মাঠের মধ্যে রজার ফেডেরার এবং রাফায়েল নাদালের মধ্যে তীব্র লড়াই হত। কিন্তু ম্যাচ হয়ে গেলেই দু’জনের গলায় গলায় বন্ধুত্ব। একই জিনিস দেখা যায় নোভাক জোকোভিচের খেলা থাকলেও। কোর্টে যতই একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার তীব্র চেষ্টা থাক, মাঠের বাইরে সব লড়াই দূরে সরিয়ে রাখেন জোকোভিচ। মুগ্ধ কণ্ঠে প্রশংসা করেন প্রতিপক্ষের। রবিবার উইম্বলডন ফাইনাল জেতার পর আরও একজন ‘বন্ধু’ পেয়ে গেলেন জোকোভিচ। সার্বিয়ার খেলোয়াড়ের ভাষায় ‘ব্রোম্যান্স’, অর্থাৎ বন্ধুত্ব এবং প্রেমের মিশেল। জোকোভিচের নতুন বন্ধু নিক কিরিয়স, যাঁর সঙ্গে অতীতে তীব্র বাক্যবিনিময় থেকে রেষারেষি, সব কিছুই হয়েছে।
২০১৭-য় মেক্সিকোর আকাপুলকো ওপেনে প্রথম বার কিরিয়সের মুখোমুখি হয়েছিলেন জোকোভিচ। সেই ম্যাচ শেষ হয় তীব্র ঝামেলা দিয়ে। ম্যাচের মাঝে বার বার চিৎকার করছিলেন কিরিয়স। জোকোভিচ সটান অভিযোগ জানান আম্পায়ারের কাছে। কিরিয়সের উত্তর ছিল, তিনি নিজেকে তাতাতেই ও ভাবে চিৎকার করছেন। আসল ঘটনা অন্য। ম্যাচের পর কিরিয়স স্বীকার করে নেন, প্রতিপক্ষের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্যেই ও রকম করছিলেন। বলেছিলেন, “মনে হয় আমাকে দেখে জোকোভিচের কোনও জন্তু মনে হয়েছিল। ওর মনঃসংযোগ ব্যাহত করার জন্যেই ও রকম করছিলাম। তবে ওকে পাল্টা দিতে দেখিনি কোনও সময়।” কয়েক মাস পরে ইন্ডিয়ান ওয়েলসের সময়েও একই ঘটনা। তখনও তর্কাতর্কি।
তবে উইম্বলডনে যাবতীয় মন কষাকষি, দূরত্ব ধুয়েমুছে গেল। তৈরি হল ‘ব্রোম্যান্স’। জোকোভিচ বললেন, “নিক, আমি নিশ্চিত তুমি এখানে আবার ফিরে আসবে। শুধু উইম্বলডন নয়, অনেক ফাইনালে খেলবে। দেখিয়ে দিলে যে তুমি এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তোমায় এবং তোমার দলকে অনেক শুভেচ্ছা। আগামী দিনের জন্যেও অনেক শুভেচ্ছা রইল। অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে তোমার। ভাবিনি কোনও দিন তোমার সম্পর্কে এত কথা বলব। বিশেষত এত দিন আমার মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল! তবে আজ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের ব্রোম্যান্স শুরু হল। আশা করি দারুণ বন্ধুত্বের শুরুটা এখান থেকেই হবে। তোমার সঙ্গে এ বার নৈশভোজে যেতেই হচ্ছে।” কিরিয়স তার আগেই বলেছেন, “অনেক শুভেচ্ছা তোমাকে নোভাক। তুমি যে কত বার এই ট্রফিটা জিতেছ মনে করতে পারছি না।”
জোকোভিচ এবং কিরিয়সের মধ্যে সম্পর্ক যে সহজ হয়ে গিয়েছে, এটা বোঝা গিয়েছিল উইম্বলডন ফাইনালের আগেই। ম্যাচের আগের দিনই জোকারকে ইনস্টাগ্রামে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠিয়ে বসেন কিরিয়স। তাঁর প্রস্তাব পেয়ে জোকোভিচ মজা করে উত্তরে লেখেন, ‘তুমি যদি আমাকে পান করার জন্য বা নৈশভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানাও তবে ভেবে দেখতে পারি। তবে ফাইনালে যে জিতবে, সে খরচ করবে।’ পাল্টা জবাবে কিরিয়স লেখেন, ‘তোমার শর্তে আমি রাজি। চলো নাইট ক্লাবে যাই। দু’জনে বাদাম খাব।’ এই শর্ত যদি মানা হয়, তা হলে নৈশভোজে সব খরচ দিতে হবে জোকোভিচকে। তবে নতুন বন্ধুত্বের খাতিরে জোকোভিচ সেই টাকা দিতে অস্বীকার করবেন বলে মনে হয় না। উইম্বলডন জিতে রবিবারই তো তাঁর পকেটে ঢুকেছে ১৯ কোটি টাকা।