চলতি বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন পর্যায়ের সব ক’টি ম্যাচে জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। কোনও দলই তাদের সামনে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু সেমিফাইনালেই অপেক্ষা করছে ভারতের কঠিনতম ম্যাচ। সামনে শক্তিশালী নিউ জ়িল্যান্ড, যাদের কাছে গত বার হেরেছে ভারত। তবে এটাই শুধু নয়, পরিসংখ্যান বলছে এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের রেকর্ড ভাল নয়। মোট সাত বার তারা উঠেছে শেষ চারে। কিন্তু সেই ধাপ পেরিয়ে ফাইনালে উঠেছে মাত্র তিন বার। অর্থাৎ সাফল্যের হার অর্ধেকেরও কম। তিন বার ফাইনালে উঠে দু’বার ট্রফি জিতেছে তারা। অর্থাৎ ফাইনালে গেলে ভারতের ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি থাকবে।
ভারত প্রথম দু’টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই উঠতে পারেনি। তারা প্রথম বার সেমিফাইনালে ওঠে ১৯৮৩ সালে। আয়োজক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল কপিল দেবের ভারত। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করেছিল ইংল্যান্ড। ওপেনিং জুটিতে ৬৯ রান উঠে যাওয়ার পরেও ইংরেজ ব্যাটারদের খারাপ খেলায় বেশি দূর এগোতে পারেনি তারা। অলআউট হয়েছিল ২১৩ রানে। কপিল ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। জবাবে যশপাল শর্মা (৬১) এবং সন্দীপ পাটিলের (৪৬) ইনিংসে ভর করে রান তাড়া করে জিতেছিল ভারত। ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারিয়ে ট্রফি জেতা তো এখন ইতিহাসের পাতায়।
পরের বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। কিন্তু কাপ ধরে রাখতে পারেনি তারা। সেমিফাইনালে ভারতকে হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সে বার ভারত টসে জিতে আগে বল করেছিল। শুরু থেকেই দাপট দেখিয়েছিলেন গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ড। গুচ নিজে ১১৫ করেছিলেন। অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং ৫৬ করেছিলেন। ২৫৪-৬ তুলেছিল তারা। রান তাড়া করতে নেমে ধস নেমেছিল ভারতের ব্যাটিংয়ে। এডি হেমিংসের বোলিং (৫২-৪) সামলাতে পারেনি ভারত। একমাত্র ভাল খেলেছিলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন (৬৪)। ২১৯-এ শেষ হয়ে গিয়েছিল ভারত।
১৯৯২ সালে সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি ভারত। ১৯৯৬ সালে আবার সেমিফাইনালে খেলেছিল তারা। সেই ম্যাচ হয়েছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। শুধু সেই বিশ্বকাপ নয়, সব বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা কুখ্যাত ম্যাচ এটি। দর্শকদের আচরণে সেই ম্যাচ মাঝপথেই ভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। মাঠে আগুন জ্বলেছিল সে দিন। আগে ব্যাট করে অরবিন্দ ডি’সিলভার এবং রোশন মহানামার অর্ধশতরানে ২৫১-৮ তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে ভারতের শুরুটা ভাল হয়েছিল। সচিন তেন্ডুলকর ৬৫ রান করেছিলেন । তিনি ফিরতেই ভাঙা পিচে আত্মসমর্পণ করেছিলেন ভারতের বাকি ব্যাটারেরা। ৯৮-১ থেকে ১২০-৮ হয়ে গিয়েছিল ভারত। তখনই মাঠে ইট-পাটকেল পড়তে শুরু করেছিল। দাঙ্গা লেগে গিয়েছিল মাঠে। রেফারি ক্লাইভ লয়েড ম্যাচ বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করেছিলেন।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সেই বিদায় নিয়েছিল ভারত। আবার সেমিফাইনালে উঠেছিল ২০০৩ সালে। সে বার সামনে ছিল কেনিয়া। সচিনের ৮৩ এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শতরানে (১১১) ভর করে আগে ব্যাট করে ২৭০-৪ তুলেছিল ভারত। জবাবে কেনিয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল ১৭৯ রানে। কিন্তু ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে খারাপ ভাবে হেরে গিয়েছিল ভারত।
২০০৭ বিশ্বকাপের ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে জঘন্যতম। গ্রেগ চ্যাপেলের কোচিংয়ে থাকা ভারত বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছিল। ২০১১ বিশ্বকাপে আবার সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। সে বার সামনে পেয়েছিল চিরশত্রু পাকিস্তানকে। মোহালির সেই ম্যাচে গ্যালারিতে ছিলেন দুই দেশের দুই রাষ্ট্রপ্রধান। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি। আগে ব্যাট করেছিল ভারত। বীরেন্দ্র সহবাগ শুরুটা ভাল করেছিলেন। সচিন ৮৫ করেছিলেন। শেষ দিকে সুরেশ রায়নার দাপটে ভারত ২৬০-৯ তুলেছিল। জবাবে পাকিস্তান অলআউট হয়ে গিয়েছিল ২৩১ রানেই। ভারতের সব বোলারই দু’টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। সে বার ফাইনালে ভারত শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের জন্যে ট্রফি জিতেছিল।
২০১৫ বিশ্বকাপেও সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। সে বার সামনে ছিল আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ স্মিথের শতরান এবং অ্যারন ফিঞ্চের ইনিংসের দৌলতে ৩২৮-৭ তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান শুরুটা ভালই করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিলেন বিরাট কোহলি। পরের দিকে অজিঙ্ক রাহানে এবং মহেন্দ্র সিংহ ধোনি চেষ্টা করলেও ২৩৩ রানের বেশি তুলতে পারেনি ভারত।
২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালও ভারতের কাছে বেশ দুঃখের। এ বারের প্রতিপক্ষ নিউ জ়িল্যান্ড ছিল। বৃষ্টির কারণে দু’দিন ধরে চলেছিল ম্যাচ। নিউ জ়িল্যান্ড আগে ব্যাট করে ২৩৯-৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি। মন্থর পিচে এবং মেঘলা আকাশে রান করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা খুবই খারাপ হয়েছিল ভারতের। রোহিত, রাহুল এবং কোহলি তিন জনেই এক রান করে সাজঘরে ফিরেছিলেন। পরের দিকে ধোনি এবং জাডেজা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ধোনি সাজঘরে ফিরতেই ভারতের আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল।