সকাল ৭টায় শুরু। সারা দিন বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে শেষ হল দেশের দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট ৬০.৯৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১৩টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হয়। সব মিলিয়ে মোট ৮৮ আসনে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেরলের ২০টি আসন। ১৪টি কর্নাটকের, রাজস্থানের ১৩টি, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রে আটটি, মধ্যপ্রদেশের সাতটি, বিহার এবং অসমে পাঁচটি, ছত্তীসগঢ় এবং পশ্চিমবঙ্গে তিনটি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এ ছাড়াও জম্মু-কাশ্মীর, মণিপুর এবং ত্রিপুরায় একটি করে আসনে ভোট হয়েছে শুক্রবার। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, ভোটদানের হার প্রায় ৬১ শতাংশ। গত বারের লোকসভা ভোটের হারের সঙ্গে তুলনা করলে যা কিছুটা কমই। তবে প্রথম দফায় যদিও বা বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তির ঘটনা সামনে এসেছে, দ্বিতীয় দফায় বড় কোনও গন্ডগোল হয়নি বলে দাবি করেছে কমিশন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তায় ভোট অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এ জন্য ওয়েব কাস্টিংয়ের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশনের বিবৃতি অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় প্রায় ১৫.৮৮ কোটি ভোটার তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন।
দ্বিতীয় দফায় মোট ৮৯টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও মধ্যপ্রদেশের বেতুল লোকসভা আসনে এই দফায় ভোট বাতিল হয়ে যায় প্রার্থীর মৃত্যু কারণে। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কেন্দ্রের বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)-র প্রার্থী অশোক বলভী। বেতুল লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে তৃতীয় দফায়, আগামী ৭ মে।
দ্বিতীয় দফায় উল্লেখযোগ্য প্রার্থী যাঁরা
শুক্রবার দ্বিতীয় দফা লোকসভা নির্বাচনে ভোটভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল গান্ধী, কেসি বেণুগোপাল, ভূপেশ বঘেল। রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী হেমা মালিনী, অরুণ গোভিল, তেজস্বী যাদব থেকে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। এ ছাড়াও ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে অশোক গহলৌতের পুত্র বৈভব এবং কংগ্রেস প্রার্থী শশী তারুরের। তবে এই দফায় বিজেপি এবং বিরোধীদের আলাদা করে নজর রয়েছে দুই রাজ্যে— কর্নাটক এবং কেরলে। গত লোকসভা ভোটে কর্নাটকের ২৮টি লোকসভা আসনের ২৫টিতেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। আবার গত বিধানসভা ভোটে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছে কংগ্রেস। কেরলে বাম এবং কংগ্রেস এই দ্বিমুখী লড়াইয়ে এ বার চিড় ধরাতে চায় বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর এবং ভি মুরলিধরনের মতো প্রার্থীকে কেরল থেকে প্রার্থী করে পিনারাই বিজয়নের রাজ্যে খাতা খুলতে চায় বিজেপি। আবার গত বারের সাংসদ রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে বিজেপির রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রকে প্রার্থী করে ওয়েনাড় কেন্দ্রে কংগ্রেসের একাধিপত্য এ বার চুরমার করতে চাইছে পদ্মশিবির। একমাত্র এই রাজ্য থেকেই বিজেপির কোনও প্রার্থী জয়ী হয়ে সংসদে যেতে পারেনি। অন্য দিকে, বিরোধীদেরও পাখির চোখ কেরল। কংগ্রেস এবং বামেরা একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বিজেপিকে হারিয়ে যারাই জয়লাভ করুক, সেটা হবে ‘ইন্ডিয়া’র জন্য মঙ্গলের।
ভোটের লাইনে অসুস্থ
বেঙ্গালুরুর বোম্মাসান্দ্রা কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন এক মহিলা। ভোট দেওয়ার জন্য সকাল ৭টা থেকেই ভোটারদের বিশাল লাইন পড়ে যায়। অনেক ক্ষণ ভোটের লাইনে অপেক্ষা করার পর মহিলা একটু অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। মাথার উপর তখন গনগনে সূর্য। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই ভোটার লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তার পর ভোটকেন্দ্রেই রাখা পানীয় জল খাওয়ার জন্য এগিয়ে যান। তখনই জ্ঞান হারান। ওই কেন্দ্রেই ভোট দিতে গিয়েছিলেন চিকিৎসক গণেশ শ্রীনিবাস প্রসাদ। তিনিও ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এই পরিস্থিতি দেখে বিন্দুমাত্র দেরি না করে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে মহিলার অবস্থা খতিয়ে দেখেন চিকিৎসক। তিনি বুঝতে পারেন মহিলা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কালবিলম্ব না করে তিনি সিপিআর দেওয়া শুরু করেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মহিলার জ্ঞান ফেরে।
ভোট দিতে গিয়ে মৃত্যু
