পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (৭৬) পূর্বপুরুষের জন্মভিটা বাংলাদেশে যাওয়ার আকুতি

গত বছর বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন জন্মভূমিকে শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না, অন্তত তুই একবার দেখে আসিস……

আমার ঠাকুরদা স্বর্গীয় যোগেন্দ্র নাথ রায় দেশভাগের পূর্বে ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। ১৯৪২ সালে আমাদের যশোরের বাড়িতে ব্রিটিশ পুলিশ হামলা চালিয়ে আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুমাকে হত্যা করে। বাবার বয়স তখন মাত্র ৫/৭ বছর। এরকম পরিস্থিতিতে আমার বাবাকে নিয়ে তাঁর কাকা স্বর্গীয় সুরেন্দ্র নাথ রায় যশোর থেকে প্রথমে ভারতের নদীয়া এবং পরে মালদা জেলায় চলে আসেন। আমার বাবার ঠাকুরদার নাম ছিল দূর্গাচরণ রায়, তাঁর জমিদারি ছিল। ব্যক্তি হিসেবে দূর্গাচরণ বেশ রস ও কৌতুকপ্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলো। এলাকার মানুষদের হাসাতে পারতেন।

বাবার মুখে শুনেছি আমার ঠাকুরদার বাবা যোগেন্দ্র নাথ রায়ের ২৫০ বিঘা সম্পত্তি চাষাবাদ করতেন। বাবারা যশোর ছেড়ে আসার পরেও এখানের বাড়িতে যশোরের খরিয়ালি গ্রামের বাড়ির প্রিয় পদগুলো রান্না হতো, শাপলার ডাঁটা দিয়ে মাছ, কচুশাক দিয়ে ইলিশ মাছের মাথা। ছোটবেলায় বাবার মুখে যশোরের গল্পগুলো যখন শুনতাম মনে হতো পাখির মতো উড়ে উড়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছি। বাবা যেহেতু কৈশোরেই যশোরের খরিয়ালি ছেড়ে ভারতে চলে আসেন তাই বাবার মাঝে সবসময় একটা অস্থিরতা কাজ করতো বাংলাদেশে যাওয়ার। একবার নদীয়া বর্ডার হয়ে সেখানে চলে যাওয়ার অনেক চেষ্টাও করেছিল কিন্তু বিএসএফ বিজিবির কারণে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

গতবছর দূর্গাপূজার দশমীর পরদিন বাবা হঠাৎ মারা যযান। বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাকে বারবার অনুরোধ করেছিলেন আমি জন্মভূমিকে শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না অন্তত তুই একবার দেখে আসিস।

আপনাদের নিকট বিনীত অনুরোধ আমি একবার বাবার জন্মস্থান যশোর জেলার খরিয়ালি গ্ৰামে যেতে চাই এবং সেখানে রায় পরিবারে কেউ থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.