরু করেছিলেন। সেই সময় রোগীর আত্মীয়েরা হঠাৎ করে আমাকে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের গালিগালাজ করা শুরু করেন। বীরভূমের কোনও এক থানার ওসির পরিচয় দিয়ে এক জন তেড়ে মারতেও আসেন আমাদের। হাসপাতালের সিভিক ভলান্টিয়ারেরা লালগোলা থানায় খবর দেয়। লালগোলা থানার ওসি ঘটনাস্থলে আসেন। তার পরেও পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। এই হেনস্থার ঘটনার বিচার চাই।’’
বীরভূম পুলিশ সূত্রে খবর, আশরাফুলের বিরুদ্ধে অতীতেও নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। কীর্ণাহার থানার ওসি থাকাকালীন এক ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে এক লক্ষ টাকা তোলা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পরে আরও ১০ হাজার টাকা নেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতেও জানিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এর পরেই আশরাফুলকে বীরভূম ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর ওসি পদে পাঠানো হয়েছিল।