চোপড়া বিধানসভার বিভিন্ন বুথে ঘুরে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান দার্জিলিঙের বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তা। তাঁর অভিযোগ, সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের বাধা দিয়েছে তৃণমূলের বন্দুকধারী গুন্ডাবাহিনী। কেন্দ্রীয় বাহিনীও নিরাপত্তা দিতে পারছে না বলেই অভিযোগ পাহাড়ের বিদায়ী সাংসদের। সব অভিযোগ উড়িয়ে, রাজুর বিরুদ্ধেই নির্বাচন আধিকারিকদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান অনীত থাপার সুরে সুর মিলিয়ে ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগও তুলছে রাজ্যের শাসকদল।
স্ট্রেচারে শুয়েই ভোটদান
কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা কলাবতী প্রতি বার নিয়ম করে ভোট দেন। লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় তাঁর ভোট ছিল। কিন্তু কয়েক দিন আগেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। কাশি এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নিউমোনিয়াও ধরা পড়ে। এর পর গত মঙ্গলবার জয়নগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় কলাবতীকে। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাঁর ভোট দিতে যাওয়া। কিন্তু শুক্রবার সকালে ভোট দিতে যাওয়ার বিষয়ে নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠেন কলাবতী। ঠিক করেন, স্ট্রেচারে শুয়েই ভোট দিতে যাবেন তিনি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরিবারকে রাজি করিয়ে এবং রোগবালাইকে তুচ্ছ করে স্ট্রেচারে শুয়ে ভোট দিতে গেলেন তিনি।
বিয়ে এবং ভোট— দুটোই
কর্নাটকের চিকমাগালুরের মুদিগেরে তালুকে বসেছিল বিয়ের আসর। কুন্ডুর গ্রামে ছিল ভোটগ্রহণ বুথ। সেখান থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বে বসেছিল বিয়ের আসর। বিয়ের আগেই বুথে চলে যান যান সৌম্যা। এ বছরই প্রথম ভোট দিলেন তিনি। সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিয়ের দিনই ভোট পড়ে গিয়েছে। তা বলে ভোটদান থেকে বিরত থাকতে চাননি সৌম্যা। তাই বিয়ের মণ্ডপে বসার আগে ভোটটা দিয়ে এসেছেন। চিত্রদুর্গ তালুকের বিজাপুর গ্রামে আবার বিয়ের পরেই ভোটের বুথে চলে যান অরুণ এবং কাব্য নামে দম্পতি। চামারাজানগরে বিয়ে করতে যাওয়ার আগে ভোটটা দিয়ে এসেছেন এক যুবক।
কর্নাটকের গ্রামে ১০০ শতাংশ ভোট
দ্বিতীয় দফার ভোটে কর্নাটকের এক গ্রামে পড়ল ১০০ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ গ্রামে যত জন ভোটার ছিলেন, সকলেই শুক্রবার গিয়ে ভোটদান করে এসেছেন। দক্ষিণ কন্নড় জেলার বেলথাঙ্গাড়ি তালুকের ছোট্ট গ্রাম বানজারুমালে। সেখানে ভোটের হার ১০০ শতাংশ।
বাংলার ভোট এবং…
দ্বিতীয় দফাতেও অশান্তির ঘটনা ঘটল বাংলার তিন লোকসভা কেন্দ্র। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফায় ৭১.৫৪ শতাংশ ভোট পড়েছে বাংলায়। আর অভিযোগের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৪৫৬টি। ভোট দেখতে বেরিয়ে সকাল থেকে বার বার বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন দার্জিলিং লোকসভার বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ রাজু। সকালে টিকিয়াপাড়া, দুপুরে ফাঁসিদেওয়ার পর দিনের শেষ লগ্নে রাজুকে ঘিরে বিক্ষোভ মাত্রা ছাড়ায়। তৃণমূল এবং বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি বেধে যায়। বস্তুত, চোপড়া বিধানসভার বিভিন্ন বুথে ঘুরে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান দার্জিলিঙের বিজেপি প্রার্থী রাজু। তাঁর অভিযোগ, সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের বাধা দিয়েছে তৃণমূলের বন্দুকধারী গুন্ডাবাহিনী। কেন্দ্রীয় বাহিনীও নিরাপত্তা দিতে পারছে না বলেই অভিযোগ পাহাড়ের বিদায়ী সাংসদের। সব অভিযোগ উড়িয়ে, রাজুর বিরুদ্ধেই নির্বাচন আধিকারিকদের মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ করছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান অনীত থাপার সুরে সুর মিলিয়ে ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগও তুলছে রাজ্যের শাসকদল।
দ্বিতীয় দফার সবচেয়ে ধনী প্রার্থী
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের (এডিআর) তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় দফা ভোটে সবচেয়ে ধনবান প্রার্থীর নাম বেঙ্করামানে গৌড়া বা স্টার চন্দ্রু। এইচডি কুমারস্বামীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই কংগ্রেস প্রার্থীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৬২২ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় দফা ভোটে সবচেয়ে দরিদ্র প্রার্থীর নাম লক্ষ্মণ নাগোরাও পাতিল। নান্দেড় আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াই করা লক্ষ্মণ নির্বাচনী হলফনামায় জানিয়েছেন তাঁর সম্পত্তি বলতে রয়েছে মাত্র ৫০০ টাকা!
‘ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছেন সূর্য’
বেঙ্গালুরু দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ তেজস্বী সূর্যের বিরুদ্ধে ধর্মীয় মেরুকরণের মাধ্যে ভোট চাওয়ার অভিযোগ করল বিরোধীরা। এ নিয়ে বেঙ্গালুরুর জয়নগর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তেজস্বীর কটাক্ষ, ‘‘এ সব করেও সারা দেশে কংগ্রেস ৩০টি আসনও পাবে কি না সন্দেহ রয়েছে।’’
সারা দিন শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফা ভোটে বড় কোনও অশান্তি হয়নি। শান্তিপূর্ণ ভোট পরিচালনায় তারা সফল।