দেড় বছর আগে ভারত ও চিনা সেনার মধ্যে গালওয়ানে সংঘর্ষ বেঁধেছিল। সেই সংঘর্ষে ভারতের বহু সেনা জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন। প্রাণ হারিয়েছিলেন চিনেরও বহু সৈনিক। সেই ঘটনা নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদপত্রের সাংবাদিক। ‘দ্য ক্ল্যাক্সন’ নামক সংবাদপত্রের সম্পাদক অ্যান্থনি ক্ল্যান দাবি করেছেন যে চিনের সরকারের তরফে যে সংখ্যক সেনা মৃত্যুর দাবি করা হয়েছিল তা মিথ্যে। চিনের প্রকাশিত সংখ্যা থেকে অনেক বেশি সংখ্যক পিএলএ সৈনিক প্রাণ হারিয়েছিলেন গালওয়ানে।
উল্লেখ্য, চিন গালওয়ান সংঘর্ষে মৃতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করলেও মরণোত্তর সম্মান দিয়েছে চার জওয়ানকে। যদিও অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রের দাবি, তিনের ৩৮ জন জওয়ান গালওয়ানে প্রাণ হারিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়া গবেষণার মাধ্যমে এই তথ্য বের করেছে অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রটি। ‘দ্য ক্ল্যাক্সন’ এই গবেষণার জন্য আলাদা ভাবে একটি সোশ্যাল মিডিয়া দল গঠন করে। পাশাপাশি চিনে থাকা বেশ কয়েকজনের থেকেও সাহায্য পান। আর সেই গবেষণার ভিত্তিতেই অস্ট্রেলিয়ান সংবাদপত্রটি ‘গালওয়ান ডিকোডেড’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তথ্য জোগাড় করে এই রিপোর্ট লেখা হয়েছে।
তদন্তে দাবি করা হয়েছে, একটি অস্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ ঘিরে ২০২০ সালের ১৫ জুন সংঘাত শুরু হয়েছিল ভারত ও চিনের মধ্যে। গালওয়ান নদীর উপর দিয়ে ২০২০ সালের মে মাসে ভারত সেই ব্রিজটি তৈরি করেছিল। এদিকে এর পাল্টা হিসেবে চিন ‘বাফার জোনে’ নির্মাণ কাজ শুরু করে। এরপর ৬ জুন ৮০ জন পিএলএ সৈন্য ভারতের নির্মিত সেতুটি ভেঙে ফেলতে আসে। সেই ব্রিজ রক্ষা করতে ১০০ ভারতীয় সেনাও এসেছিল সেখানে। পরে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বাফার জোন অতিক্রম করা সকল চিনা সেনা ফিরে যাবেন। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখেনি চিন। এই আবহে ১৫ জুন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সেই এলাকা পরিদর্শন করতে যান কর্নেল সন্তোষবাবু ও তাঁর দল। এদিকে সেখানে কর্নেল কি ফ্যাবাওয়ের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিল চিনা সেনাও।
এদিকে ভারতীয় সেনাকে দেখেই আলোচনার বদলে নিজের দলকে আক্রমণের নির্দেশ দেন চিনা কর্নেল। এদিকে পিএলএ হামলা করতেই কর্নেল কি ফ্যাবাওয়কে আটক করে ফেলে ভারতীয় সেনা। কর্নেলকে বাঁচাতে পিএলএ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার চেন হংজুন এবং সৈনিক চেন জিয়াংরং ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। তখনই স্টিলের পাইপ, কাঁটা লাগানো লাঠি দিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের বিরুদ্ধে হামলা চালায় চিনা সেনা। এই সময় পিএলএ-র জিয়াও সিউয়ান নামক এক সেনা পুরো ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করছিলেন। তবে সংঘাত বাড়তে থাকায় তিনিও লড়াই করতে নামেন। পরে ভারতীয় জওয়ানের আঘাতে সে গুরুতর ভাবে জখম হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরই চিনা সেনা পালাতে শুরু করে। তাঁরা শীতবস্ত্র পরার সময়টুকু পায়নি। বরফ ঠান্ডা জলে নামতেই অনেকেই তলিয়ে যান। ঠান্ডায় মৃত্যু হয় অনেকের। ওয়াং ঝুওরানের নেতৃত্বে নদী পার করতে চাওয়া জওয়ানেদের ৩৮ জন তলিয়ে যান বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে।