শিথিল করা হয়েছিল কারফিউ! সাধারণ মানুষের মুখের দিকে চেয়েই। কিন্তু মণিপুরের ভাগ্যে বোধ হয় শান্তি নেই, স্বস্তি নেই! ইম্ফলের পূর্বাঞ্চলে ভোর ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল যাতে সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে পারেন। কিন্তু আজ, বৃহস্পতিবার তড়িঘড়ি তুলে নেওয়া হল সেই ‘কারফিউ রিলাক্সেশন’।
কেন তুলে নেওয়া হল ‘কারফিউ রিলাক্সেশন’?
যে পাঁচজন ‘গ্রামরক্ষক’কে পুলিস গ্রেফতার করেছে তাঁদের মুক্তি দিতে হবে– এই দাবিতে আজ হঠাৎই মণিপুরের বিভিন্ন উপত্যকার স্থানীয় মহিলারা থানাগুলিতে হামলা চালান। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ পশ্চিম ইম্ফলের সিঙ্গজামেই পুলিস স্টেশনে কয়েক হাজার প্রতিবাদী জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই স্লোগান দিতে দিতে থানার দিকে এগিয়ে আসতে থাকা উত্তেজিত জনতার ওই দলটিকে মণিপুর পুলিস এবং ব়্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স থানার ৫০০ মিটার আগেই থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়। আর এরই জেরে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে কারফিউ জারি হয়।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের ২ মহিলাকে গণধর্ষণ ও তাঁদের নগ্ন হাঁটানোর ভিডিয়ো সামনে আসতেই তোলপাড় হয় দেশ। ৪ মে মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় এই ঘটনা ঘটে। ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির দাবি ওঠে। বিরোধীদের ক্রমাগত দাবির মুখে শেষপর্যন্ত মণিপুর ইস্যুতে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী। ভাইরাল ভিডিয়োকাণ্ডে কড়া বিবৃতি দেন। দোষীদের কোনওভাবেই রেয়াত করা হবে না। আইন আইনের পথে চলবে বলে জানান তিনি। ন্যক্কারজনক সেই ঘটনায় ৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিস। তাও ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর। ওই দুই নির্যাতিতার মধ্যে একজন কার্গিল যোদ্ধার স্ত্রী বলেও জানা গিয়েছে।
সংরক্ষণের দাবিতে প্রায় ৪ মাস ধরে মেইতেই ও কুকিদের মধ্যে জাতি হিংসার কারণে উত্তপ্ত মণিপুর। সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন মেইতেইরা। এই মেইতেইরা মণিপুরের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মেইতেই। মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস মেইতেইদের। ওদিকে কুকি ও জো সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা থাকেন পাহাড়ি অঞ্চলে। মেইতেইদের সংরক্ষণের অধিকারের দাবির বিরোধিতা করেছে কুকিরা। কারণ, মেইতেইরা সংরক্ষণের আওতায় এলে তাঁরা বনাঞ্চলে প্রবেশে অগ্রাধিকার পেয়ে যাবে। এই নিয়ে গত ৩ মে প্রথম সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই অশান্তির আগুনে পুড়ছে মণিপুর।