হিলি সীমান্ত পথেই মন্ত্রী সুকান্তের প্রথম পদক্ষেপ, শুরুতেই মেলালেন নিজের এলাকা আর নিজের মন্ত্রক

দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিকে করিডর করে বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয়ের তুরা পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থানীয় অর্থনীতি তো বটেই, বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতি। সেই কারণে হিলি করিডরের দাবি দীর্ঘ দিনের। কিন্তু নানা আন্দোলন করেও বাস্তবায়িত হয়নি প্রকল্প। যৌথ করিডর ফোরামের নামে ভারত-বাংলাদেশের একটি সংগঠন ২০১৭ সাল থেকে করিডরের দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেছে। এই দাবি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। এখনও কিছুই ফলপ্রসূ হয়নি। সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় এ বার জেলাবাসীর সেই দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্তও জানিয়েছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তিনি এই প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘হিলি-তুরা করিডর আমাদের স্বপ্নের প্রকল্প। উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমি খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি। করিডর সম্পর্কিত ফাইল সড়ক-পরিবহণ মন্ত্রক এবং তার পর বিদেশ মন্ত্রকে গিয়েছে। আমরা লেগে রয়েছি। সব রকম ভাবে চেষ্টা করব এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করার। এই প্রকল্পের সঙ্গে দুই দেশেরই স্বার্থ রয়েছে। তাই দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলো না মিটলে এগোনো যাবে না। তবে যে টুকু খবর, বাংলাদেশ সরকারও এই প্রকল্প নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহী। আমাদের বিশ্বাস, আমরা খুব দ্রুত সব সমস্যা মিটিয়ে প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে পারব।’’

বালুরঘাটের হিলি ও মেঘালয়ের মধ্যে যাতায়াত স্বাধীনতার আগে চালু ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে বালুরঘাট থেকে মেঘালয় যেতে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। পৌঁছতে এখন দু’দিন সময় লাগে। হিলি থেকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে মেঘালয়ে তুরা পর্যন্ত করিডর চালু হলে সেই দূরত্ব কমে হবে মাত্র ৮৬ কিমি। লাগবে মাত্র দুই থেকে তিন ঘণ্টা। এখন উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি থেকে সড়কপথে কয়লা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ আনতে সময় লাগে ২৪ ঘন্টারও বেশি। একই সময় লাগে এ রাজ্য থেকে মাছ ও কাঁচামাল গুয়াহাটি হয়ে ঘুরপথে মেঘালয় সহ উত্তরপূর্ব রাজ্যগুলিতে পাঠানোর ক্ষেত্রেও।

২০১২ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে প্ল্যানিং কমিশন এক নম্বরে হিলি-তুরা করিডরকে তালিকায় রেখে প্রস্তাব দিলেও পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ নিয়ে জেলার একটি নাগরিক কমিটি ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। যৌথ করিডর আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক নবকুমার দাস বলেন, ‘‘করিডরটি চালু হলে শুধু এই জেলা বা পশ্চিমবঙ্গে নয়, সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। তাই এই করিডর বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন।শুধু সড়ক যোগাযোগ নয়, মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ থেকে রেল, এমনকি বিমান যোগাযোগও সম্ভব ভারতের সঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকার উদ্যোগী হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে পারে। যা আমূল বদলে দেবে দক্ষিণ দিনাজপুরকে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.