দু’শো বছরের বেশি পুরনো অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড ভেঙে গেল। বোর্ডের অধীনে থাকা ৪১টি অর্ডন্যান্স কারখানাকে সাতটি নতুন প্রতিরক্ষা সংস্থার আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত আগেই হয়ে গিয়েছিল। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সাতটি সংস্থাকে দেশের প্রতি উৎসর্গ করলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বয়কট করল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থার কর্মীদের সংগঠন ‘অল ইন্ডিয়া ডিফেন্স এমপ্লয়িজ় ফেডারেশন’ ও সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন ভারতীয় প্রতিরক্ষা মজদুর সঙ্ঘ। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কর্মীরা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড ভেঙে সাতটি কর্পোরেট সংস্থা তৈরির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ধর্মঘটকে বেআইনি তকমা দিতে মোদী সরকার গত অগস্টে সংসদে বিল পাশ করায়। তাই আজ প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বয়কট করেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কর্মীরা।
বিজয়া দশমীর দিন আরএসএস শস্ত্রপুজোর আয়োজন করে থাকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই বিজয়া দশমীর দিনেই আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি
বোর্ড ভেঙে তৈরি সাতটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থা দেশকে উৎসর্গ করেছেন। মোদী বলেন, ‘‘লক্ষ্য হল, ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক শক্তিতে পরিণত করা। তবে নিজের ক্ষমতার জোরে। আত্মনির্ভর ভারতের মন্ত্রে।’’ তাঁর দাবি, স্বাধীনতার পরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এত বড় সংস্কার হয়নি। নতুন সংস্থাগুলি শুধুমাত্র নিজের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করবে তা নয়। ‘গ্লোবাল ব্র্যান্ড’ হয়ে ওঠার লক্ষ্যে কাজ করবে।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের কর্মীদের অভিযোগ, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড ভেঙে সাতটি কর্পোরেট সংস্থা তৈরি হল বেসরকারিকরণের প্রথম ধাপ। সরকারের দাবি, এই সাতটি প্রতিরক্ষা সংস্থাতেই কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ১০০ শতাংশ মালিকানা থাকবে। কিন্তু কর্মীদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মতোই বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণ শুরু হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অবশ্য এদিনও আশ্বাস দিয়েছেন, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড ও তার আওতায় ৪১টি কারখানায় কর্মরত প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর চাকরির শর্তে কোনও বদল হবে না। তাঁদের সাতটি নতুন সংস্থায় বদলি করে দেওয়া হবে। কারখানাগুলির হাতে থাকা ৬৫ হাজার কোটি টাকার বরাতও সাতটি সংস্থার খাতায় চলে যাবে।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, সিএজি রিপোর্ট একাধিক বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের কারখানাগুলি সেনাবাহিনীর প্রয়োজন মতো গোলাগুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম জোগান দিতে পারছে না। একাধিক সরকারি বিশেষজ্ঞ কমিটি এ জন্য প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলিতে দক্ষতার অভাবকেই দায়ী করেছে। সাতটি নতুন তৈরি সংস্থার মধ্যে অ্যাডভান্সড ওয়েপন অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট ইন্ডিয়া, গ্লাই়ডার্স ইন্ডিয়া, ট্রুপ কমফর্টস লিমিটেডের সদর দফতর হবে কানপুরে। আর্মার্ড ভেহিকলস নিগম লিমিটেডের সদর দফতর হবে চেন্নাইয়ে।
মিউনিশনস ইন্ডিয়া লিমিটেডের সদর দফতর মহারাষ্ট্রের পুণেতে এবং যন্ত্র ইন্ডিয়া লিমিটেডের সদর দফতর হবে নাগপুরে। ইন্ডিয়া অপটেল লিমিটেডের সদর দফতর হচ্ছে উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূনে।
এ দিন দিল্লির ডিআরডিও ভবনের সঙ্গে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরিতেও একযোগে শস্ত্রপুজো হয়। ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজার দীপক গুপ্ত বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন সফল করছি আমরা। নতুন ধরনের রাইফেল ও স্নাইপার তৈরি করছি।” উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ।