দেশের সংবিধান পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্যেই ‘চারশো পার’-এর স্লোগান তুলেছেন নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতি এই অভিযোগ বার বার তুলেছেন রাহুল গান্ধী এবং তাঁর দল। বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের ফের দাবি, ‘‘লোকসভা ভোটে মোদীর চারশো আসন পারের স্লোগান তোলার অর্থ, তিনি চাইছেন দেশের সংবিধান বদলাতে। বাবাসাহেব অম্বেডকরের সংবিধান পাল্টে তিনি ‘মনুবাদী সংবিধান’ তৈরিতে আগ্রহী।’’ এ দিনই এক জনসভায় অবশ্য মোদীর পাল্টা দাবি, সংবিধান সংশোধনের কোনও পরিকল্পনাই তাঁর নেই। তাঁর কথায়, ‘‘এই পাপ করার জন্য আমাদের জন্ম হয়নি।’’
লোকসভায় বিজেপি এবং জোটসঙ্গীদের ৪০০ আসন নিশানা করা প্রসঙ্গে রমেশের বক্তব্য, স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের সংবিধানের সমালোচনা করে আসছে আরএসএস। তাঁর অভিযোগ, এখন মোদী নিজে না বললেও চারপাশে এমন আবহাওয়া তৈরি করছেন, যাতে এনডিএ আর এক বার জিতে এলে সংবিধান বদলের পথ মসৃণ হয়। জয়রামের কথায়, ‘‘ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে সংবিধান দেখাচ্ছেন মানুষকে। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদীর সংবিধান বদলের সম্ভাবনার দিকে। এই চারশো পারের স্লোগানের মাধ্যমে আসলে মোদী বলছেন, আমাদের সংবিধান বদলের সুযোগ দিন। তিনি নিজে না বললেও বিজেপির সাংসদ, নেতা, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিক উপদেষ্টা সবাই মিলে বলে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করছেন। এটাই মোদীর কৌশল। আবহ তৈরির কৌশল। এর পরে তিনি আওয়াজ তুলবেন, নতুন ভারতের জন্যনতুন সংবিধান।’’
কিন্তু ঠিক এই বিষয়টি নিয়েই পাল্টা তোপ দেগেছেন মোদী। নিজের রাজ্য গুজরাতে জনসভায় বলেছেন, ‘‘ওঁরা কি জানেন না যে, এনডিএ-র বাইরে থাকা বিজু জনতা দল এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে ধরলে গত পাঁচ বছরে চারশোর বেশি সাংসদ আমাদের সঙ্গেই ছিলেন? কিন্তু ওই (সংবিধান বদল) পাপ করার জন্য আমাদের জন্ম নয়। না-ই ওই পথে আমরা হাঁটব। বাবাসাহেব অম্বেডকরের দিয়ে যাওয়া সংবিধানের পবিত্রতা আমরা রক্ষা করব। মোদী বেঁচে থাকতে (সংবিধান সংশোধন করে) ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের খেলা খেলতে দেওয়া হবে না।’’
এই প্রসঙ্গে নিজেদের ইস্তাহারের কথা উল্লেখ করে জয়রামের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সংবিধান সংশোধন করে তফসিলি জাতি, জনজাতি ওবিসিদের সংরক্ষণ ৫০ শতাংশের থেকে বাড়াবে। কিন্তু মোদী নিজে কী করবেন, তা স্পষ্ট করুন। তিনি তা না করে কংগ্রেসের চেষ্টাকে সাম্প্রদায়িক রং দিতে চাইছেন।’’
তথ্য তুলে ধরে ওই কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, “১৯৪৯ সালের নভেম্বরে সংবিধান সভার বৈঠক বসে এবং অম্বেডকর তাতে বক্তৃতা দেন। এর পরে আরএসএস-এর মুখপত্র অর্গানাইজ়ারে লেখা হয়, প্রস্তাবিত সংবিধানে প্রাচীন ভারতের উন্নয়নের উল্লেখ নেই। অথচ মনুর আইনকানুন বহু আগেই লিখিত। মনুস্মৃতি সারা বিশ্বে প্রশংসিত, কিন্তু সংবিধান বিশেষজ্ঞদের কাছে তার কোনও মূল্য নেই। পরে আরএসএস অধ্যক্ষ গোলওয়ালকরও বলেছিলেন, একে ভারতীয় সংবিধান বলা অনুচিত। ১৯৬৫ সালে অম্বেডকরকে নিশানা করে দীনদয়াল উপাধ্যায় লেখেন, সংবিধানে বলা হয়েছে ভারত বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্ঘ, আমরা এর বিরোধী।” জয়রামের কথায়, “যাঁরা সংবিধান বদলাতে চান, তাঁরা গণতন্ত্র, ন্যায়, সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরোধী।”
মোদী অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, কংগ্রেস এই সমস্ত বিষয়ে প্রচারে মিথ্যা কথার দোকান খুলে বসেছে। মানুষকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল বোঝাচ্ছে। ভুয়ো ভিডিয়ো তৈরি করছে। এই সমস্ত কিছুর জন্য জনতার আদালতে কংগ্রেসকে কড়া শাস্তি পেতে হবে।
পাশাপাশি, আজ শ্রম দিবসে গত দশ বছরে মোদীর শাসনে দেশে শ্রমিকদের দুর্দশার কথাও সামনে এনেছেন জয়রাম। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের লেবার ব্যুরোর তথ্যই বলছে, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি (মূল্যবৃদ্ধি বাদে মজুরি) সে ভাবে বাড়েনি। গত দশ বছরে শ্রমিক, কৃষক যুবক-যুবতীদের ঘোর দুঃসময় চলছে। মোদীর দ্বিতীয় পর্বে মূল্যস্ফীতির হারকে ধরলে, শ্রমিকদের প্রকৃত আয় কমেছে। মনমোহন-সরকারের সময়ে (২০০৪ থেকে ২০১৪) খেত মজুরের বছরে প্রকৃত আয়ের বৃদ্ধি ছিল ৬.৮% গত দশ বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১.৮%।” মোদী সরকারের অবশ্য বরাবর দাবি, কোভিডের চ্যালেঞ্জ সামলেও দেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বে প্রথম তিনে ঢুকে পড়ার দৌড়ে। পরিকাঠামোয় বিপুল বিনিয়োগ ইত্যাদির সূত্রে কাজের সুযোগও তৈরি হচ্ছে বলে তাদের দাবি।