তৃণমূলকে নয়, বিরোধীদের নবান্ন অভিযানে পাশে চায় ছাত্র সমাজ, পাশে থাকছে বিজেপি, বাকিরা কোন পথে?

মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানকে সফল করতে বিজেপি যতটা তৎপর ততটা নয় অন্য কোনও রাজনৈতিক দল। তবে এখনও স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানায়নি নওশাদ সিদ্দিকির দল আইএসএফ। তবে কংগ্রেস বা সিপিএম যে এই কর্মসূচিতে দলীয় ভাবে পাশে নেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিজেপি কর্মীরা যোগ দেবেন কি না সে ব্যাপারে পদ্মশিবির সতর্ক জবাব দিলেও নবান্ন অভিযানকে সমর্থন জানাতে নানা প্রস্তুতিও শুরু করেছে। রবিবার লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাতে একমাত্র মঙ্গলবারই কোনও কর্মসূচি নেই। সুকান্ত স্পষ্টই জানান, পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের ডাকে নবান্ন অভিযানের কারণেই সে দিন বিজেপি কোনও কর্মসূচি রাখছে না। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন ওই দিনের মিছিলে কেউ আহত হলে তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য তাঁরা তৈরি থাকবেন।

অনেক আগে থেকেই সমাজমাধ্যমে এমন প্রচার শুরু হয়েছিল যে, সোমবারের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ না করলে নবান্ন অভিযান হবে মঙ্গলবার। মূলত সমাজমাধ্যমেই চলে সেই প্রচার। এ বার রাস্তায় নেমেও প্রচার শুরু করে দিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’। রবিবার সকালে শিয়ালদহ স্টেশন, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান গেট-সহ বিভিন্ন জায়গায় আয়োজক ছাত্রেরা পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁদের অন্যতম শুভঙ্কর হালদারের বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই ছাত্রদের ডাকে এই অভিযানে সব স্তরের, সব লিঙ্গের এবং মতের মানুষ যোগ দিন। সেই কারণেই যাঁরা সমাজমাধ্যম কম ব্যবহার করেন তাঁদের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে রাস্তায় নেমে প্রচার করা হচ্ছে।’’ একই সঙ্গে শুভঙ্কর জানান, রাজ্যের সব বিরোধী দলের সঙ্গেই তাঁরা যোগাযোগ করেছেন। দাবি করেন, কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী স্বয়ং এই অভিযানে সমর্থন জানিয়েছেন এবং তিনি নিজেও মিছিলে আসবেন। তবে অধীর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমাকে উদ্যোক্তাদের কেউ ফোন করেননি। আমায় মিডিয়া জিজ্ঞেস করেছিল ছাত্র সমাজের ডাকা নবান্ন অভিযান সমর্থন করেন? যখন জিজ্ঞেস করেছিল তখনও সবের নেপথ্যে বিজেপি আছে না কে আছে এ সব শোনা যায়নি। তখন আমি বলেছিলাম সমর্থন করি। কিন্তু এমন কিছু বলিনি যে আমি যাব।’’

ওই ছাত্রদের পক্ষে দাবি করা হয়, সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলে সমর্থন পেয়েছেন। তবে মিছিলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এ নিয়ে মিনাক্ষীর দাবি, ‘‘পিছনে বিজেপি থাকলেও বাংলার ছাত্র সমাজের নামে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেটাকে তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী, বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী সমর্থন করেছেন, সেখানে আমার নামও প্রচার করা হয়েছে।’’ একই দিনে তাঁদের অন্য কর্মসূচি রয়েছে জানিয়ে মিনাক্ষী বলেন, ‘‘এর সঙ্গে আমার বা বামপন্থী কোনও ছাত্র, যুব, মহিলা সংগঠন যুক্ত নেই। এটি চরম অনৈতিক কাজ, ওই দিন আমরা গোটা বাংলায় নির্যাতিতার খুনের বিচার চাইতে রাস্তায় থাকব।’’

