মঙ্গলে ভূমিকম্প, থরথরিয়ে কাঁপছে লাল গ্রহ, ফুঁসছে আগ্নেয়গিরি, ধুলোর ঝড়ে ঢাকছে আকাশ

সেটা ছিল এপ্রিল ২০১৯। থরথর করে কেঁপে উঠেছিল লাল গ্রহ। শোনা গিয়েছিল চাপা গোঙানির আওয়াজ। নাসার মহাকাশযান ইনসাইট ল্যান্ডারের ‘সিসমিক এক্সপেরিমেন্ট ফর ইন্টিরিয়র স্ট্রাকচার’ (সিস)যন্ত্রে ধরা পড়েছিল সেই কম্পন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেটা যে সে কম্পন ছিল না, প্রলয় ভূমিকম্প হয়েছিল মঙ্গলের মাটিতে। সেই প্রথমবার ওত বিকটভাবে কেঁপেছিল লাল গ্রহ। বিজ্ঞানীরা যার নাম দিয়েছিলেন ‘মার্শকোয়েক’। তারপর দশ মাস কেটে গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন এখনও মাঝে মাঝেই কেঁপে উঠছে মঙ্গলের মাটি। চোখ রাঙাচ্ছে লুকিয়ে থাকা আগ্নেয়গিরি। ধুলোর ঝড়ে ঢাকছে মঙ্গলের আকাশ।

‘নেচার জিওসায়েন্স‘ ও  ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ বিজ্ঞানপত্রিকায় মঙ্গলের ভূমিকম্প নিয়ে অজস্র গবেষণার কথা ছাপা হয়েছে। সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে মোট ১৭৪ বার ‘মার্সকোয়েক’ ধরা পড়েছে ইনসাইটের সিস যন্ত্রে। যার মধ্যে ২০টি কম্পনের মাত্রা ছিল ৩ থেকে ৪। সাড়ে চারশোরও বেশি সিসমিক সিগন্যাল ধরা পড়েছে যা কম্পনের প্রমাণ দেয়। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মধ্যেই ফের কেঁপেছে মঙ্গলের মাটি। সিস যন্ত্র দেখিয়েছে সেই কম্পনের মাত্রা অন্তত ৪.০।


নাসার ইনসাইট দেখিয়েছে মঙ্গল ভূমিকম্প প্রবণ

মঙ্গলের মাটিতে নাকি মণি-মাণিক্যের ছড়াছড়ি। লাল গ্রহের অজানা রহস্য জানতে ইনসাইটকে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়েছে নাসা। এর কাজ ঘুরে ঘুরে মঙ্গলের মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করে সেই সব অমূল্য রতনের খোঁজ দেওয়া। মঙ্গলের কোথায় ঘাপটি মেরে রয়েছে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, কোথায় হচ্ছে অগ্ন্যুৎপাত, কখন কেঁপে উঠছে মঙ্গলের মাটি—সেই সব বুঝেশুনে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে খবর পাঠানোই কাজ ইনসাইটের। নাসার পাঠানো রোভার ‘মিস কিউরিওসিটি’ এখন যেখানে রয়েছে, তার ধারেকাছেই মঙ্গলের বিষূবরেখায় ‘এলিসিয়াম প্লানিশিয়া’ এলাকায় রয়েছে ইনসাইট। এর সিস যন্ত্রের ডেটা দেখিয়েছে, গত বছর একই দিনে পর পর দু’বার সিসমিক সিগন্যাল ধরা পড়েছিল, যার অর্থ ধারাবাহিক কম্পন চলেছিল মঙ্গলের মাটিতে। ইনসাইটের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ব্রুস বেনার্ড বলেছেন, লাল গ্রহ হল ভূমিকম্প প্রবণ বা যাকে বলা যায় ‘সিসমিক্যালি অ্যাকটিভ।’

ব্রুসের মতে, অনেক সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ছড়িয়ে রয়েছে মঙ্গলের পিঠের নীচে। বেশিরভাগ কম্পনের কেন্দ্রস্থল হল মঙ্গলের মাটির নীচে ৩০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গভীরতায়। বিজ্ঞানী ব্রুস বলেছেন, পৃথিবীতে ভূমিকম্পের জন্য দায়ী এর বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে রেষারেষি। একে অপরের গুঁতোয় একটি প্লেট চলে যায় অন্য প্লেটের নীচে। ফলে যে ফাটল তৈরি হয় তার কারণেই কেঁপে ওঠে মাটি। পৃথিবীর ম্যান্টলে থাকা অসম্ভব গরম পদার্থের তরল স্রোত বা লাভা উপরে উঠে আসে। কিন্তু মঙ্গলে কোনও টেকনোটনিক প্লেট নেই। সেখানে ক্রাস্টের বালিকণার নড়াচড়ার ফলেই তৈরি হয় কম্পন। এটাই মার্সকোয়েক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.