আর সময় নষ্ট না করে লোকসভা নির্বাচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সংসদে বাদল অধিবেশনের মধ্যেই সাংসদদের এমন বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলে দিলেন, টানা তৃতীয় বার কেন্দ্রের সরকারে দলকে নিয়ে আসার জন্য কী ভাবে প্রচারে নামতে হবে। তাতে মোদীর বক্তব্য, জাতীয় বিষয় নয়, রাজ্যে রাজ্যে প্রাধান্য পাক স্থানীয় বিষয়। কোন রাজ্যে কেন্দ্রের সরকার কী কী কাজ করেছে, সেটাই বেশি করে তুলে ধরা হোক ভোটারদের কাছে। তার জন্য এখন থেকেই পরিসংখ্যান তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একটা সময়ে স্থানীয় স্তরের উৎপাদনকে গুরুত্ব দিতে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ স্লোগান দিয়েছিলেন মোদী। এখন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদী যে নীতি নিতে বলছেন তাকে দলের সাংসদরাই ‘ভোকাল ফর লোকাল’ হতে বলা বলে মনে করছেন।
লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রচার প্রস্তুতি কেমন হবে, তা নিয়ে সোমবার থেকে দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেছেন মোদী। মোট ১১ দফায় শুধু বিজেপি নয়, এনডিএ শরিকদলের সাংসদদের সঙ্গেও কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রথম দিনেই সোমবার সন্ধ্যায় ডাক পেয়েছিল বিজেপি বিরোধী দল শাসিত রাজ্য ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং বাংলা। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত সংসদ ভবনের এক নম্বর কমিটি হলে চলে বৈঠক। শেষে নৈশভোজেরও আয়োজন ছিল। তবে তার আগে মোদী ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বক্তৃতা করেন। ছিলেন আরও দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং ভূপেন্দ্র যাদব।
তবে বক্তৃতার শুরুতেই চারটি ভিডিয়ো দেখানো হয় উপস্থিত তিন রাজ্যের সাংসদ এবং প্রতিটি রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় বিজেপির দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মোদী সরকার কী কী প্রকল্প এনেছে, তাতে কতটা সাফল্য এসেছে, মোটের উপর এই সব বিষয় ছিল প্রথম ভিডিয়োতে। এর পরে রাজ্যওয়াড়ি ছোট ছোট ভিডিয়ো দেখানো হয়। বাংলার ভিডিয়োতে এই রাজ্যে আবাস যোজনা থেকে বিমানবন্দর নির্মাণ, বন্দে ভারত ট্রেন থেকে মেট্রো রেল ইত্যাদি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলায় তৃণমূল সরকার কী ভাবে রাজ্য পরিচালনা করছে, তা দেখাতে গিয়ে বিজেপির তোলা দুর্নীতির অভিযোগের কথাও ছিল ভিডিয়োতে।
বৈঠকে উপস্থিত এক বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘ভিডিয়ো দেখেই বোঝা গিয়েছিল কেমন ভাবে লোকসভা নির্বাচনের প্রচার চাইছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।’’ শাহ কিংবা রাজনাথ সার্বিক ভাবে বুথ শক্তিশালী করা, দলের মধ্যে সমন্বয় রাখার কথা বললেও প্রচার পদ্ধতির মূল সুর কী হবে, তার ব্যাখ্যা দেন মোদী। তিনি জানিয়ে দেন, রামজন্মভূমি বা ৩৭০ ধারার বিলোপের মতো বিষয়কে প্রচারে ততটা গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিটি রাজ্যের স্থানীয় বিষয় এবং কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিতে কী কী কাজ করেছে সে কথা বলতে হবে। একই সঙ্গে সেই রাজ্যের সরকার কোথায় কোথায় ব্যর্থ, সেই বিষয় প্রচারে প্রাধান্য দিতে হবে।
স্থানীয় বিষয়কে গুরুত্ব দিতে আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মোদী। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি লোকসভা এলাকায় প্রবীণ ভোটারদের খুঁজে বের করতে হবে। যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে ভোট দিয়ে আসছেন, সেই সব ব্যক্তিকে স্থানীয় স্তরে দলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দিতে হবে। প্রতিটি জায়গায় স্থানীয় বিশিষ্টদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শিক্ষক থেকে লেখক কিংবা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছেন, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে সাংসদদের দেখা করতে হবে। তাঁদের মতামত নিতে হবে। এমন অনেক পরামর্শ দিলেও সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত বাংলার সাংসদরা জানাচ্ছেন, মোদীর কথার মূল সুরটাই ছিল, জাতীয় নয়, স্থানীয় বিষয়ে জোর দিয়ে জাতীয় স্তরের জয় নিশ্চিত করতে হবে। বাংলা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশার মতো যে সব রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় নেই, সেখানে লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন।