সাত দফার ভোটপর্বের শেষে সব বুথফেরত সমীক্ষারই ইঙ্গিত, এনডিএ শরিকদের নিয়ে তৃতীয় বার কেন্দ্রে সরকার গড়তে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। তবে তাঁর তোলা ‘৪০০ পার’ স্লোগান ছোঁয়া সম্ভব হবে কি না, বিভিন্ন বুথফেরত সমীক্ষায় প্রকাশিত ইঙ্গিত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রেখেছে।
ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস বলছে, বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত যে সব সময় মেলে, এমন নয়। বুথফেরত সমীক্ষা একেবারে ভুল প্রমাণিত হওয়ার উদাহরণও অসংখ্য। বুথফেরত সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তবে বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস মিলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। ভোটপণ্ডিতদের একাংশ মনে করেন, এই ধরনের সমীক্ষায় মোটের উপর ভোটারের মনের একটি আভাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ঘটনাচক্রে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মতোই এ বারেও সব বুথফেরত সমীক্ষাই বলছে, সরকার গড়তে চলেছে এনডিএ।
৫৪৩ আসনের লোকসভায় ভোটের আগেই গুজরাতের সুরাতে জিতে গিয়েছে বিজেপি। অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষাতেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, উত্তর ও পশ্চিম ভারতে জমি ধরে রাখার পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতেও অগ্রগতি হতে পারে বিজেপির। এমনকি, এক বছর আগে জেতা কর্নাটক এবং ছ’মাস আগে জেতা তেলঙ্গানাতেও জনসমর্থন ধরে রাখতে ব্যর্থ হতে পারে কংগ্রেস। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই প্রথম কেরলে একা লড়ে বিজেপি আসন জিততে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে অধিকাংশ সমীক্ষায়। পড়শি রাজ্য তামিলনাড়ুতে দুই বৃহৎ দ্রাবিড় দল ডিএমকে এবং এডিএমকের সাহায্য ছাড়াই তারা একাধিক আসনে জিততে পারে।
উত্তর ভারতের রাজ্য পঞ্জাবে প্রথম বার লোকসভা ভোটে একার জোরে লড়তে নেমেও চমকে দিতে পারে তারা। তবে এবিপি নিউজ়-সি ভোটার বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের ৪০০ আসনে জেতার পূর্বাভাস না দিলেও ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া এবং নিউজ় ২৪- টুডেজ় চাণক্যের বুথ ফেরত সমীক্ষায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটকে ‘৪০০ পার’ স্বপ্নপূরণের বার্তা দিয়েছে। এবিপি নিউজ়-সি ভোটারের পূর্বাভাস, এনডিএ ৩৫৩-৩৮৩, ‘ইন্ডিয়া’ ১৫২-১৮২ এবং অন্যেরা ৪-১২টি লোকসভা আসনে জিততে পারে। নিউজ় ২৪- টুডেজ় চাণক্যের মতে এনডিএ ৪০০, ‘ইন্ডিয়া’ ১০৭ এবং অন্য়দের ৩৬টি লোকসভা আসনে জেতার সম্ভাবনা। এর মধ্যে একাই ৩৩৫টিতে জিততে পারে। কংগ্রেস জিততে পারে ৫০টিতে। ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার ইঙ্গিত, এনডিএ ৩৬১-৪০১, ‘ইন্ডিয়া’ ১৩১-১৬৬ এবং অন্যেরা ৮-২০টি আসনে জিততে পারে।
এবিপি নিউজ়-সি ভোটারের মতে, কেরলে (২০) কংগ্রেস এবং বামেরা আলাদা ভাবে লড়ে ১৭-১৯টি তে জিততে পারে। বিজেপি ১-৩টিতে। অন্ধ্রপ্রদেশে (২৫) ২১-২৫টিতে তেলুগু দেশম-বিজেপি-জনসেনা জোট। ওয়াইএসআর কংগ্রেস ০-৪। তেলঙ্গানায় (১৭) বিজেপি এবং কংগ্রেস দু’পক্ষই ৭-৯টি। একটিতে মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তামিলনাড়ুতে (৩৯) ডিএমকে-কংগ্রেস-বাম জোট ৩৭-৩৯ আসনে। বিজেপি এবং এডিএমকে একটি করে। মহারাষ্ট্রেও (৪৮) কংগ্রেস-উদ্ধব ঠাকরে-শরদ পওয়াদের মহাবিকাশ আগাড়ির সঙ্গে টক্কর দিয়ে এনডিএ ২২-২৬টিতে জিততে পারে। ‘ইন্ডিয়া’ ২৩-২৫টিতে। কর্নাটকে (২৮) দেবগৌড়ার জেডিএসকে সঙ্গে নিয়ে ২৩-২৫টি জিততে পারে ‘পদ্ম’। ওড়িশায় (২১) একা লড়ে ১৭-১৯টিতে। হরিয়ানায় (১০) ৪-৬, রাজস্থানে (২৫) ২১-২৩, উত্তরপ্রদেশে (৮০) এনডিএ ৬২-৬৬ এবং ‘ইন্ডিয়া’ ১৫-১৭টি আসেন জিততে পারে।
ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া-র বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর ঝুলিতে দিল্লিতে ৬-৭টি, গোয়ায় ১টি, রাজস্থানে ১৬-১৯টি, মধ্যপ্রদেশে ২৮-২৯টি, গুজরাতে ২৫-২৬টি, ছত্তীসগঢ়ে ১০-১১টি, ঝাড়খণ্ডে ৮-১০টি, বিহারে ২৯-৩৩টি, কেরলে ২-৩টি, কর্নাটকে ২৩-২৫টি, তামিলনাড়ুতে ২-৪টি, মহারাষ্ট্রে ২৮-৩২টি, উত্তরপ্রদেশে ৬৪-৬৭টি আসন যেতে পারে। অন্য দিকে, নিউজ় ২৪-টুডেজ় চাণক্যের ইঙ্গিত, তাদের হিসাবে জোটসঙ্গীদের নিয়ে বিজেপি বিহারে ৩৬, তামিলনাড়ুতে ১০, কেরলে ৪, পঞ্জাবে ৪, অন্ধ্রপ্রদেশে ২২, তেলঙ্গানায় ১২, কর্নাটকে ২৪, ওড়িশায় ১৬, মহারাষ্ট্রে ৩৩, রাজস্থানে ২২, ঝাড়খণ্ডে ১২, হিমাচলে ৪, হরিয়ানায় ৬, মধ্যপ্রদেশে ২৯, দিল্লিতে ৬, অসমে ১২, ছত্তীসগঢ়ে ১১, গুজরাতে ২৬, উত্তরাখণ্ডে ৫, উত্তরপ্রদেশে ৬৮টি আসন পেতে পারে।