ব্রিগেডে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ কর্মসূচিতে অন্যতম বড় আকর্ষণ ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অংশগ্রহণ। সেই মর্মেই চলছে প্রচার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মোদীর সফর বাতিল হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর। যদিও আয়োজক অখিল ভারতীয় সংস্কৃত পরিষদের কর্তা থেকে সন্ন্যাসীরা বলছেন, এখনও তাঁরা এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানেন না। তবে ওই কর্মসূচি যে ভাবে হওয়ার ঘোষণা ছিল তাই হবে। মোদীর সফর বাতিল নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে রাজি না হলেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফর বাতিল হতে পারে বলে তিনিও শুনেছেন। প্রসঙ্গত, সুকান্তের নেতৃত্বেই গীতাপাঠের আয়োজকরা মোদীকে আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন।
মোদী আসবেন বলে ইতিমধ্যেই ব্রিগেডে মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্তও সেই কাজ চলে। আর সন্ধ্যা হতেই জানা যায় অন্য কোনও কর্মসূচি থাকার কারণে মোদী ওই দিন কলকাতায় আসছেন না। এর পরে আয়োজকদের মধ্যে হতাশা দেখা যায়। অনেকেই ফোন ধরছেন না। তবে আয়োজক সংগঠনের সহ-সভাপতি নির্গুণানন্দ ব্রহ্মচারী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখনও এই রকম কোনও খবর নেই। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কোনও কিছু জানানো হয়নি। তবে আমাদের যেমন যা কর্মসূচি রয়েছে তেমনই হবে। লক্ষ মানুষের সমাগমেই হবে গীতাপাঠ। নজরুলগীতি থেকে শঙ্খবাদন কোনও কিছুই বাদ যাবে না।’’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী আসছেন বলে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকেও নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারই পুলিশের অনুমোদন-সহ বিভিন্ন নির্দেশ আয়োজকদের দেওয়া হয়। সেই মতোই সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল। এখন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রধানমন্ত্রী না এলে লক্ষ মানুষের জমায়েত কি সম্ভব হবে?
গীতাপাঠ কর্মসূচি নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, গীতাপাঠের অনুষ্ঠান হবে। গত বছর মায়াপুরে পাঁচ হাজার সনাতনীরা গীতা পাঠ করে ঘোষণা করেছিল তাঁরা আগামী ২৩ ডিসেম্বর গীতা জয়ন্তী পালন করবেন। ২৩ তারিখ শনিবার হওয়ার কারণে ২৪ ডিসেম্বর সেই কর্মসূচি হবে।” তিনি আরও বলেন, “এই কর্মসূচি সাধু-সন্তদের। আমরা দলের লোকেরা শুধু স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করব। মঞ্চে সাধু সন্তদের ছাড়া কাউকে দেখা যাবে না। পশ্চিবঙ্গের প্রথম সারির প্রায় সাড়ে তিন হাজার মঠ এবং আশ্রমের সাধু সন্ন্যাসীর ওই দিন উপস্থিত থাকবেন।” প্রধানমন্ত্রী না আসার বিষয়ে শুভেন্দু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি অনেককেই এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁরা আসার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছিলন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অন্তত জরুরি একটি কাজ রয়েছে বলে তিনি আসতে পারবেন না। তাঁর দফতর থেকে মঙ্গলবার সাধু সমাজকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে তিনি আসতে পারবেন না। আমরা তাদের থেকেই জানতে পেরেছি।”
তবে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, জমায়েত নিয়ে চিন্তার থেকেই মোদীর সফর বাতিল হয়ে গিয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, ব্রিগেডের জমায়েতে যাঁরা আসবেন তাঁদের রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে এখনও পর্যন্ত এক লাখের অনেক কম মানুষ নাম নথিভুক্ত করেছেন। শনিবার পর্যন্ত এক লাখ হয়ে যাবে তেমন কোনও নিশ্চয়তাও দেখা যাচ্ছে না। সেটা জানার পরেই এই কর্মসূচি থেকে মোদী দূরত্ব তৈরি করে থাকতে পারেন। কারণ, শুধু দেশে নয়, জমায়েতের বিশ্বরেকর্ড গড়ার কথা দিয়েছিলেন আয়োজকরা। সেটা হবে কি না তা নিয়েই রয়েছে সংশয়।