ময়না তদন্তের রিপোর্ট, ফরেন্সিক পরীক্ষার খুঁটিনাটি তথ্য, ঘটনাস্থল সরেজমিনে খতিয়ে দেখা ও সাক্ষ্য— যে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি তদন্তের এই চারটি বিষয় সব থেকে জরুরি। এর উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে গোটা মামলা। ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির আধিকারিকদের আবাসন ‘ম্যান্ডেলা হাউস’-এ লেফটেন্যান্ট কর্নেল, চিকিৎসক কৌশিক সর্বাধিকারীর সঙ্গী প্রজ্ঞাদীপা হালদারের রহস্য-মৃত্যুর তদন্তে এই চারটি ধাপ ‘নিখুঁত’ ভাবেই পার করেছেন বলে সোমবার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। যদিও ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রজ্ঞাদীপার পরিজনেরা।
গত সোমবার প্রজ্ঞাদীপার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও ঘটনার তিন দিন পরে অভিযুক্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গত শুক্রবার তাঁকে ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ছ’দিনের পুলিশি হেফাজত দেন। সোমবার পুলিশ লক-আপে কৌশিককে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরে প্রাণায়াম করতে দেখা যায়। এ দিনই প্রজ্ঞাদীপার জামাইবাবু প্রদীপ চৌধুরীর হাতে ময়না তদন্তের রিপোর্টের প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হয়। সেই রিপোর্টে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই। বরং জীবিত অবস্থায় ফাঁস লেগে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুর কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রদীপ নিজেও চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের সময়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। আঘাতের চিহ্নগুলি নিজের চোখে দেখেছি। ভারী বুট পরে লাথি মারলে যেমন কালশিটে পড়ে, ওর তলপেটে তেমন চিহ্ন ছিল। ঊরুসন্ধিতেও আঘাতের টাটকা চিহ্ন ছিল। এটা পরিষ্কার খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনা। আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছি।’’
পুলিশ জানায়, যে চার বন্ধুর সঙ্গে কৌশিক গত সোমবার দেখা করেন ও রাত পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বলে জানা গিয়েছে, তাঁদের উপস্থিতি সেনা ছাউনির মধ্যে মেলেনি। ম্যান্ডেলা হাউসে কোনও নজরদারি ক্যামেরা না থাকায় সেনা ছাউনির বিভিন্ন রাস্তায় থাকা ক্যামেরা ও দ্বাররক্ষীর দেওয়া তথ্যের উপরেই নির্ভর করছে পুলিশ।
এ দিন প্রজ্ঞাদীপার বাড়িতে গিয়ে তাঁর সুইসাইড নোটের লেখার সঙ্গে পুরনো হাতের লেখা মেলায় পুলিশ। তবে বাড়িতে পাওয়া বেশির ভাগ হাতের লেখাই ছিল ইংরেজিতে। অল্প কিছু বাংলা লেখা মিলেছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সত্যান্বেষণ আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। তদন্তের সব ক’টি ধাপই নিয়ম মেনে করা হয়েছে।’’