সোনা, গাড়ি, বাইক— বিয়ের সময় পণ হিসাবে একাধিক জিনিস দিয়েছিলেন। এমনই দাবি গ্রেটার নয়ডা-কাণ্ডে মৃতার পরিজনদের। তাঁদের অভিযোগ, তাতেও মন গলেনি নিকি ভাটির স্বামী বিপিন এবং শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের। দাবি ছিল আরও যৌতুকের। বিয়ের ন’বছর পরও ৩৬ লক্ষ টাকা চেয়েছিল নিকির পরিবার। সেই দাবি মেটাতে না-পারায় অত্যাচার এবং শেষে গায়ে আগুন দিয়ে খুন করা হয় নিকিকে, অভিযোগ এমনই।
২০১৬ সালর ১০ ডিসেম্বর নিকি এবং তাঁর দিদি কাঞ্চনের বিয়ে হয়। ভাটি পরিবারের দুই ছেলে বিপিন এবং রোহিতকে বিয়ে করেন তাঁরা। পরিবার সূত্রে দাবি, দুই কন্যার বিয়ের সময় সাধ্যমতো যৌতুক দিয়েছিলেন তাঁদের বাবা ভিখারি সিংহ। স্করপিয়ো গাড়ি, এনফিল্ড বাইক, নগদ, সোনা— এমন নানা উপহারে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়েছে। নানা অনুষ্ঠানে মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে উপহার পাঠানো হত বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। এত কিছুর পরেও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুশি ছিলেন না। আরও পণ চান বলে দাবি করেন কাঞ্চন।
নিজের চোখের সামনে বোনকে আগুনে পুড়ে মরতে দেখেছেন কাঞ্চন। বাঁচানোর চেষ্টা করেও পারেননি। কাঞ্চনের চোখেমুখে সেই আতঙ্ক এখনও স্পষ্ট। কথা বলার সময় ফুটে উঠছে অসহয়তা। তবে বিপিন এবং রোহিতকে নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই কাঞ্চনের। তিনি জানান, প্রায়ই দুই ভাই রাত করে বাড়ি ফিরতেন। ফোন করলে ধরতেন না। কাঞ্চনের কথায়, ‘‘আমরা যদি জিজ্ঞাসা করতাম কোথায় ছিলে, তবে অশান্তি করত বাড়িতে। আমরা জানতাম অন্য মহিলাদের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক ছিল। তা বলতে গেলে আমাদের মারধর করত।’’
নিকি এবং কাঞ্চন— দুই বোন মিলে একটি পার্লার চালাতেন। কাঞ্চনার কথায়, ‘‘আমরা কাজ করতাম, তা পছন্দ ছিল না শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের। আমাদের উপার্জন কেড়ে নিত। টাকা দিতে না চাইলে মারধর করত।’’ যে দুই ভিডিয়ো নিকির মৃত্যুরহস্যের কিনারা করেছে, তা ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন কাঞ্চনই। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমি যদি ভিডিয়ো না করতাম তবে কেউ জানতে পারত না আমার বোন কী ভাবে মারা গেল।’’
অভিযোগের ভিত্তিতে কাসনা থানায় মামলা রুজু হয়েছে। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হওয়া এফআইআর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিকিকে তাঁর স্বামী এবং শাশুড়ি মিলে অত্যাচার করেন। কাঞ্চন বাধা দিতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। চুলের মুঠি ধরে নিকিকে সিঁড়ি দিয়ে টানতে টানতে নীচে নিয়ে আসেন বিপিন। তার পর গায়ে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। শুধু কাঞ্চন নন, নিকির পুত্রও জানিয়েছে, কী ভাবে তার বাবা এবং ঠাকুমা মিলে মাকে খুন করেছেন।

