সব ঠিক থাকলে আর মাস দুয়েক সময় রয়েছে হাতে। তার পরেই লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। তার আগে সর্বভারতীয় স্তরে নির্বাচন লড়ার মূল দল তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি। আর সেই দল এমন ভাবে গড়া হয়েছে যাতে, লোকসভার মহারণে নরেন্দ্র মোদী সপ্তরথী নিয়ে লড়াইয়ে নামবেন। ঘরে থাকবেন আরও চার জন। যাঁরা তৈরি করবেন কৌশল।
প্রধানমন্ত্রী মোদীই বিজেপির মুখ। তিনি ছাড়াও প্রচারে বেশি দায়িত্ব নেবেন অমিত শাহ এবং জেপি নড্ডা। টানা তিন বার ক্ষমতায় আসার আশা নিয়ে ৪০০-র বেশি আসন পাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি। ২০১৯ সালে ৩০৩ আসন পাওয়া বিজেপি আরও ১০০ যোগ করতে চাইছে দিল্লির ক্ষমতায় ফেরার আশায়। সেই মতো দলের স্লোগানও তৈরি হয়েছে— ‘তিসরি বার মোদী সরকার, আব কি বার চারশো পার’। একই সঙ্গে সেই স্লোগান সফল করার জন্য দল গঠন এবং দায়িত্ব বণ্টনও সারা হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটি বৈঠক করেন। সেখানে স্লোগান এবং ভোটের মূল দল তৈরি হয়েছে। আর সেখানে সাত নেতাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই নেতাদের তালিকায় রয়েছেন বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সুনীল বনসলও।
বিজেপির যা সাংগঠনিক ভাগ তাতে সভাপতির পরে সহ-সভাপতি পদ থাকলেও কার্যক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হন সাধারণ সম্পাদকেরা। এখন কেন্দ্রীয় বিজেপির আট জন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন। বনসল ছাড়াও ওই পদে রয়েছেন অরুণ সিংহ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দুষ্যন্তকুমার গৌতম, তরুণ চুঘ, বিনোদ তাওড়ে, সঞ্জয় বান্ডি এবং রাধামোহন দাস আগরওয়াল। আর রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশ। বিজেপির সংগঠনে এই দু’টি পদও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিব প্রকাশ গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় পর্যন্তও বাংলার দায়িত্বে ছিলেন। এখন যে দায়িত্ব সামলান বনসল। লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিজেপির হয়ে আড়াল থেকে সংগঠন সামলানোর দায়িত্ব যাঁদের, তাঁদের মধ্যেই রয়েছেন সন্তোষ এবং শিব প্রকাশ। এ ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক অরুণ কেন্দ্রীয় দফতর সামলানোর দায়িত্বে। তিনিই সভাপতি নড্ডার হয়ে নিয়োগ বা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত জানিয়ে থাকেন। তিনিও আড়ালে থাকছেন। তাঁর সঙ্গে একই ভূমিকায় থাকবেন মধ্যপ্রদেশের সদ্য মন্ত্রী হওয়া কৈলাস।
সামনে থেকে কাজ করবেন বাকি ছয় সাধারণ সম্পাদক। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন সহ-সভাপতি পদে থাকা বৈজয়ন্ত জয় পাণ্ডা। লোকসভা নির্বাচনে বনসল, দুষ্যন্তকুমার, তরুণ, বিনোদ, সঞ্জয় এবং রাধামোহনের সঙ্গে বৈজয়ন্তও সপ্তরথীর তালিকায় রয়েছেন। বিজেপির মোট সাতটি মোর্চা। এই নির্বাচনে যাতে সমাজের সব শ্রেণির কাছে পৌঁছনো যায়, সে জন্য প্রতিটি মোর্চাকেই বিজেপি সমান গুরুত্ব দিতে চাইছে। আর সেই কারণেই এই সাত জনকে দলের সাত মোর্চার নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিজেপির সিদ্ধান্ত মতো এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত বনসল দেখবেন যুব মোর্চা, বৈজয়ন্ত মহিলা মোর্চা, সঞ্জয় দেখবেন কিসান মোর্চা। দুষ্যন্তকুমারের হাতে সংখ্যালঘু মোর্চা, তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি মোর্চা দেখবেন যথাক্রমে তরুণ, রাধামোহন এবং বিনোদ।
বিজেপির বড় শক্তি যুব মোর্চা। তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বনসলকে। আবার তেলঙ্গানা, ওড়িশা ও বাংলার দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন বনসল। ৮০ আসনের মধ্যে বিজেপি জয় পায় ৬২টিতে। এ বারও তিন রাজ্যের মোট ৮০ আসনের দায়িত্ব বনসলের উপরে। এর পরেও দেশ জুড়ে যুব মোর্চার কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনি। তবে মহিলা মোর্চার দায়িত্ব পাওয়া বৈজয়ন্ত বিজেপিতে নতুন। তিনি নবীন পট্টনায়কের দল বিজেডির সাংসদ ছিলেন। দু’বারের লোকসভা এবং দু’বারের রাজ্যসভার সদস্য বৈজয়ন্তকে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ২০১৮ সালে বহিষ্কার করে বিজেডি। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিসান মোর্চার দায়িত্ব পাওয়া সঞ্জয় আগে ছিলেন তেলঙ্গানার রাজ্য সভাপতি। গত জুলাই মাসেই তিনি সর্বভারতীয় দায়িত্ব পান।
মোদীর সপ্তরথীর বাকি চার জনের মধ্যে বিনোদ ছিলেন মহারাষ্ট্রের শিক্ষামন্ত্রী, দুষ্যন্তকুমার রাজ্যসভার সাংসদ, রাধামোহন দীর্ঘ দিন উত্তরপ্রদেশের বিধায়ক থাকার পরে এখন রাজ্যসভার সদস্য। আর তরুণ এখন বিজেপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। একদা জম্মু-কাশ্মীর থেকে তেলঙ্গানা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের সংগঠন সামলানো চুঘ মোদীর ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ অভিযানেরও দায়িত্ব সামলেছেন।