ভারত সীমান্তের অদূরে বিদ্রোহীদের ডেরায় বিমান হামলা মায়ানমারের, ফের শরণার্থী অনুপ্রবেশের শঙ্কা

বিদ্রোহী জোটের অগ্রগতি রুখতে এ বার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করল মায়ানমার বায়ুসেনা। ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাখাইন প্রদেশের বেশ কিছু জনপদে গত ৪৮ ঘণ্টায় সামরিক জুন্টা সরকারের বিমানহানায় কয়েক হাজার মানুষ নতুন করে ঘরছাড়া হয়েছেন। ফলে নতুন করে উত্তর-পূর্ব ভারতে শরণার্থী অনুপ্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত দেড় দশক ধরেই মায়ানমারের ‘রোহিঙ্গাভূমি’ হিসাবে পরিচিত রাখাইন প্রদেশে গোষ্ঠীসংঘর্ষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে গত নভেম্বর থেকে সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ওই অভিযানের পোশাকি নাম ‘অপারেশন ১০২৭’।

পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে সামিল হয় ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ), পিপল’স ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের শান, চিন আর সাগিয়াং প্রদেশের পরে মধ্য-পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইনেও শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। ঘটনাচক্রে, ‘আরাকান আর্মি’ এবং কেএলডিএফ-এর বড় ঘাঁটি রয়েছে সেখানে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই প্রদেশের বুচিডং এবং ফুমালিতে বিদ্রোহী জোটের সঙ্গে মায়ানমার সেনার সংঘর্ষ হয়। তার পরেই আকাশপথে হামলা শুরু করেছে জুন্টার বায়ুসেনা। রাখাইন প্রদেশের রামরি শহরে মায়ানমার বায়ুসেনার বিমানঘাঁটি রয়েছে। সেখান থেকেই ‘অপারেশন’ চলছে বলে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি। যদিও তারই মধ্যে বিদ্রোহীরা বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া বেশ কয়েকটি গ্রাম এবং সেনা ছাউনির দখল নিয়েছে। ‘আরাকান আর্মি’র হামলায় মায়ানমার সেনা বাংলাদেশ লাগোয়া অনেকগুলি সীমান্তচৌকি ছেড়ে চলে গিয়েছে বলে বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জুন্টা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। থাইল্যান্ডে নির্বাসিত মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতী’ জানিয়েছে, সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি’ (ইউডব্লিউএসপি) ইতিমধ্যেই ‘জু্ন্টা-মুক্ত’ শান রাজ্যের হোপাং শহরে নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মায়ানমার সেনা। আড়াই বছরের সেনা সরকার এই প্রথম এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হল বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.