৭৭ বছর আগে ১৪ আগস্টের রাতে পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তির আনন্দে দেশের মানুষ মধ্য রাতে পথে বেরিয়ে এসেছিল। সেদিন ছিল মুক্তির আনন্দ। সেদিন ছিল স্বাধীনতার আনন্দ। কিন্তু ৭৭ বছর পর আবার এক ১৪ আগস্ট দেখল ভারতবর্ষ। যে ১৪ আগস্টের মধ্য রাতে আবার মানুষ পথে নামল। কিন্তু এবার পথে নামার পেছনে ছিল না কোনো আনন্দ। এবার পথে নামার পেছনে রয়েছে অসহ্য যন্ত্রণা, অস্থিরতা, নিরাপত্তা হীনতা। স্বাধীন দেশে নিরাপত্তার দাবি, ভয় থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পেতে মানুষ পথে নেমেছিল ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে।
শিলিগুড়ি থেকে মেদিনীপুর, মালদা থেকে ঝালদা, রায়গঞ্জ থেকে আসানসোল, শান্তিনিকেতন থেকে চুঁচুড়া ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে রাত দখলের কর্মসূচিতে
রাজ্যজুড়ে দাবি উঠেছে বিচার চাই। এই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়েছিল রাজ্যের বাইরে অন্য রাজ্যের একাধিক শহরে এমনকি লন্ডন, আমেরিকাতেও। একটাই স্লোগান ছিল বিচার চাই।
আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে হওয়া নৃশংসতার, হিংস্রতার, পৈশাচিকতার বিচার চাই। অন্ধকার রাতের বুকে মোমবাতি আর মশাল মিছিল আগুন পাখি হয়ে উড়েছে পথে পথে। বৃষ্টির ঝাপটাও থামাতে পারেনি উদ্যম জনস্রোতকে। মানুষের এই গণপ্রতিবাদ, আন্দোলনের ঝাঁঝ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
তাই হয়তো এই গণবিদ্রোহ থেকে নজর ঘোরাতে আর জি করে দুষ্কৃতী হামলা, সেই প্রতিবাদের মধ্যরাতেই। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি কেউ ভয় পেয়েছে? কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোনোর আশঙ্কা করছে এখন মানুষ। সেই জন্যেই কি ধামাচাপা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা?
১৪ আগস্ট মধ্যরাতে কার্যত প্রতিবাদের ঝড়ে জেগে উঠল বাংলা। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ভারতবর্ষ দেখল শিড়দাড়া শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাকে। মোমবাতি, মশাল না হলে নিদেন পক্ষে মোবাইলের টর্চে স্বতঃস্ফূর্ত গণ জাগরণ ঘটল পশ্চিমবঙ্গের মাঠে প্রান্তরে।
সঠিক বিচার পেতে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন সঠিক সারথি। কিন্তু কে হবে এই সারথি? কার বা কাদের হাত ধরে বাংলার আবার নবজাগরণ সম্ভব হবে? কোন খাতে বইবে আগামীর আন্দোলন? কোন পথে এগিয়ে নিভৃতে কাঁদা বিচারের বাণীকে আগুন পাখিরা ছিনিয়ে আনবে। ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে বিচারের দাবি নিয়ে পথে নামা প্রতিবাদীদের মনে এই মুহূর্তে এটাই বড় প্রশ্ন।