কোথায় গেল মারাদোনার সেই জাদু পায়ের ছাপ। ১২ বছর আগে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মহেশতলায় সশরীরে এসে যে পায়ের ছাপ দিয়ে গিয়েছিলেন বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র, সে ছাপ আজ উধাও। কেউ জানে না কোথায় উধাও হল মূল্যবান সেই স্মৃতিচিহ্ন। শত শত মারাদোনা ভক্তের প্রশ্ন, বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্রের স্বেচ্ছায় দেওয়া ওই পদচিহ্ন সংরক্ষণে কেন তৎপর হল না তৎকালীন পুরকর্তৃপক্ষ? মারাদোনার মৃত্যুর পর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে জলঘোলা। চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও।
২০০৮-এর ৬ ডিসেম্বর। মহেশতলার ফুটবলপ্রেমী মানুষের কাছে সে ছিল এক স্বপ্নের দিন। মারাদোনা এসেছেন মহেশতলায়। সেই স্মৃতি যেন এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে এলাকার অগণিত মারাদোনা (Diego Maradona) ভক্তের মনে। বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্রকে যে কোনওদিন এত কাছ থেকে কখনও দেখতে পাবেন তাঁরা, স্বপ্নেও ভাবেননি। সেদিনের সেই বিস্ময়ের ঘোর মহেশতলাবাসীর আজও কাটেনি। সেদিন দিয়েগোরও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না লক্ষ যোজন দূরে তাঁকে নিয়ে হাজার-হাজার ভক্তের চরম উন্মাদনা। তাই বেশ কিছুটা আবেগতাড়িত হয়েই বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্র বলেছিলেন, ‘‘আমার দেশ থেকে এই দেশ অনেক দূরে। কিন্তু আমার ধারণা ছিল না আমার এত ভক্ত এত ফ্যান এখানে থাকেন।’’
ভক্তদের অনুরোধ সেদিন উপেক্ষা করতে পারেননি ফুটবলের ঈশ্বর। নিজের জাদু পায়ের ছাপ রেখে গিয়েছিলেন মহেশতলায়। কিন্তু সেই পায়ের ছাপ কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। কোনও খোঁজই নেই অমন মূল্যবান এক স্মৃতিচিহ্নের। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে তৎকালীন ও বর্তমান শাসকদলের মধ্যেও। বর্তমান মহেশতলা পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য আবু তালেব মোল্লা বলেন, ‘‘সেসময় বাম পরিচালিত পুরবোর্ডের সিদ্ধান্তে মহেশতলায় মারাদোনাকে নিয়ে এসে তাঁর পায়ের ছাপ নেওয়া হল, তাঁকে দিয়ে ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়তে করানো হল শিলান্যাস। মারাদোনার সেই পদচিহ্ন সেদিন থেকে পুরসভাতেই ঢোকেনি। তা যে কোথায় গেল, কে নিয়ে গেল আজও জানা যায়নি। গড়ে ওঠেনি ফুটবল অ্যাকাডেমিও। আসলে পুরভোটের মুখে এসব প্রচার করে সাধারণ মানুষকে ভাঁওতা দিয়ে ২০০৯-তে ভোটযুদ্ধে পার হতে চেয়েছিল সিপিএম। কিন্তু তা আর হয়নি।’’
সিপিএমের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী এ প্রসঙ্গে জানান, ‘‘সেসময় বাম পরিচালিত পুরবোর্ডের উদ্যোগে অনুষ্ঠানটি হলেও মারাদোনার পায়ের ছাপটি কিন্তু তৎকালীন পুরকর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করেনি। কেউ ব্যক্তিগতভাবে মারাদোনার পদচিহ্ন নিলে তা রক্ষার দায় পুরসভার কেন হবে?’’ আবেগতাড়িত মহেশতলাবাসীর আক্ষেপ, ঈশ্বরের ওই পদচিহ্ন যিনিই সংগ্রহ করে থাকুন, তা রক্ষার দায়িত্ব যদি তৎকালীন পুরকর্তৃপক্ষ নিত, তাহলে এক অমূল্য সম্পদের অধিকারী হতে পারতেন তাঁরা। মহেশতলার মানুষ বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াতে পারতেন, বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্রের যে পায়ে জাদু ছিল, সেই আসল পায়েরই চিহ্ন রয়েছে তাঁদের কাছে।