মা দাবি করছেন, ছেলেকে খুন করেছেন বাবা! এ দিকে, বাবা দাবি করছেন, মা-ই খুন করেছেন ছেলেকে! নরেন্দ্রপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুতে বাবা ও মা যে ভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ তুলছেন, তাতে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, পারিবারিক বিবাদের কারণেই মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে ওই যুবকের।
রবিবার দুপুরে নরেন্দ্রপুর থানার গড়িয়ার ফরতাবাদ এলাকায় একটি জলাশয় থেকে উদ্ধার হয় অপ্রতিম দাস নামে ওই পড়ুয়ার দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, অপ্রতিম বারুইপুরের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া ছিলেন। পরিবার সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত থেকে অপ্রতিমের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়। তার পর রবিবার জলাশয়ে ওই ছাত্রের দেহ ভাসতে দেখেন এলাকার মানুষ। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। অপ্রতিমের পরিজনের অভিযোগ, তাঁকে খুন করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে খবর, অপ্রতিমের বাবা সুমন দাস ও বর্ণালী দাসের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে অশান্তি চলছিল। তার জেরেই অপ্রতিম খুন হয়ে থাকতে পারেন বলেই মনে করছেন পরিবারের অনেকে। এর মধ্যে বর্ণালী ও অপ্রতিমের দিদিমার দাবি, বাবা সুমনই ছেলেকে খুন করেছেন। সুমনের একাধিক বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করেছেন পড়ুয়ার মা। পাল্টা সুমন ও দাদু সুব্রত দাসের দাবি, ছেলেকে খুন করেছেন মা! দু’পক্ষই থানায় একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। প্রসঙ্গত, স্থানীয় সূত্রের খবর, দাদু-ঠাকুরমা ও মায়ের সঙ্গে থাকতেন ওই ছাত্র। বাবা তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। অপ্রতিমের এক ভাইও রয়েছে। সে মাধ্যমিক দিচ্ছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অপ্রতিমের বাড়ি মহামায়াতলা এলাকায়। ফরতাবাদে তাঁর মামার বাড়ি। মামার বাড়ির পাশেই একটি ক্লাব বিয়েবাড়ি হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সেখানে একটি বিয়ের আসর বসেছিল। ওই বিয়েবাড়িতে নিমন্ত্রিত ছিলেন অপ্রতিম। সেই উপলক্ষে মামার বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। রাতে বিয়েবাড়িতে গিয়ে খেতেও বসেন। কিন্তু খেতে খেতেই উঠে যান। এর পর থেকেই তাঁর খোঁজ মিলছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানিয়েছেন, শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলে উঠে যান ওই ছাত্র। কেউ আবার জানান, ফোনে মেসেজ পেয়েই উঠে যান তিনি।
রাতেই নরেন্দ্রপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন অপ্রতিমের পরিবারের সদস্যেরা। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এ দিন পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে আসতেই তাই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। দেহ তুলতে বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্ত ধস্তাধস্তিও হয় স্থানীয়দের। পরে বিশাল বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।