ভারতের নিরাপত্তা কখনও বিঘ্নিত হতে দেবে না মলদ্বীপ, ভারতে এসে এমনটাই মন্তব্য করলেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। মলদ্বীপের এই প্রেসিডেন্ট মূলত চিনের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত। ফলে তিনি পড়শি দ্বীপরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসার পর ভারতের উদ্বেগ বেড়েছে। চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বৃদ্ধি পেয়েছে মলদ্বীপের। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম বার দ্বিপাক্ষিক সফরে ভারতে এসে মুইজ্জু দাবি করলেন, তাঁর সরকার ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে দেবে না।
চার দিনের ভারত সফরে এসেছেন মুইজ্জু। রবিবারই নয়াদিল্লিতে পা রাখেন তিনি। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে এক দফা বৈঠকও হয়ে গিয়েছে তাঁর। ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন মুইজ্জু। তার আগে টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ভারত মলদ্বীপের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্য অনেক দেশের সঙ্গে মলদ্বীপের যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনও কাজে যাতে ভারতের নিরাপত্তার ক্ষতি না হয়, আমরা সে দিকটিও বরাবর মাথায় রেখে চলি।’’
ক্ষমতায় আসার পরেই ভারতের সেনাবাহিনীকে মলদ্বীপ থেকে সরে যেতে বলেছিলেন মুইজ্জু। তাঁর কথা অনুযায়ী ভারতকে সেনা সরিয়েও নিতে হয় দ্বীপরাষ্ট্র থেকে। সে প্রসঙ্গে মুইজ্জু বলেন, ‘‘ভারত এবং মলদ্বীপ একে অপরের চাহিদা এবং অগ্রাধিকারগুলির বিষয়ে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে এগিয়ে চলে। এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মলদ্বীপের মানুষ আমাকে যা করতে বলেছিলেন, আমি তা-ই করেছি।’’ মলদ্বীপ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কোনও প্রভাব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে পড়েনি বলেও দাবি করেছেন মুইজ্জু।
উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে এগোচ্ছে মলদ্বীপ। মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পরেও পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারেননি। বস্তুত, তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন মলদ্বীপে ভারত-বিরোধী প্রচারের মাধ্যমেই। এর পর মোদীর লক্ষদ্বীপ সফরের সময়ে তাঁর সরকারের তিন মন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। যার ফলে ভারতে মলদ্বীপ সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সমাজমাধ্যমে ‘বয়কট মলদ্বীপ’ রব ওঠে। বহু পর্যটক মলদ্বীপের টিকিট বাতিল করে দিয়ে প্রতিবাদ জানান। মলদ্বীপে প্রতি বছর বহু ভারতীয় পর্যটক ঘুরতে যান। দেশটির অর্থনীতির অন্যতম ভিত পর্যটন। কিন্তু ভারত থেকে বয়কটের ডাক ওঠায় মলদ্বীপ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। পরে সে দেশের মন্ত্রীরা ক্ষমা চান। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
ক্ষমতায় আসার পরেই চিন সফরে গিয়েছিলেন মুইজ্জু। কিন্তু ভারতে আসেননি। প্রথম বার তিনি ভারতে আসেন গত জুন মাসে, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর তৃতীয় বারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। ভারতে তাঁর দ্বিপাক্ষিক সফর এই প্রথম।