টানা চার ম্যাচ হেরে ডার্বিতে নামতে চলা ইস্টবেঙ্গলকেও সমীহ মোহনবাগানের, তিন পয়েন্টই চাই মোলিনার

সাংবাদিক বৈঠকে এসে নিজের আসনে বসে প্রথমেই চমকে দিলেন হোসে মোলিনা। মোহনবাগান তাঁবুর মিডিয়া সেন্টারের ঘরে উপস্থিত জনা পঞ্চাশেক সাংবাদিকের উদ্দেশে পরিষ্কার বাংলায় বলে উঠলেন, ‘শুভ বিজয়া’। এক বার নয়, সাংবাদিকদের অনুরোধে আরও বার চারেক একই কথা বলতে হল তাঁকে। তবে শনিবারের কলকাতা ডার্বির প্রসঙ্গ উঠতেই একেবারে মনোযোগী মোহনবাগান কোচ। ইস্টবেঙ্গল যে টানা চার ম্যাচ হেরে ডার্বি খেলতে নামছে, এই তথ্যে পাত্তাই দিতে চাইলেন না। ইস্টবেঙ্গলকে বার বার সমীহ করলেন। তবে দিনের শেষে একটাই কথা মুখে উঠে এল তাঁর, “আমরা জিততে চাই। তিন পয়েন্টই আমার লক্ষ্য।”

খাতায়-কলমে সকলেই শনিবারের ডার্বিতে এগিয়ে রাখছেন মোহনবাগানকে। তবে সবুজ-মেরুন নিজেরাও পয়েন্ট তালিকায় যে খুব ভাল জায়গায় রয়েছে তা নয়। চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট মোটেই ৭০ কোটির দলের আসল পরিচয় নয়। তবে আগের ম্যাচে মহমেডানকে কার্যত উড়িয়ে দেওয়ার পর আবার আনন্দের পরিবেশ ফিরেছে দলে। খেলোয়াড়েরাও অনেক চাপমুক্ত। মোলিনার দলকে ডার্বিতে এটা বাড়তি সুবিধা দিতেই পারে।

শূন্য পয়েন্ট থাকা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হওয়া কি বাড়তি সুবিধা? মোলিনা বললেন, “একেবারেই নয়। ওদের সমীহ করি। দিনের শেষে যেটা আমার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সেটা নিয়েই ভাবি। নিজের দলের উপরেই মনোযোগ দিচ্ছি। আমি জানি ইস্টবেঙ্গল শুরুর দিকেই ম্যাচগুলোয় ভাল খেলেনি। কিন্তু স্পেনে আমরা একটা কথা বলে থাকি যেটা এখানেও প্রযোজ্য। ডার্বি হল ডার্বি। দুটো দলই জিততে নামবে। দুটো দলই লড়াই করবে। দুটো দলই ভাল। তাই আমাদের পক্ষে কাজ মোটেই সহজ নয়। তবে আমরা যে ভাল খেলতে পারি এই আত্মবিশ্বাস রয়েছে।”

এই প্রথম বার কলকাতা ডার্বির স্বাদ পেতে চলেছেন স্পেনীয় কোচ। অধুনালুপ্ত এটিকে-র কোচ থাকাকালীন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হয়নি। প্রথম ডার্বিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করতে চান মোলিনা।

এ দিন বলেছেন, “খুবই উত্তেজিত। আসলে আমি প্রতি দিনই কোচিং করাতে ভালবাসি। প্রতিটা ম্যাচে দায়িত্বে থাকতে চাই। কাল খুব উত্তেজনা নিয়ে মাঠে নামব। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করব। খেলোয়াড়েরা যাতে ম্যাচটা জিতে ফিরতে পারে তার আপ্রাণ চেষ্টা করব। চাপ তো থাকবেই। কিন্তু চাপ নিয়েই জীবন উপভোগ করতে হয় তাই না?”

মোলিনার সংযোজন, “কোনও ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে নামছি না। অনুশীলনে প্রচুর সমর্থকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ওদের মুখে দুটো শব্দই শুনতে পাচ্ছি, ‘ডার্বি জেতো’। তাই সমর্থকদের জন্য ডার্বি জিততে চাই। ওদের খুশি করতে চাই। ৯০ মিনিটই খেলোয়াড়েরা মাঠে জান লড়িয়ে দেবে।”

মোহনবাগানের পক্ষে সুবিধা হল, সাহাল সামাদ এবং আশিক কুরুনিয়ান দু’জনেই সুস্থ। তাই মাঝমাঠ নিয়ে বিশেষ চিন্তা হওয়ার কথা নয়। তিনি জানিয়েছেন, শনিবারের ম্যাচে প্রত্যেক খেলোয়াড়কেই পাচ্ছেন। তবে প্রথম একাদশ ভাঙতে চাইলেন না। জোর দিলেন রিজ়ার্ভ বেঞ্চের উপরেও।

মোলিনা বলেছেন, “সবাই তৈরি। সাহালও ১০০ শতাংশ ফিট। কালকের ম্যাচে খেলতে তৈরি। তবে ইস্টবেঙ্গল দলের কথা মাথায় রেখে প্রথম একাদশ তৈরি করব। প্রতিপক্ষের জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়। খেলোয়াড়দের প্রতি এই বিশ্বাসটা রয়েছে যে ওরা নিজেদের কাজটা করে দেবে। আমি খুশি আশিককে নিয়েও। খুব বেশি খেলার সুযোগ পায়নি। তবে জানি ও কী করতে পারে। সে রকমই দায়িত্ব ওকে দেওয়া হবে।”

বরাবরের মতো মোহনবাগানের অধিনায়ক শুভাশিস বসু ডার্বিতে কাউকে এগিয়ে রাখতে চাইলেন না। জীবনে কোনও দিন ডার্বি না হারা শুভাশিসও বললেন, “ডার্বিতে কেউ ফেভারিট নয়। যে ১০০ শতাংশ দেবে সেই জিতবে। কাল ভাল লড়াই হবে।”

গত বছর শুভাশিসের পাশে থাকা আনোয়ার আলি এবং হেক্টর ইয়ুস্তে এ বার ইস্টবেঙ্গলে। সেই দুই খেলোয়াড়কে নিয়ে শুভাশিসের মন্তব্য, “প্রতি বছরই মোহনবাগানে অনেক খেলোয়াড় আসে। আবার চলেও যায়। আমরা কোচের পরামর্শ অনুযায়ী খেলব। তা ছাড়া ওরা যে কোচের অধীনে খেলেছে তিনি এখন নেই। আমাদের কোচ নিশ্চয়ই ওদের নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.