জামশেদপুরের মাঠে গিয়ে হেরে এসেছে মোহনবাগান। সোমবার নিজেদের ঘরের মাঠে দু’গোলের ব্যবধানে জিতে ফাইনালে উঠতে মরিয়া তারা। ম্যাচের আগের দিন সমর্থকদের কথা ভেবে দলকে জিতে মাঠ ছাড়ার অনুরোধ করলেন মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা। তাঁর মতে, ফাইনালে ওঠাই হবে সমর্থকদের জন্য আসল উপহার।
জামশেদপুরের মাঠে স্থানীয় পুলিশ এবং সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন মোহনবাগানের সমর্থকেরা। কারও মাথা ফেটে গিয়েছিল, কারও গায়ে-হাতে চোট লেগেছিল। মার খাওয়া পাঁচ সমর্থককে এ দিন আনা হয়েছিল সাংবাদিক বৈঠকে। মোলিনা এবং ফুটবলার জেমি ম্যাকলারেন তাঁদের হাতে ফুলের তোড়া এবং সোমবারের ম্যাচের ভিআইপি টিকিট তুলে দেন।
তার আগে মোলিনা বলেন, “সমর্থকেরা অনেক কষ্ট করে খেলা দেখতে আসেন। ওদের জয়টা প্রাপ্য। গোটা মরসুমে আমাদের সমর্থন করেছেন ওঁরা। এত সমর্থকের সামনে খেলা চাপের। কিন্তু ওঁরাই আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলেন। জেতার জন্য আরও বেশি পরিশ্রম করার অনুপ্রেরণা দেন।”
একই সঙ্গে মোলিনা জানিয়েছেন, অকারণে মাঠে মাথা গরম করতে চান না তাঁরা। তাঁর কথায়, “আমাদের শান্ত থাকতে হবে। তবে সব সময় শান্ত হয়ে ফুটবল খেললে যে সাফল্য পাওয়া যায় এমনটা নয়। জামশেদপুরকে যথেষ্ট সমীহ করছি। ওদের ভাল ভাল ডিফেন্ডার রয়েছে। ওদের বক্সে সুযোগ কাজে লাগাতে গেলে শান্ত থাকতেই হবে। প্রতিনিয়ত গোলের চেষ্টা করতে হবে।”
প্রথম পর্বে মনবীর সিংহ, আপুইয়া খেলতে পারেননি। অনেকটা সময় বেঞ্চে ছিলেন জেমি ম্যাকলারেনও। তবে প্রত্যেকেই দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে শুরু থেকে খেলতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মোলিনা। তাঁর কথায়, “মনবীর এবং আপুইয়াকে সুস্থ করে তোলার জন্য ফিজিয়ো এবং সাপোর্ট স্টাফ প্রত্যেকেই প্রচুর পরিশ্রম করছে। এখনও একটা অনুশীলন বাকি। আশা করি ওদের খেলাতে পারব।”
ম্যাকলারেনকে নিয়ে তিনি বললেন, “ম্যাকলারেন সবে চোট সারিয়ে উঠেছিল। তাই আগের ম্যাচে বেঞ্চে ছিল। পরে মাঠে নেমেছে। তবে কালকের ম্যাচে খেলার জন্য পুরোপুরি তৈরি। এখনই প্রথম একাদশ বলে দিয়ে ঝুঁকি নিতে চাই না। কাল ও শুরু করবেন কি না, সেটা ম্যাচের আগেই জানতে পারবেন।”
প্রথম পর্বের ১-২ হার আর মাথায় নেই মোলিনার। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি চাইছেন সামনের দিকে তাকাতে। মোলিনা বলেছেন, “আগের ম্যাচ যা হয়েছে তা ভুলে গিয়েছি। এখন মনঃসংযোগ পুরোপুরি কালকের ম্যাচে। আগের ম্যাচে যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা অবশ্যই করেছি। ভুল না হলে তো কেউ ম্যাচ হারে না। আপাতত কালকের ম্যাচে ভাল ফুটবল উপহার দিতে চাই। দলের খেলোয়াড়দের উপর আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে। আশা করি যেটা চাইছি সেটা করতে পারব।”
বিপক্ষ দলের স্টিফেন এজ়ে, আশুতোষ মেহতা না থাকায় তাঁর দল বাড়তি সুবিধা পাবে কি না, তা নিয়েও ভাবতে চান না মোলিনা। বলেছেন, “বিপক্ষের খেলোয়াড়দের দিকে কখনওই নজর দিই না। নিজের দলকে নিয়েই ভাবি। কালকের ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হবে না।”
সোমবারের ম্যাচ অবশ্য হওয়ারই কথা ছিল না। রামনবমীর পরের দিন এই ম্যাচ পড়ায় নিরাপত্তা দেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। তবে বিধাননগর কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার বদন বরুণ চন্দ্রশেখর বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এই ম্যাচ সোমবারই আয়োজনের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। সেটাই হয়েছে। এ জন্য মোহনবাগানের তরফ থেকে বিধাননগর পুলিশকে ধন্যবাদও জানানো হয়। পাশাপাশি, জামশেদপুরে মোহনবাগান সমর্থকদের আক্রান্ত হওয়ার পাল্টা হিসাবে যুবভারতীতে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই আবেদন করা হয়েছে ম্যানেজমেন্টের তরফে। সমর্থকদের শান্ত ভাবে খেলা দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।