নানা অছিলায় শরীরে অবাঞ্ছিত স্পর্শ, অরিন্দমের ঘটনার পর নিজের জীবনের হেনস্থার কথায় সুদীপ্তা

শনিবারই এক অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগে পরিচালক অরিন্দম শীলকে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করে ‘ডিরেক্টর্স গিল্ড’। গত কয়েক বছরে একাধিক অভিনেত্রী অবশ্য অরিন্দমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনলেও সে সবই অস্বীকার করে এসেছেন পরিচালক। তবে এ বার নাকি তথ্যপ্রমাণ অরিন্দমের পক্ষে নেই বলেই জানা যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অরিন্দমের দীর্ঘ দিনের সহকর্মী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। ইন্ডাস্ট্রিতে হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকেও।সুদীপ্তা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন সে কথা।

অরিন্দমের বিরুদ্ধে যে অভিনেত্রী মহিলা কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁকে প্রথমেই কুর্নিশ জানিয়েছেন সুদীপ্তা। পাশাপাশি, অরিন্দমের সঙ্গে একাধিক কাজ করলেও কখনও তাঁর সঙ্গে নিগ্রহের অভিজ্ঞতা ঘটেনি বলেই জানান তিনি। যদিও বহু বছর ধরে অন্য নারীদের অভিযোগের কথা যে কানে এসেছে, সে কথা জানালেন সুদীপ্তা। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘অরিন্দমদার সঙ্গে প্রচুর কাজ করেছি। আমার সরসারি তেমন কোনও অভি়জ্ঞতা নেই। কিন্তু প্রচুর মেয়ের সঙ্গে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা শুনেছি। এটা আমার ভুল যে, এর বিরুদ্ধে সরব হইনি। তবে ওই মেয়েটিকে কুর্নিশ, যিনি মহিলা কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেছেন। এবং এটা যেনে ভাল লেগেছে যে, অরিন্দমদা নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। ‘ডিরেক্টর্স গিল্ড’ যে পদক্ষেপ করেছে, সেটাও সাধুবাদ জানানোর মতো। অভিনন্দন জানাব ওই মেয়েটিকে। অন্য মেয়েদের বলব কাজ হারানো, টাকা না পাওয়ার ভয় কাটিয়ে প্রকাশ্যে আসতে। এবং তাঁরা সেটা করছেন। এগুলো নিয়ে নিয়ে যে কথা হচ্ছে, সেটা খুব ভাল বিষয়।’’

তবে সুদীপ্তার আশঙ্কা, এই ধরনের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় নির্দোষকেও কালিমালিপ্ত করা হয়ে থাকে। তাই প্রকাশ্যে বলার থেকে লিখিত অভিযোগ জানানোর পক্ষে অভিনেত্রী। কারণ, সেটা অনেক বেশি কার্যকরী বললেই মনে হয়েছে তাঁর।

তবে এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানোর পর সুদীপ্তার উপলব্ধি, এখানে সর্ষের মধ্যে ভূত নয়, গোটাটাই ইন্ডাস্ট্রিটাই ভূত। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘ব্যাপারটা শুধুমাত্র একজন মেয়েকে অশালীন ভাবে ছোঁয়ার বিষয় নয়। এখানে মেয়েদের শরীর নিয়ে কথা বলা হয়। মহিলাদের হেয় করা হয়। নোংরা গালাগালি দেওয়া হয়। শুনি, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এই গালিগালাজ করাটাই প্রথা। কত ছোট ছোট মেয়েরা কাজ করে, তাদের অভিভাবকরা এ সব দেখে ভয় পেয়ে যান! এ বার এই কালচারটা বন্ধ হওয়ার সময় এসেছে।’’

একেবারে ছোট বয়স থেকে কাজ করছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। হেনস্থা হতে হয়েছে সুদীপ্তাকেও। তিনি বলেন, ‘‘একজন মেকআপ আর্টিস্ট আমার চোখ আঁকছেন। এ দিকে শরীরের উপর চাপ দিয়ে চোখ আঁকছেন। সাউন্ড রেকর্ডিস্ট ল্যাপেল লাগাতে গিয়ে শরীরে হাত দিচ্ছেন। কিন্তু এত ছোট ছিলাম, ভয়ে বলতে পারিনি। যদি বকে দেয়।’’ তবে এত সব অভিজ্ঞতার মধ্যেই আশাবাদী সুদীপ্তা। সংখ্যায় কম হলেও এখনও পরিচ্ছন্ন কিছু পরিচালক ও প্রযোজক আছেন বলেই কাজ হচ্ছে। কিন্তু এই ‘পরিষ্কার’ লোকদের তালিকায় কারা রয়েছেন, সেটা প্রকাশ্যে বলতে তিনি দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ অভিনেত্রী জানিয়েছেন, তাঁর কাছে যিনি ভাল, অন্যের কাছে তিনি ভাল না-ও হতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.