এক দিকে দেশের মাটিতে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বড় প্রতিযোগিতায় দীর্ঘ ১০ বছরের খরা কাটিয়ে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের হাতে ট্রফি দেখার আকুতি। অন্য দিকে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। একই সঙ্গে। কোন দিকে যাবে বাঙালি? রাস্তায় বেরিয়ে ঠাকুর দেখা, আড্ডা মারার আনন্দ নেবে? না কি ঘরে বসে টেলিভিশনে ভারতীয় দলের খেলা দেখবে? কাকে জেতাবে বাঙালি? কোহলিদের, না মা দুর্গাকে? এ বার জোর লড়াই।
এ বারের বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে ৫ অক্টোবর থেকে। দুর্গাপুজোর ষষ্ঠী ২০ অক্টোবর। বাঙালিদের কাছে পুজো আরও আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। মহালয়া মানেই পুজো শুরু। এ বার মহালয়া ১৪ অক্টোবর। পরের দিন, অর্থাৎ প্রতিপদেই উদ্বোধন হয়ে যায় একের পর এক বড় ঠাকুর। ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ভিড় করেন মানুষ। আর সেই দিনই, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর বিশ্বকাপের সব থেকে বড় ম্যাচ ভারত-পাকিস্তান। এই ম্যাচের দিকেই তাকিয়ে থাকবে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। পাকিস্তানকে যদি ভারত হারিয়ে দেয়, স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বকাপের উন্মাদনা এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ১৯ অক্টোবর পঞ্চমীর দিন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ। ২২ অক্টোবর অষ্টমীতে কোহলিদের প্রতিপক্ষ নিউ জ়িল্যান্ড। বাঙালি কি পঞ্চমী, অষ্টমীতে কোহলিদের ম্যাচ ফেলে ঠাকুর দেখতে বেরোবে? আর ২৯ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজোর ঠিক পরের দিনই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নামবে ভারত।
এই ম্যাচগুলির কোনওটিই অবশ্য কলকাতায় হবে না। কিন্তু ভারত মাঠে নামলে কী কলকাতা, আর কী কেপটাউন— সব এক হয়ে যায়। তার মধ্যে যদি সেটা হয় বিশ্বকাপ, তা হলে তো কথাই নেই। তাই ক্রিকেটকে হারানোটা সহজ হবে না মা দুর্গার। শেষ যে বার দেশের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপ হয়েছিল সেই ২০১১ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। সেটিই শেষ বার। তার পর ভারত আর বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। সেটাই আরও এক বার ফিরে আসুক, এই প্রত্যাশা নিয়েই টেলিভিশনের সামনে বসবেন সবাই। তবে এ বার একটা সুবিধা আছে। প্রার্থনা করার জন্য কাছেই রয়েছেন মা দুর্গা।
কলকাতায় দুর্গাপুজোর সময় উৎসবের পরিবেশ।প্রতিটি পুজো কমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে কার প্যান্ডেলে ভিড় বেশি হয়েছে। ভিড় টানার জন্য বিভিন্ন রকমের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। পুজোর মধ্যেও যাতে ভিড় হয় তার জন্য কী পরিকল্পনা করবেন তাঁরা? হতে পারে প্যান্ডেলের পাশেই বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করলেন উদ্যোক্তারা। তাতে রথ দেখা আর কলা বেচা, দুইই হল। ঠাকুর দেখতে দেখতেই বিশ্বকাপের আনন্দ নিতে পারবেন দর্শক। সে ক্ষেত্রে কি ভিড় আরও বাড়বে প্যান্ডেলগুলিতে! পুলিশ কি সেই অনুমতি আদৌ দেবে? কারণ, এমনি সময়েই পুজোর ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁদের। সেখানে ভিড় আরও বাড়লে যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই আগে থেকে হয়তো সতর্ক হবে পুলিশ।
শহরে অনেক পুজো কমিটি রয়েছে যেখানে থিমের প্যান্ডেল দেখা যায়। প্রতি বছর নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে আসেন তাঁরা। বিশ্বকাপের বছরে পুজোর থিমেও কি দেখা যেতে পারে ক্রিকেট? সেখানে বিরাটের আগ্রাসন থেকে রোহিতের ব্যাটিং, সব কিছুর দেখাই মিলতে পারে। পুজোর থিম প্রায় এক বছর আগে থেকেই ঠিক হয়ে থাকে। বিশ্বকাপ কবে শুরু, কবে শেষ, আগেই জানানো হয়েছিল। ফলে পুজোর উদ্যোক্তারা যদি মনে মনে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের থিম ভেবে রাখেন, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।