সংক্রমণ নিয়ে ভারতে বাড়ছে চিন্তা, দেশের সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মঙ্গলবার ‘মক ড্রিল’

গতকাল চিন ফেরত আগরার এক যুবকের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। আজ গয়া বিমানবন্দরে চার বিদেশির করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজ়িটিভ এসেছে। কলকাতা বিমানবন্দরেও ব্যাঙ্কক ও কুয়ালা লামপুর থেকে আসা দু’জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া বিমানবন্দরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে বিদেশ ফেরৎ ১২ জনের। ডিসেম্বর মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আসা ২৮৬৭ জন যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তার মধ্যে ওই ১২ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আজ দেশ জুড়ে সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘মক ড্রিল’ চালানো হবে। করোনা-প্রস্ততি খতিয়ে দেখতেই এই আয়োজন। স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া উপস্থিত থাকবেন দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে। তিনি জানিয়েছেন, এই মহড়ায় অংশ নেবেন সমস্ত রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীও।

গয়ায় বিদেশি যাত্রীদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানেই চার জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁদের একটি হোটেলে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। বুদ্ধগয়া ভ্রমণে এসেছিলেন তাঁরা। গয়া জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক রঞ্জন সিংহ জানিয়েছেন, সংক্রমিত চার জনের অবস্থা গুরুতর নয়। করোনা যাতে না-ছড়ায় তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

করোনা নিয়ে উদ্বেগজনিত পরিস্থিতিতে আজ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া। উপস্থিত ছিলেন শতাধিক চিকিৎসক। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমস্ত চিকিৎসককে ফের শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

বৈঠকে যোগ দিয়ে আইএমএ-র পশ্চিমবঙ্গের সম্পাদক সাংসদ-চিকিৎসক শান্তনু সেন জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত বৃদ্ধি, অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পদ্ধতি সব রাজ্যে সমান নয়। তাই করোনার বিষয়ে যে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে প্রতিটি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এ দিন জানিয়েছেন, চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়নে কোনও রাজ্যের সীমাবদ্ধতা থাকলে, পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হবে। এবং করোনা মোকাবিলায় আগামী দিনেও বারবার বিভিন্ন আলোচনারও আশ্বাস দেন তিনি।

কোভিড বিধি মেনে চলা এবং করোনা সংক্রান্ত গুজব যাতে না ছড়ানো হয়, আজ সেই আবেদন জানিয়েছেন মাণ্ডবিয়া। চিকিৎসকদের কাছে সঠিক তথ্য পরিবেশনের আবেদন জানান মাণ্ডবিয়া।

আগামিকাল সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘মক ড্রিল’-এর ক্ষেত্রে কোভিড মোকাবিলার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা, চিকিৎসক, নার্স-সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা, অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা, করোনা পরীক্ষার পরিস্থিতি, মেডিক্যাল অক্সিজেন এবং টেলিমেডিসিন পরিষেবার বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হবে।

এ দিকে আজ কর্নাটকে এক নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে যে, রেস্তরাঁ, পানশালা, প্রেক্ষাগৃহ, স্কুল, কলেজে মাস্ক পরা আবশ্যিক। বর্ষবরণ উদ্‌যাপনের সময়সীমা রাত ১টা পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছে রাজ্য। কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে সুধাকর জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এখন থেকে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা, বয়স্ক, শিশু ও যাঁদের শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জমায়েত এড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। কোভিড বিধি পালনের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজ়ার, মাস্কের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ র‌্যান্ডম করোনা পরীক্ষা চালানো হবে বেঙ্গালুরু ও মেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে।

আজ কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। সমস্ত সরকারি হাসপাতালের প্রধানকে তাঁর নির্দেশ, শয্যা সংখ্যা, ভেন্টিলেটর, আইসিইউ, অক্সিজেন প্লান্ট, কত জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন, তার বিশদ তথ্য সন্ধের মধ্যে স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে হবে। দিল্লি সরকার হাসপাতালগুলিতে ওষুধের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করতে ১০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আজ থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা বিভিন্ন হাসপাতালে সশরীর পরিদর্শন করে কোভিড প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন। দিল্লির সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দিল্লি বিমানবন্দরে মোতায়েন করা হবে। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা কোভিড বিধি মেনে চলছেন কি না, তা দেখভালের উদ্দেশেই এই সিদ্ধান্ত। কোভিড প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে প্রশাসনিক পরিকাঠামো কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তরপ্রদেশ। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, হাসপাতাল চত্বরে মাস্ক পরা আবশ্যিক করা হবে।

নৈনিতাল হাই কোর্টও আজ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্দেশ দিয়েছে, সমস্ত অফিসার, কর্মী, আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীদের আদালতে ঢুকতে গেলে মাস্ক পরতেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.