গৃহস্থের হেঁশেলের জন্য বরাদ্দ রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার (১৪.২ কেজি) বেআইনি ভাবে বাণিজ্যিক কাজে লাগানো হয় বলে বহু দিন ধরে অভিযোগ তুলছে তেল সংস্থাগুলি। আঙুল মূলত হোটেল, রেস্তারাঁ, ছোট খাবারের দোকান, অটো ইত্যাদির দিকে। এই অপব্যবহার রুখতে এ বার একজন সাধারণ গ্রাহকের জন্য একটি সংযোগের ভিত্তিতে বছরে ১৫টি এবং মাসে সর্বোচ্চ ২টি ১৪.২ কেজির সিলিন্ডার দেওয়ার প্রাথমিক সীমা বেঁধে দিল কেন্দ্র।
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, যে সব পরিবারে সদস্য বেশি তারা সমস্যায় পড়তে পারে। তবে তেল সংস্থা এবং ডিস্ট্রিবিউটর মহলের দাবি, তেমন আশঙ্কা নেই। নতুন নিয়মে কারও বছরে ১৫টির বেশি সিলিন্ডার লাগলে আলাদা ভাবে আর্জি জানাতে হবে। ভর্তুকি যদি আদৌ মেলে, তবে তা পাওয়া যাবে ১২টিতেই। ইন্ডেন, ভারত গ্যাস এবং এইচপি গ্যাস— তিন সংস্থার ক্ষেত্রেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে।
বর্তমানে কলকাতায় বাণিজ্যিক সিলিন্ডার (১৯ কেজি) ১৯৯৫.৫০ টাকা। সাধারণ গ্রাহক ১৪.২ কেজির সিলিন্ডার কেনেন ১০৭৯ টাকা দিয়ে। তেল সংস্থাগুলির দাবি, দামের এই ফারাকের কারণেই কারচুপি হয়।
তেল সংস্থা সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদেরও বার্ষিক সিলিন্ডারের ঊর্ধ্বসীমা ১৫। ১২টির দামেই ভর্তুকি পান তাঁরা। যার অঙ্ক সম্প্রতি বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। তবে সাধারণ গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ভর্তুকি কার্যত ছেঁটে ফেলেছে সরকার। বেশিরভাগ জায়গাতেই তা শূন্য, কোথাও নামমাত্র। যেমন, কলকাতায় এখন ১৯.৫৮ টাকা।
বুধবার সংস্থাগুলির সূত্রে যতটুকু জানা গিয়েছে, তাতে কারও মাসে ২টির বেশি সিলিন্ডার দরকার হলে কী হবে সেটা স্পষ্ট নয়। তবে বছরে ১৫টির বেশি লাগলে তার কারণ দেখিয়ে রেশন কার্ড বা অন্য কোনও নথি (যেখানে পরিবারের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে) দিয়ে আর্জি জানাতে হবে ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে। ডিস্ট্রিবিউটর তা খতিয়ে দেখবে। সূত্রের খবর, চাইলে তেল সংস্থাগুলিও আর্জি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে পারে।
সংস্থাগুলির দাবি, এ ভাবে সীমা না বাঁধলে গৃহস্থের বরাদ্দ ঘুরপথে বাণিজ্যিক সিলিন্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা বেআইনি। অশোধিত তেলের চড়া দামে তেল সংস্থার আর্থিক বোঝাও বেড়েছে। তাই অপবহ্যবহার ও অপচয় রুখতে এই উদ্যোগ। অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিজনবিহারী বিশ্বাস জানান, তাঁরা এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন। তবে তাঁদের হিসাবে, ৬০% গ্রাহকের বছরে ৬টির বেশি সিলিন্ডার লাগে না। ৩২ শতাংশের লাগে ৯টি। উজ্জ্বলায় এই সীমা আগেই ছিল। তাঁর বক্তব্য, সেখানে সীমা আরও কমানো দরকার।