অনুব্রত মণ্ডলের জামাইবাবু কমলকান্তি ঘোষের নাম এর মধ্যেই শিবশম্ভু চালকলের সঙ্গে জড়িয়েছিল। এ বারে গরু পাচার মামলায় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই দাবি করেছে, কমলকান্তির ১৮টি সম্পত্তির হদিস পেয়েছে তারা। আরও জমির খোঁজ মিলেছে অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎবরণ গায়েনের নামেও।
গরু পাচার মামলায় বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তাঁর মেয়ে-সহ একাধিক ঘনিষ্ঠের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তি সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে। গরু পাচারের টাকা নামে-বেনামে কোথায় কোথায় কাজে লাগানো হয়েছিল, তার শিকড়ে পৌঁছতে চাইছে সিবিআই। তার তদন্তেই সামনে এসেছে কমলকান্তির নাম। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, কমলকান্তি বিশ্বভারতীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। পারিবারিক কারণেই তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা অনুব্রতের।
অনুব্রতের গ্রেফতারির পরে তাঁর ‘নিয়ন্ত্রিত’ বোলপুরের একাধিক চালকলে অভিযান চালায় সিবিআই। তখনই বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘শিবশম্ভু’ নামে চালকলটির মালিকানা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, অনেক শরিকের মালিকাধীন হলেও বেশ কিছু বছর আগে অনুব্রতের দিদি শিবানী ঘোষ ও জামাইবাবু কমলকান্তি সেটি ১২ বছরের জন্য লিজ় নেন। বীরভূমের চালকল অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘শিবশম্ভু’ চালকলের ‘কনট্যাক্ট পার্সন’ হিসেবেও কমলকান্তি ও শিবানীর নাম রয়েছে।
আদতে নানুরের থানার হাটসেরান্দি গ্রামের বাসিন্দা কমলকান্তির বাড়ি রয়েছে শান্তিনিকেতনের গুরুপল্লিতে। সেটি কার নামে, তা জানা যায়নি। তবে সরকারি তথ্য বলছে, হাটসেরান্দি মৌজা এলাকায় ৩টি জমি, বোলপুর গোবিন্দপুর মৌজায় এলাকায় ১টি জমি ও কালিকাপুর মৌজায় কমলকান্তির নামে ২টি জমি রয়েছে। কমলকান্তির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা করা যায়নি। তাঁর ছেলে, অনুব্রতের ভাগ্নে রাজা ঘোষ বলেন, “তদন্তকারী সংস্থা যদি বলে থাকে তারা কিছু পেয়েছে, তা হলে কী পেয়েছে, সেটা তাদের বিচার্য বিষয়। আমি তো বলতে পারব না, তারা কী পেয়েছে।” শিবশম্ভু চালকলের সঙ্গেও তাঁদের পরিবারের সম্পর্ক সিবিআই হানার দিনই অস্বীকার করেছিলেন রাজা। তিনি বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে আত্মীয়তা ছাড়া আর কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এ দিকে শনিবারও বিদ্যুৎবরণ গায়েনের প্রচুর সম্পত্তির হদিস মিলেছে। সরকারি তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মহিদাপুর মৌজা, বোলপুর মৌজা, কঙ্কালীতলার জলজলিয়া মৌজা মিলিয়ে তাঁর নামে প্রায় ৩৪০ কাঠা জমি কেনা হয়েছে। সরকারি তথ্যে তাঁর স্ত্রীর নামেও একাধিক জমি কেনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালের মধ্যে ৫৬০ কাঠা জমি বিদ্যুৎবরণের নামে কেনা হয়েছে বলে শুক্রবারই জানা গিয়েছিল। বোলপুর পুরসভার সাধারণ কর্মী হয়ে কী ভাবে তিনি এত জমি কিনেছেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তাঁর আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন এত সম্পত্তি হল কী ভাবে, তা-ও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বলে সূত্রের খবর। বিদ্যুৎবরণের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া গিয়েছে।