Novak Djokovic: জোকোভিচের হাতেই উইম্বলডন, ফেডেরারকে টপকে এ বার তাঁর সামনে শুধু নাদাল

শেষ পর্যন্ত নখগুলো বেঁচে গেল।

রবিবার উইম্বলডনের ফাইনালে ‘নেল বাইটিং ফিনিশ’ হল না। মনে করা হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এমন দুই খেলোয়াড় মুখোমুখি হয়েছিলেন, যাঁরা বিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে শেখেননি। মার খেলে পাল্টা মার দিতে পছন্দ করেন। চোখে চোখ রেখে লড়াই করেন। তবু নখগুলো বেঁচে গেল। কারণ যতটা মনে করা হয়েছিল ততটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল না। শেষ সেট বাদে কিছুটা একপেশে ফাইনাল হল। বিজয়ীর নাম বলতে পারলে কোনও পুরস্কার অবশ্য নেই। নিক কিরিয়সকে ৪-৬, ৬-৩, ৬-৪, ৭-৬ গেমে হারিয়ে ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ঘরে তুললেন নোভাক জোকোভিচ।

দুই শিল্পী টেনিস খেলোয়াড় যখন একে অপরের মুখোমুখি হন, তখন ম্যাচে যে শিল্পের নিদর্শন থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলা নিক কিরিয়সকে শিল্পী খেলোয়াড় বলা যাবে কি না, সেটা অবশ্য তর্কসাপেক্ষ। তবে তাঁর হাতে শটের যে বৈচিত্র্য, যে মাধুর্য্য এবং যে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য্য রয়েছে, তাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। রবিবার উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে একাধিক বার তা দেখা গেল।

তবে ৩২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলা নোভাক জোকোভিচের বিরুদ্ধে জেতার জন্য যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি দরকার, সেটাই দেখা গেল না কিরিয়সের খেলায়। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়। মার খেলেন জোকোভিচের অভিজ্ঞতার কাছে। ফলে পাঁচ সেটেও গড়াল না এ বারের উইম্বলডন ফাইনাল। জোকোভিচ জিতলেন ৪-৬, ৬-৩, ৬-৪, ৭-৬ গেমে। সার্বিয়ান খেলোয়াড় টপকে গেলেন রজার ফেডেরারকে। সামনে এ বার শুধু রাফায়েল নাদাল, যিনি এই উইম্বলডন থেকে চোটের কারণে সেমিফাইনাল থেকে নাম তুলে নিয়েছিলেন। এই নিয়ে সাত বার উইম্বলডন জিতলেন জোকোভিচ। টপকে গেলেন পিট সাম্প্রাসকে। সামনে এখন রজার ফেডেরার, যাঁর ক্যাবিনেটে রয়েছে আটটি ট্রফি।

উইম্বলডনে কোন ফাইনাল এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা, সেটা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। ২০০৮ সালে পাঁচ সেটের ম্যারাথন লড়াইয়ের পর নাদালের জয়, নাকি ২০১৯ সালে জোকোভিচের জয়? তবে যেটিই এগিয়ে থাকুক, রবিবারের দ্বৈরথ শুরু হওয়ার পরে প্রথমে মনে হয়েছিল এ বারের ফাইনাল হয়তো খুব একটা পিছিয়ে থাকবে না। কারণ, শুরুতে এ দিন জোকোভিচের বিরুদ্ধে বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়েননি কিরিয়স। প্রতিটি পয়েন্টের জন্য লড়েছেন। ম্যাচের ফল দেখে সেটা অবশ্য বোঝা যাচ্ছে না। তবে এমন উইম্বলডন ফাইনাল দেখার জন্যেই তো কোর্ট ভরিয়ে দেন দর্শকরা। এমন ফাইনালই তো তাঁরা দেখতে চান।

কী ছিল না এ দিনের খেলায়! বিশেষ করে প্রথম সেটে। অনবদ্য সার্ভিস, দুরন্ত ফোরহ্যান্ড, নিখুঁত ড্রপ শট, অবিশ্বাস্য রিটার্ন। ফাইনালের দুই প্রতিযোগী একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার খেলায় নেমেছিলেন। কখনও জোকোভিচের রিটার্ন দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠছেন দর্শকরা। পর ক্ষণেই কিরিয়স ‘এস’ সার্ভিস চমকে দিচ্ছে তাঁদের। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তাতেও ম্যাচে পাওয়া গেল একজন বিজয়ী। দু’জনের মধ্যে তফাত গড়ে দিল আবেগ এবং অভিজ্ঞতা।


