বালুরঘাটের পর মঙ্গলবার রায়গঞ্জে দ্বিতীয় সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রায়গঞ্জ আসনে গতবার বিজেপির টিকিটে জিতেছিলেন দেবশ্রী চৌধুরী। তাকে কেন্দ্রে মন্ত্রীও করা হয়। তবে এবার এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করেছে বিজেপি। এই কেন্দ্র থেকে দেবশ্রী চৌধুরীকে সরিয়ে দক্ষিণ কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। আর রায়গঞ্জ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে কার্তিক পালকে। মঙ্গলবার তার সমর্থনে প্রচার করেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মোদী। ১০০ দিনের কাজের টাকা নয়ছয় থেকে শুরু করে, রমনবমী, সিএএ, সন্দেশখালির মতো একাধিক ইস্যুতে সরব হন প্রধানমন্ত্রী।
ভারত মাতা কি জয় বলে ভাষণ শুরু করে মোদী জানান, নববর্ষের প্রীতি শুভেচ্ছা। মোদী বলেন, অষ্টমীর দিন দুর্গাপুজোর ভূমিতে ভৈরবী কালী, বোল্লা কালীর আশীর্বাদ নিতে এসেছেন তিনি। বালুরঘাটের মতোই রায়গঞ্জেও ৪ জুন ৪০০ পার আবার একবার মোদী সরকার বলে স্লোগান দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপির ইশতেহারে মোদীর গ্যারান্টি কার্ডের কথা তুলে ধরেন তিনি। প্রতিশ্রুতি দেন পূর্ব ভারতেও বুলেট ট্রেন দৌড়বে। দেশের মেয়েদের আত্ম নির্ভর করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিনামূল্যে বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল দেওয়া হবে। বাংলার যুবকরা কুড়ি লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন মুদ্রা যোজনায়। আর এই সবটাই মোদীর গ্যারান্টি।
কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে বারবার তৃণমূল কংগ্রেস বাধা দিয়েছে বলে সরব হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কংগ্রেস সরকারের আমলে বিরোধীদের রাজ্যে টাকা পৌঁছাতো না, কিন্তু কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর আমি সব জেলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পাঠাই, বাংলাতেও পাঠাই, কিন্তু তৃণমূলের জন্য সেই টাকা মানুষের কাছে যায় না। তাঁর অভিযোগ, মোদীর প্রকল্পের টাকা হয় তৃণমূল হাতিয়ে নেয়, নাহলে নিজেদের স্টিকার লাগিয়ে দেয়।
১০০ দিনের কাজের টাকা দিচ্ছে না বলে তৃণমূল বারবার সরব হয়। এর পাল্টায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মোদী আগে বাংলায় এইমস চালু করতে চেয়েছিল। বাংলার সরকার বলুক আমাদের অনুমতি কেন দেওয়া হয়নি। ওরা উন্নয়ন করতে দিচ্ছে না। পিএম আবাস যোজনায় গরিবদের বদলে ভুল লোকেদের ঘর দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা দিয়েছিল। তৃণমূল সেই টাকা
লুটেপুটে নিয়েছে।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এই তৃণমূলকে কি ক্ষমা করা উচিত?” মোদী বলেন, “বাংলার উন্নয়ন নিয়ে ওদের কোনো চিন্তা নেই। ওরা ইচ্ছা করে বাংলাকে গরিব বানিয়ে রাখতে চায়, যাতে ওদের কারবার ফুলেফেঁপে ওঠে। বাংলায় কে কী সুবিধা পাবে সেটা আইন ঠিক করে না, এখানে তোলাবাজ গুন্ডারা সব সিদ্ধান্ত নেয়।”
রাম নবমী নিয়েও তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এখানে রামনবমীর জন্য কোর্টে যেতে হয়। তৃণমূল অনুমতি দেয় না। অথচ রামনবমী দুর্গাপুজোর শোভাযাত্রায় পাথর ছড়ার অনুমতি দেয় তৃণমূল।
সিএএ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিএএ নাগরিকত্ব দেয়, তার বিরোধিতা করা হচ্ছে। মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, মিথ্যা প্রচার করছে। অথচ বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বাংলা ডেমোগ্রাফি এবং আইন ভাঙার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধির জন্য বাংলার ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে।
সন্দেশখালির ঘটনায় নির্যাতিতাদের চোখের জল মুছতে তৃণমূল সরকারকে সাজা দেওয়ার কথা শোনা যায় মোদীর মুখে। তিনি বলেন, বাংলায় দুর্নীতি অপরাধ এখন ফুল টাইম ব্যবসা। এখানে কেন্দ্রীয় সংস্থার ওপর প্রকাশ্যে হামলা হয়। রাজনৈতিক হত্যা হয়। তৃণমূল মানে মানুষ বোঝে বিশ্বাসঘাতকতা, অত্যাচার, দুর্নীতি, প্রতিবাদ।
মোদী আহ্বান জানান, কার্তিককে ভোট দিয়ে আমাকে সাহায্য করুন। পদ্ম কর্মীদের বলেন, প্রতিটি ঘরে গিয়ে বলুন মোদীজি আপনাদের প্রণাম জানিয়েছেন।