বিরোধী দল হিসাবে আইএসএফ-এর কাছেও গিয়েছে সমর্থনের আর্জি। তবে আইএসএফ এখন কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। দলের নেতা তথা বিধায়ক নওশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। দলের বাকি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেই মঙ্গলবারের কর্মসূচি নিয়ে আমাদের অবস্থান জানাতে পারব।’’ বিজেপি অবশ্য সমর্থন দিতে পুরোপুরি তৈরি। সুকান্ত বলেন, ‘‘এটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। সেখানে ব্যক্তিগত ভাবে যে কেউ যোগ দিতে পারেন। কিন্তু দলের পক্ষে কাউকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে না।’’ একই সঙ্গে সুকান্ত জানান, সে দিন পুলিশের সঙ্গে সংঘাত হলে ছাত্রদের পাশে থাকতে তৈরি থাকবে দল। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মিছিলে না হাঁটলেও তৈরি থাকবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। শুভেন্দু বলেন, ‘‘ছাত্র সমাজের কর্মসূচি হচ্ছে। এটা দলীয় কর্মসূচি নয়। বিজেপির কর্মসূচি নয়। ভারতীয় জনতা পার্টি অবস্থান অনেক আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছে। রাজ্য সভাপতি একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। যেখানে ছাত্র সমাজ বা প্রতিবাদী জনতা এবং নাগরিকেরা পতাকা ছাড়া কর্মসূচি করবেন, সেখানে ভারতীয় জনতা পার্টির সভ্য, সদস্য়, সমর্থক, ভোটার, নেতৃত্বের যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। সিপিএম যেমন চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারটা থাকুক। কিন্তু বিজেপির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের চিকিৎসক বোন যিনি সরকারি প্রশাসনের মদতে নৃশংস ভাবে খুন হয়েছেন, তিনি বিচার পান।’’

দলের এক নেতা জানিয়েছেন, কলকাতার মুরলীধর সেন লেনে বিজেপির পুরনো রাজ্য দফতরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই থাকবেন সুকান্ত। সঙ্গে চিকিৎসক সেলের সদস্যেরাও থাকবেন। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও রাখবে দল। একই ভাবে হাওড়ায় সাঁতরাগাছির কাছাকাছি কোনও একটি দলীয় দফতরে থাকবেন শুভেন্দু। প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত যা ঘোষণা তাতে মঙ্গলবার দু’টি মিছিল সাঁতরাগাছি এবং কলেজ স্কোয়্যার থেকে শুরু হওয়ার কথা। বিজেপির পুরনো রাজ্য দফতর কলেজ স্কোয়্যারের একেবারে কাছেই।

মিছিল কোন পথে যাবে, কত লোক হবে ইত্যাদি জানতে চেয়ে শনিবারই আয়োজকদের নোটিস দিয়েছে হাওড়া কমিশনারেট। তবে এখনও পর্যন্ত উত্তর দেয়নি ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সোমবার সব জানিয়ে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেও মঙ্গলবারের কর্মসূচির খুঁটিনাটি জানানো হবে। এর আগে গত শুক্রবার ছাত্র সমাজ সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিল, শাসকদলের কর্মী, সমর্থকেরাও তাঁদের মিছিলে হাঁটতে পারেন। সে জন্য আর্জি জানানো হবে বলেও দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে তাঁরা কোনও যোগাযোগ করেনি। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি সায়ন লাহিড়ী বলেন, ‘‘কার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে সেটাই আমরা ঠিক করতে পারিনি। তবে অনেক কলেজ থেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা মিছিলে আসছেন।’’ এই প্রসঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব মিথ্যাচার। আমাদের কোনও ছাত্রই ওই মিছিলে যাবে না। আমরাও নির্যাতিতার বিচার চাই। আমরাও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইন চাই। কিন্তু বিজেপির অভিযানকে অরাজনৈতিক সাজানো যায় না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নাম ভাঙিয়ে দু-এক জন যেতে পারে কিন্তু আমরা সংগঠনের পক্ষে এই কর্মসূচিকে সমর্থন করছি না।’’

ইতিমধ্যেই ওই দিন ইউজিসি-নেট পরীক্ষা থাকায় নবান্ন অভিযান করা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছে সিপিএম। রাজ্য এবং কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রাজ্য বিজেপিও একই আশ্বাস দিয়েছে। দলের যুব মোর্চার তরফে একটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করছে। সুকান্ত বলেন, ‘‘আমাদের যুব কর্মীরা মঙ্গলবার বাইক নিয়ে তৈরি থাকবেন। কোনও পরীক্ষার্থী মিছিলের জন্য আটকে গিয়েছে জানালেই বাইকে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.