প্রথম সেটে দু’জনেই নিজেদের প্রথম দু’টি সার্ভিস ধরে রাখেন। পঞ্চম গেমে জোকোভিচকে ব্রেক করেন কিরিয়স। প্রথম ব্রেক পয়েন্টে তাঁর রিটার্ন কোনও ভাবে বাঁচালেও জোকোভিচের ডাবলস কিরিয়সকে প্রথম ব্রেকের সুযোগ করে দেয়। দ্বিতীয় সেটের তৃতীয় গেমে জোকোভিচ ব্রেক করেন কিরিয়সকে। তার পরে কেউই আর কাউকে ব্রেক করতে পারেননি। ফলে সেট পকেটে পুরতে অসুবিধা হয়নি জোকোভিচের।

তৃতীয় সেট থেকেই ম্য়াচ ধীরে ধীরে কিরিয়সের আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে থাকে। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি এই সেট থেকেই। প্রতিপক্ষের মনঃসংযোগ ব্যাহত করার জন্যে নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলতে থাকেন। সেট চলাকালীন একাধিক বার ঝামেলায় জড়ান আম্পায়ারের সঙ্গে। দর্শকাসন থেকে কেউ বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। আম্পায়ার জিজ্ঞাসাও করেন যে কে মন্তব্য করছেন। দর্শকদের মধ্যে থেকে একজনকে চিহ্নিতও করে দেন কিরিয়স।

ওই যে এক বার মেজাজ হারিয়ে ফেললেন, তা আর ফিরে পাননি কিরিয়স। উল্টো দিকে যিনি ছিলেন, সেই জোকোভিচ এক বারের জন্যেও এ সব ব্যাপারে কান দেননি। হয়তো প্রতিপক্ষ সম্পর্কে পড়াশোনা করে নেমেছিলেন বলেই আগাগোড়া ঠান্ডা মাথায় খেলেছেন। পিছিয়ে পড়েও বিচলিত হননি। বরফশীতল মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। সেই কাজে সফলও হন। চতুর্থ সেটে কেউ কাউকে এক বারও ব্রেক করতে পারেননি। তবে টাইব্রেকারে জোকোভিচের ম্যাচ জিততে মোটেই সময় লাগল না।

ট্রফি না জিততে পারেন, দর্শকের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে মেজাজ হারাতে পারেন, কিন্তু সেন্টার কোর্টে যে লড়াইটা দিলেন কিরিয়স, তা অসাধারণ। গোটা ম্য়াচে তাঁর র‌্যাকেট থেকে ৩০টি ‘এস’ বেরোল, যা জোকোভিচের দ্বিগুণ। ৬২টি ‘উইনার’ মারলেন, জোকোভিচের থেকে ১৬টি বেশি। তা সত্ত্বেও তাঁকে ট্রফিজয় থেকে বঞ্চিত হতে হল। অবিশ্বাস্য় এক-একটা রিটার্ন চমকে দিচ্ছিল সার্বিয়ার খেলোয়াড়কে। অন্তত দু’বার কিরিয়সের শট রিটার্ন করতে গিয়ে কোর্টে মুখ থুবড়ে পড়লেন তিনি।

আগের থেকে নিজেকে অনেক বদলে ফেলেছেন কিরিয়স। সেই বদলের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল তাঁর খেলাতেও। অনেক পরিণত শট। পিছিয়ে পড়েও অকারণে মাথা গরম করছেন না। পয়েন্টের মাঝে বিরতিতে বসে নিজেই নিজেকে বোঝাচ্ছেন। মাথা নীচু করে ভাবছেন। কখনও হতাশায় মাথা নাড়ছেন, কখনও আনন্দ উপভোগ করছেন। তবে বড় মঞ্চে সাফল্য পেতে গেলে যে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ দরকার হয়, সেটা কিরিয়সের মধ্যে দেখা যায়নি। ফলে এত কাছাকাছি এসেও স্বপ্নকে ছোঁয়া হল না তাঁর। উল্টো দিকে জোকোভিচের বদলে অন্য কেউ থাকলে ট্রফি নিঃসন্দেহে উঠত কিরিয়সের হাতে। তবে এই হার যে তাঁকে মানসিক ভাবে শক্তিশালী করবে সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এই রবিবার না হলেও, কোনও এক রবিবার তাঁর হাতে ট্রফি হয়তো উঠবেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.