‘ইন্ডিয়া বনাম ভারত’ বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করার বিষয়ে সতর্কতা বজায় রাখার জন্য দলের মন্ত্রীদের নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে সব নেতার কথা বলার কোনও প্রয়োজন নেই। যাঁরা এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিবৃতি দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁদেরও সতর্ক ভাবে মুখ খোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিজেপি সূত্রের খবর, জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে মোদীর নির্দেশ, ‘‘ইতিহাস ঘাঁটতে যাবেন না। কিন্তু ভারতীয় সংবিধান অনুসরণ করে বাস্তব অবস্থা তুলে ধরুন। সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলুন।’’
মঙ্গলবার সকালে জি২০ শীর্ষবৈঠকে অংশ নেওয়া বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ্যে আসার পরেই জল্পনা শুরু হয়, লোকসভা ভোটের আগে দেশের নাম শুধুই ‘ভারত’ করতে চলেছে মোদী সরকার। রাষ্ট্রপতির ওই আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’। কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রপতি কাউকে কোনও চিঠি লিখলে তাতে চিরাচরিত ভাবে লেখা থাকে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ কথাটি। এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাশের জন্যই আগামী ১৮-২২ ডিসেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে বলেও জল্পনা দানা বাঁধে। যদিও এখনও সরকারি ভাবে এ বিষয়ে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার রাতেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফরের সূচি এক্স (সাবেক টুইটার) এর হ্যান্ডলে প্রকাশ করেন বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। সেখানে মোদীর পদ লেখা হয়েছে, ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। যদিও সরকারি প্রথা অনুযায়ী তাঁর পদটিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া’ লেখা হয়। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর মোদী ইন্দোনেশিয়ায় যাবেন ২০তম ‘আশিয়ান-ইন্ডিয়া শীর্ষ সম্মেলনে’ যোগ দিতে। সরকারি নথিতে অবশ্য ওই সম্মেলনের নামের ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক বিভ্রাট এড়াতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকারি ভাবে এখনও এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
বিজেপি সূত্রের খবর, বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধির বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে ‘সক্রিয়তা’ বৃদ্ধিরও বার্তা দিয়েছেন মোদী। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র ওই নেতার বিরুদ্ধে ‘সনাতম ধর্ম’ অবমাননার অভিযোগে ‘সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রচার’ চালানোর কথা বলেছেন তিনি। এ বিষয়ে যাতে দলের বিভিন্ন নেতা পরস্পরবিরোধী মন্তব্য না করেন, সে বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন মোদী।
প্রসঙ্গত, স্ট্যালিন মন্ত্রিসভার সদস্য তথা জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা উদয়নিধি শনিবার চেন্নাইয়ে লেখকদের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলার এই অনুষ্ঠানে আমায় আমন্ত্রণ জানানোয় আমি উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রথম কাজ হল বিরোধিতা নয়, সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলা। এই সনাতন প্রথা সামাজিক ন্যায় এবং সাম্যের বিরোধী।’’ অভিযোগ, ওই অনুষ্ঠানে উদরনিধি জানিয়েছিলেন যে কিছু জিনিস আছে, যার বিরোধিতা যথেষ্ট নয়, তা নিশ্চিহ্ন করা দরকার। যেমন করোনা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির বিরোধিতা নয়, তাদের নিশ্চিহ্ন করা দরকার, তেমনই সনাতন আদর্শকেও মুছে ফেলা দরকার।
তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা কমল নাথ, কেসি বেনুগোপাল ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, উদরনিধির ওই বক্তব্যকে তাঁরা সমর্থন করেন না। স্ট্যালিন-পুত্রও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, কোনও ধর্মকে আঘাত করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রচারে আনতে তৎপর বিজেপি। গোটা বিষয়টিকে হিন্দু ধর্মের উপরে আঘাত বলে অভিযোগ তুলে প্রচারে নেমেছে তারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি ‘ইন্ডিয়া’কে হিন্দু-বিরোধী বলে দাগিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে উদয়নিধির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। তাঁকে গ্রেফতারির দাবিও উঠেছে। এই আবহে স্ট্যালিন-পুত্র বুধবার বলেন, ‘‘নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনে দেশের রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। এটাই সনাতন ধর্মের আদর্শ।’’