পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (৭৪) ঢাকার বুকে এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রূপলাল হাউস

ঢাকার বুকে এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন রূপলাল হাউস। একসময় ঢাকার নবাববাড়ির থেকে জৌলুসের দিক থেকে কোনও অংশে কম ছিল না এই ভবনটি।

ঢাকার দুই স্বনামধন্য ব্যবসায়ী রূপলাল দাস এবং রঘুনাথ দাস ১৮৩৫ সালে ভবনটি আর্মেনীয় জমিদার আরাতুনের কাছে থেকে কিনে নেন। বিখ্যাত মার্টিন এন্ড কোং কোম্পানির একজন স্থপতি ভবনটির নকশা প্রণয়ন করেছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় দাস পরিবার ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। বর্তমানে ভবনটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে থাকলেও ভবনটিকে যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

ভবনটি নির্মাণ করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পাড়ে ফরাসগঞ্জ  এলাকায় অবস্থিত। রূপলাল ঢাকার বিখ্যাত আর্মেনীয় জমিদার আরাতুনের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। এর নির্মাণকাল ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশক। মার্টিন এন্ড কোম্পানির একজন স্থপতি এর নকশা প্রণয়ন করেছিলেন। দ্বিতল এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী অভিনব।

এটি দুইটি অসম অংশে বিভক্ত যার প্রতিটিতে কিছুটা ভিন্ন স্থাপত্য শৈলী দেখা যায়। এর ভিত্তিভূমি ইংরেজি E অক্ষরের মত। এর বাহুত্রয় শহরের দিকে প্রসারিত। মাঝের দীর্ঘতম বাহুটির দৈর্ঘ্য ১৮.৩৩ মিটার। ভবনটির ছাদ তৈরি করা হয়েছিল ‘কোরিনথীয়’ রীতিতে। এর উপরে রয়েছে রেনেসাঁ যুগের কায়দায় নির্মিত ‘পেডিমেন্ট’। রূপলাল হাউজে দ্বিতীয় তলায় দুটি অংশে বিভিন্ন আয়তনের মোট ৫০টিরও বেশি ঘর রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কয়েকটি প্রশস্ত দরবার কক্ষ। ভবনের পশ্চিামংশে দোতলায় অবস্থিত নাচঘরটি আকর্ষণীয়ভাবে তৈরী। এর মেঝে ছিল কাঠ দিয়ে তৈরি। পুরো বাড়ি জুড়ে উত্তর-দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা। বারান্দা দুটি ইটের ‘সেমি-কোরিনথীয়’ স্তম্ভ বা সমায়ত ইটের স্তম্ভের ওপর সংস্থাপিত। 

নদীর দিকে সামনের ভাগে ভবনের চূড়াতে একটি বড় ঘড়ি ছিল যা ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ার পড়ে আর ঠিক করা হয়নি। ১৮৮৮ সালে ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন ঢাকা সফরের সময় তাঁর সম্মানে এখানে একটি নাচের আসর আয়োজন করা হয়েছিলো।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত ভাগ হলে রূপলালের উত্তরাধিকাররা ঢাকা ছেড়ে পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। সাম্প্রতিককালে রূপলাল হাউজ মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায়। এর পর এটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.