বড়দিনের আনন্দ যেন আজ বিষাদে। কোনও ক্রিসমাস ট্রি নেই, নেই কোনও ফ্যামিলি ডিনার। উৎসবের লেশমাত্রও নেই যিশুর জন্মশহরে। খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় উৎসব ক্রিসমাস ডে বা বড়দিনে যীশুর জন্মস্থান হিসেবে পরিচিত বেথলেহেমে এবার উৎসবের আমেজ নেই। ম্যাঙ্গার চত্বরের প্রথাগত উৎসবমুখর আলোকসজ্জা ও ক্রিসমাস ট্রি অনুপস্থিত। গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে।
প্রতি বছর এই সময়টা আলোয় আলোয় সেজে ওঠে প্যালেস্টাইনের ইজ়রায়েল অধিকৃত অঞ্চল ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের এই ছোট্ট শহরটি। পর্যটকের ভিড়ে ঠাসা থাকে শহর। কিন্তু এবছর যেন অন্য পরিবেশ। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের কারণে যিশু খ্রিস্টের জন্মস্থানের কর্তারা বড়দিন উদযাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ চার্চে কেবল ধর্মীয় আচারটুকু ছাড়া কিছু হয়নি এই শহরে।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইজরায়েলের ক্রমাগত হামলায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ২৭ অক্টোবর গাজায় ইজরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৫৪ জন সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপে, সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার ‘গুরুত্বে’র ওপর জোর দিয়েছেন।
গাজায় জঙ্গি সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েলের বায়ুসেনা ও সেনার হামলায় নিহতের সংখ্যা ২০,৪২৪ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, জখম ৩৮৪ জন। শুধু নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ১০৩। ২৩ লক্ষ মানুষ ঘরহারা। যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে বেথলেহেম-সহ অন্য প্যালেস্টাইনি শহরগুলোতেও। এই বছর চারপাশে ঘিরে রয়েছে কাঁটাতার সঙ্গে ধূসর ধ্বংসস্তূপ।
এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৪৯ জনকে যুদ্ধবন্দি করে হামাস জঙ্গিরা ৷ যার অধিকাংশই সাধারণ মানুষ। সেই সময় থেকে বেথলেহেম এবং অন্যান্য প্যালেস্তাইন শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে ৷ মূলত, ইজরায়েলের দখলে থাকা পশ্চিম প্রান্তের সঙ্গে বাইরের জগতের কোনওরকম যোগাযোগ নেই ৷ গাজা-মিশর সীমান্ত, ইজ়রায়েল অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে বসেছে মিলিটারি চেক পয়েন্ট। পরিস্থিতি এমনই যে বেথলেহেম ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য ইজরাইল অধিকৃত শহরগুলোতে আসা-যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্যালেস্টাইনের বাসিন্দাদের ইজরায়েলে ঢোকার অনুমতি নেই। বিধিনিষেধে কাজ হারিয়েছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে বড়দিনও পালিত হল না। তবে ক্রিসমাস বাতিল হওয়ার বড় প্রভাব পড়েছে বেথলেহেমের অর্থনীতিতে। বেথলেহেমের আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পর্যটন থেকে। যা এবার কার্যত থমকে গিয়েছে।