বাংলাদেশের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র শিল্পী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন। বর্তমান বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলায় তাঁর জন্ম। প্রকৃত নাম হেনা লাহিড়ী। চলচ্চিত্রকার ফতেহ লোহানী আসিয়া ছবিতে হেনা নাম পাল্টিয়ে সুমিতা দেবী রাখেন। ধর্মান্তরিত হয়ে তার নতুন নামকরণ হয় নিলুফার বেগম।
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান ছিলেন তাঁর স্বামী। ২/২/২০২৩-এ মুজতবা সউদ ‘বাংলাদেশের দুস্প্রাপ্য ছবি সংকলন’ ফেসবুক গ্রুপে ১০টি ছবি-সহ লিখেছেন, “সুমিতা দেবী। এ দেশের “প্রথম নারী তারকা”।
আজ তাঁর জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন (মতান্তরে ৩ ফেব্রুয়ারি)।২০০৪ সালের ৬ জানুয়ারি প্রয়াত হন তিনি। এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হবার পর সেখানে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনী চলচ্চিত্রের নায়িকা সুমিতা দেবী। আসিয়া, আকাশ আর মাটি, এ দেশ তোমার আমার এসব ছবির নায়িকা তিনি। নিজেকে কেবল নায়িকা চরিত্রেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, ছড়িয়ে দিয়েছেন নানামুখী চরিত্রে।
চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, রেডিও এবং মঞ্চে। চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক, জহির রায়হান এর প্রথম স্ত্রী সুমিতা দেবী। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, ভারতে আশ্রিত বাংলাদেশের প্রায় সকল শিল্পীকে নিয়ে নাটক করে, প্রাপ্ত অর্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জমা দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে কলকাতায় মিছিল হয়েছে নিয়মিত। কলকাতায় অবস্থিত প্রায় সকল বিদেশি দূতাবাসের সামনে মিছিল নিয়ে যেয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি, বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়তে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন তিনি। স্বাধীনতার পর এই শিল্পীকে মোহম্মদপুরের বাবর রোডে একটি বাড়ি দেয়া হয়। কিন্তু বছর দশেক পর সামরিক সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা এ গুণী শিল্পীকে। দুই দফায় তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়। বাড়ির সামনে তোশক, বালিশ, টিভি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হয়েছিল। তাঁর ছেলে অনল রায়হান এক সাক্ষাৎকারে কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছিল, তখন ম্যাজিস্ট্রেটের পা পর্যন্ত ধরেছিলেন সুমিতা দেবী। তাঁকে দেওয়া হয়নি স্বাধীনতা পুরস্কার কিংবা একুশে পদক। পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার, বাংলাদেশ টেলিভিশন রিপোর্টার সমিতি পুরস্কার, জনকন্ঠ গুণীজন এবং প্রতিভা সম্মাননা, চলচ্চিত্রম ফিল্ম সোসাইটি পুরস্কার সহ নানান পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা।
এই কিংবদন্তী শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে, তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা।”
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।