এখনও তাঁর কাজের টেবিলে রং-তুলি-আঁকার কাগজ। মনে হয়, এই বুঝি তিনি এসে আবার কাজে বসবেন। সাদা কাগজে প্রথমে রেখাচিত্রের মতো করে এঁকে নেবেন বাঁটুল-হাঁদা-ভোঁদা-নন্টে-ফন্টেদের। তার পরে পাশের চিনেমাটির গ্লাসের জলে তুলি ভিজিয়ে তাতে লাগিয়ে নেবেন রং। সেই রঙে কখনও রাঙিয়ে দেবেন বাঁটুলে জামা, কখনও বাহাদুর বেড়ালের ঘরের দেওয়াল।
এই কাজের টেবিলে একগাদা কাজ বাকি রেখেই অনির্দিষ্টের পথে যাত্রা করেছেন নারায়ণ দেবনাথ। মঙ্গলবার সকালে। শিল্পীর পরিবারের মানুষরা মেনেও নিতে পারেননি এই ঘটনা। এর আগেও বহু বার নারায়ণবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গুজব ছড়িয়েছে, তিনি আর নেই। তবু সে সব গুজবকে মিথ্যা প্রমাণ করেই সুস্থ হয়েছেন শিল্পী। ফিরেছেন কাজেও। পরিবারের সকলেই চেয়েছিলেন, এবারেও যেন তেমনই হয়, বাড়ি ফিরে আসেন উনি। কিন্তু এবার তা হল না। ট্রেন্ডিং স্টোরিজ
‘উনি পাঁচ প্রজন্মকে দেখেছেন। আমার ছেলেকেও উনি ছবি এঁকে দিয়েছেন’, সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন নারায়ণবাবুর নাতি। বলেছেন, নারায়ণ দেবনাথের বিদায় আসলে একটা বিরাট প্রজন্মের শেষ হওয়া, তার যবনিকা পতন হওয়া।
গত দু’বছর ধরে কোভিডের আতঙ্কে ভুগছে গোটা পৃথিবী। নারায়ণবাবু কি এই নিয়েও কমিকস আঁকার কথা ভেবেছিলেন? এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং কার্গিলে যুদ্ধের সময়ে নারায়ণবাবুর ‘বাঁটুল দি গ্রেট’ হাজির হয়েছিল সেখানে। নিজস্ব ঢঙে শত্রুপক্ষকে নাকানিচোবানি খাইয়েছিল সে। এভাবেই বারবার সমসাময়িক পরিস্থিতির ছবি উঠে এসেছে তাঁর তুলিতে। করোনাই বা তাহলে ব্রাত্য থাকবে কেন?
নারায়ণ দেবনাথের ছেলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, করোনা নিয়েও কমিকস আঁকার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। ভেবেছিলেন, বাঁটুলকে দিয়ে জব্দ করবেন করোনাকে। কিন্তু সেটি আর হল না। টেবিল ভর্তি রং-তুলি-আঁকার কাগজে সে সব অপূর্ণ কাজের ছোঁয়া এখন দেখতে পাচ্ছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা, অনুরাগীরা।