হস্টেলের পাঁচতলা থেকে পড়ে ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় নিম্ন আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিল হাইকোর্ট। ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ। নির্দেশ বিচারপতি শম্পা দত্ত পালের। মালদার কালিয়াচকের বাসিন্দা ওই ছাত্রীর বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে হস্টেল কর্তৃপক্ষ তাকে বাড়ি যেতে বাধা দেয়। সেই রাতেই এই রহস্যমৃত্যুর ঘটনা ঘটে যায়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর মালদা কালিয়াচক আবাসিক মিশনের একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে এই ঘটনাটি ঘটে।
বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের পক্ষের সওয়ালে বলা হয়, ওই নাবালিকা ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। তাই কোনও নিরপেক্ষ অথবা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের প্রয়োজন নেই। খুনের অভিযোগে কোনও মামলা-ই দায়ের করা হয়নি পুলিসের কাছে। সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল প্রশ্ন করেন, কী কারণে অভিভাবককে স্কুলে ডাকা হয়েছিল? তার তথ্য কোথায়? বিচারপতি সরকারি আইনজীবীর কাছে ফের জানতে চান, প্রথম চার্জশিট জমা করার সময় যে সমস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষী নেওয়ার দরকার ছিল, তাদের কেন সাক্ষী নিলেন না তদন্তকারী আধিকারিকরা?
এদিন মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী আশিষ কুমার চৌধুরী আদালতে জানান, সরকারপক্ষের আইনজীবী তদন্তের কথা আদালতে জানাচ্ছেন, তবে সেই তদন্তে সাক্ষীদের নাম প্রথম চার্জশিটে নেই। নাবালিকা ছাত্রীর বাবা নির্দিষ্ট করে খুনের অভিযোগ করলেও, সেই অভিযোগ এফআইআর হিসেবে রুজু করেনি পুলিস। পাশাপাশি ওই ছাত্রী পাঁচতলা থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার পর হাসপাতালে প্রথম যে চিকিৎসক তার চিকিৎসা করেছিলেন, তার সাক্ষী নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ঘটনার পর প্রায় ৫ বছর হতে চললেও আজ পর্যন্ত মৃত ছাত্রীর বাবার কোনওরকম জবানবন্দি নেয়নি পুলিস। তাহলে সেই পুলিসের উপর কীভাবে আস্থা রাখবে পরিবার! স্কুল কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার কথা তার বাবাকে জানায়নি এবং এই ঘটনার পরেও অনেকক্ষণ ওই ছাত্রী জীবিত অবস্থায় ছিল। তা সত্ত্বেও তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ আইনজীবীর।
সন্দেহের কারণ মূলত দু-জায়গায়। ঘটনার আগের দিন ওই ছাত্রীর বাবা স্কুলে তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। ছেলে এবং মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিল তার বাবা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেও, ১৬ বছর বয়সী মেয়েকে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে আটকে দেয়। আর সেই রাতেই এই ঘটনা ঘটেছিল। প্রসঙ্গত, স্কুল এবং হস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে মেয়ের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে, মেয়ে পাঁচতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু বাবার অভিযোগ, মেয়েকে পরিকল্পনা করে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই অভিযোগেই কালিয়াচক থানায় আবাসিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই ছাত্রীর বাবা।