পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে বিভিন্ন পুরসভার শুধুমাত্র চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও এগজ়িকিউটিভ অফিসার জড়িত নন, স্থানীয় শাসক দলের নেতা-সহ একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীও এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই দাবি সিবিআইয়ের। নগরোন্নয়ন দফতর ও মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও অফিসারেরা জড়িত, এমন সূত্রও পাওয়া গিয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি।
পুর নিয়োগ মামলায় শাসক দলের পরিচালিত পুর বোর্ডের একাধিক চেয়ারম্যান ও এগজ়িকিউটিভ অফিসারের ভূমিকা তাই খতিয়ে দেখতে সিবিআই কোমর বেঁধে নামতে চলেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর। আপাতত ১৪টি পুরসভার কর্তাদের নোটিস পাঠিয়ে তলব করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। চলতি সপ্তাহেই ওই সব পুরসভার কর্তাদের তলব করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআইয়ের পাশাপাশি পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে সমান্তরাল তদন্ত শুরু করেছে ইডি। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কোথা থেকে এসে কোথায় গিয়েছে, মূলত তা-ই খতিয়ে দেখার কথা তাদের। ইডির তরফে ২০১৪ ও ২০১৭ সালের পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত নথি নগরোন্নয়ন দফতর ও মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনের কাছে তলব করা হয়েছে। ওই সব নথিও ইডির হাতে এসেছে। তদন্তকারীরা সেগুলিও খতিয়ে দেখছেন বলে ইডি জানিয়েছে।
সম্প্রতি পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে সিবিআই। তদন্তের গতি-প্রকৃতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। পুর নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে কারা জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, সিবিআই ও ইডির তদন্তকারীদের কাছ থেকে তাঁদের নামের তালিকা আদালতে পেশ করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মাস দুয়েক আগে আলিপুরে সিবিআই বিশেষ আদালতে পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। এর পরে উত্তর ২৪ পরগনা-সহ অন্যান্য জেলায় মোট ১৪টি পুরসভায় তল্লাশি চালায় তারা। ওই সব পুরসভা থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রচুর নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ওই নথির পরিমাণ বিপুল। তার মধ্যে রয়েছে বাজেয়াপ্ত করা নিয়োগ সংক্রান্ত ওএমআর শিট। মূলত ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রাজ্যজুড়ে প্রায় ৭০টির বেশি পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের কথায়, আপাতত ১৪টি পুরসভায় তল্লাশির সময়ে পুরকর্তা ও এগজ়িকিউটিভ অফিসারদের এক প্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁদের আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ওই জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে বাকি জড়িতদের ধাপে ধাপে তলব করা হবে।
প্রসঙ্গত, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে জেল হেফাজতে থাকা প্রোমোটার অয়ন শীলের সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ইডির অফিসারদের হাতে প্রথম পুর নিয়োগ দুর্নীতির নথি আসে। তখনই পুরসভায় বেআইনি নিয়োগের মাধ্যমে চাকরি বিক্রির ঘটনা প্রকাশ্য আসে। ইডির তরফে কলকাতা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এরপরই কলকাতা হাই কোর্ট পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে এফআইআর দায়ের করে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখে শীর্ষ আদালত।