দুর্গাপুরে চিকিৎসক পড়ুয়াকে ‘গণধর্ষণের’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১১ দফা সুপারিশ করল জাতীয় মহিলা কমিশন। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে চিঠি পাঠিয়েছে তারা। দুর্গাপুরকাণ্ডে ইতিমধ্যে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে কমিশন। জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য তথা বিজেপি নেত্রী অর্চনা মজুমদার ইতিমধ্যে দুর্গাপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনকে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে এ বার পদক্ষেপ করল কমিশন।
সোমবার বিকেলে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকর সমাজমাধ্যমে লেখেন, চিকিৎসক পড়ুয়াকে ‘গণধর্ষণে’র ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্চনার জমা দেওয়া রিপোর্টের তথ্য এবং পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের কাছে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে বলে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালকে পাঠানো ওই চিঠি এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তবে কমিশন সূত্রে খবর, তারা মোট ১১ দফা সুপারিশ করেছে দুর্গাপুরের ঘটনায়। বস্তুত, জাতীয় মহিলা কমিশনের যে কোনও সুপারিশই সাংবিধানিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।
নির্যাতিতার বিনামূল্যে এবং সর্বোৎকৃষ্ট মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বলেছে কমিশন। প্রয়োজন হলে এমস কল্যাণী, এমস ভুবনেশ্বর বা পরিবারের পছন্দ মতো কোনও হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরেরও সুপারিশ করেছে তারা। পাশাপাশি প্রত্যেক অভিযুক্তের দ্রুত গ্রেফতারিরও দাবি জানিয়েছে কমিশন। যদিও ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ জনকেই ইতিমধ্যে গ্রেফতার করে ফেলেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, নির্যাতিতার সহপাঠী বন্ধু এখনও আটক। ওই ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত করে মামলাটি ফাস্ট-ট্র্যাক আদালতে শুনানির সুপারিশ করেছে কমিশন।
জাতীয় মহিলা কমিশনের বক্তব্য, ট্রমার কারণে নির্যাতিতা পরীক্ষায় বসার মতো অবস্থায় না-ও থাকতে পারেন। সেই কারণে তাঁর জন্য বিশেষ পরীক্ষার বন্দোবস্ত করার জন্য জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছে কমিশন। জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন যাতে দুর্গাপুরের ওই মেডিক্যাল কলেজে দ্রুত পরিদর্শনে যায়, সেই সুপারিশও করেছে তারা। সেখানে পরিকাঠামো এবং পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখে এক মাসের মধ্যে জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
ওই হাসপাতালে একটি পুলিশ ফাঁড়ি বা পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র বসানোর জন্যও সুপারিশ করেছে কমিশন। পাশাপাশি পড়ুয়ারা কে কখন ঢুকছেন, কে বার হচ্ছেন, তা প্রত্যেক প্রবেশ এবং বাহির পথে নথিবদ্ধ করার জন্যও বলা হয়েছে। পড়ুয়ারা কখন বার হচ্ছেন, কখন ফিরছেন, তার উপর হস্টেল সুপারকে নজর রাখার কথা বলেছে কমিশন। এ ছাড়া হাসপাতাল চত্বরে কতটা জায়গা সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে রয়েছে, তার মধ্যে কতগুলি কাজ করে, তারও একটি বিস্তারিত রিপোর্ট এক মাসের মধ্যে কমিশনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। ওই হাসপাতাল চত্বরে পর্যাপ্ত আলো এবং সিসি ক্যামেরা রয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ফরেন্সিক পরীক্ষার যাবতীয় রিপোর্ট দ্রুত কমিশনের কাছে পাঠানোর জন্যও বলেছে তারা। নির্যাতিতার সুরক্ষার জন্য এবং তাঁর পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তাঁকে অন্য কোনও মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছে তারা। এ ক্ষেত্রে জাতীয় মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং রাজ্য সরকারকে যৌথ ভাবে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত খাবারের দোকান এবং অন্য সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার পরামর্শও দিয়েছে কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, যাতে পড়ুয়াদের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন কমে, সেই জন্যই এই সুপারিশ করা হয়েছে।