সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আবার টাকার টানাটানি। অবস্থা এমনই যে,এর জেরে চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, বিশেষ করে পেসমেকার, ভাল্ভ ও হৃদ্রোগের চিকিৎসার জিনিসপত্র কেনা কমাতে কলকাতা ও জেলার একাধিক মেডিক্যাল কলেজ বাধ্য হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে, ডিসেম্বর মাসে এক ধাক্কায় কমেছে পেসমেকার বসানোর সংখ্যা।
এমনিতেই সরকারি হাসপাতালে পেসমেকার বসানোর জন্য ভর্তি হতে এবং অস্ত্রোপচারের তারিখ পেতে সাধারণ রোগীকে হন্যে হতে হয়। তার উপরে টাকার অভাবে যন্ত্রপাতি কিনতে না পেরে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমেগিয়েছে বেশির ভাগ হাসপাতালে। অনেক জায়গায় আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাজ চালাতে কম দামে নিম্ন মানের চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও অভিযোগ।
যেমন, একটি সংস্থার ‘সিঙ্গল চেম্বার’ পেসমেকারের মান নিয়ে এসএসকেএম ও আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হৃদ্রোগ চিকিৎসকেরা কয়েক মাস আগেই অভিযোগ জানিয়ে স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই পেসমেকার তাঁরা আর ব্যবহার করবেন না বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বরে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যে ক’টি পেসমেকার বসানো হয়েছে, তার বেশির ভাগই ওই সংস্থার সেই ‘বিতর্কিত’ পেসমেকার।কারণ, টাকার অভাবে ওই সংস্থার কম দামের পেসমেকার বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে হাসপাতালগুলি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বা ডেপুটি সেক্রেটারি চয়ন সাহা, কেউই কোনও মন্তব্যকরতে চাননি।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশ্যালিটিহাসপাতালকেও যন্ত্রপাতির জন্য গত ৪ ডিসেম্বর মাত্র ২ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে! অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিতে তো টাকার অঙ্ক এক কোটিও স্পর্শকরেনি। এতে কি একটি মেডিক্যাল কলেজ স্তরের হাসপাতালে কাজ চালানো সম্ভব? জানুয়ারির শুরুতে কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজকে ফের নামমাত্র কিছু টাকা দেওয়াহয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে পেসমেকার বসানো কমিয়ে দিতে হচ্ছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর,ডিসেম্বরে ন্যাশনাল মেডিক্যাল ৫৭ লক্ষ ১৪ হাজার, এন আর এস ৮৫ লক্ষ ৭১ হাজার, আর জি কর ৫৭ লক্ষ ১৪ হাজার, কলকাতা মেডিক্যাল ৮৫ লক্ষ ৭১ হাজার এবং সাগর দত্ত ১৪ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা পেয়েছে। ৬ ডিসেম্বরজেলা স্তরের হাসপাতাল, ডিআরএস ও মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ নয়, এমন হাসপাতাল মিলিয়ে৬৫টি জায়গায় ওষুধ ও সরঞ্জাম খাতে মোট ১০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকাদেওয়া হয়েছে।
এক মেডিক্যাল কলেজের অধিকর্তার কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনএখন আগের বকেয়া টাকা সময় মতো দিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু নতুন করে চিকিৎসা-সরঞ্জাম কেনার টাকা খুবই কম দিচ্ছে। আগে আমরাআগাম অনেক পেসমেকার, ভাল্ভ কিনে সঞ্চয় করে রাখতাম। সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ডাবল বা ডুয়াল চেম্বার পেসমেকারের দামএকটু বেশি হওয়ায় সেটা তো কার্যত বসানোই বন্ধ করতে হয়েছে। অথচ, অনেকেরই সেই পেসমেকারের প্রয়োজন হয়।’’ স্বাস্থ্যদফতরের কার্ডিয়োথোরাসিক চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের উপদেষ্টা প্লাবন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এত কম পেসমেকার বসার তো কথা নয়। হতে পারে কোনওঅর্থনৈতিক কারণ রয়েছে, বা রোগী কম আসছেন।’’
পরিসংখ্যান বলছে, এসএসকেএমে ২০২২ সালের মে মাসে ১০৩টি, জুনে ৮৩,জুলাইয়ে ১০১ এবং অগস্টে ৮৯টি পেসমেকার বসেছে। সেখানে ডিসেম্বরে সেই সংখ্যাটা কমে হয়েছে ৭০! আর জি কর-এ ২০২২ এর অক্টোবর থেকেই সংখ্যাটা কমতে শুরু করেছে। সেখানে অক্টোবরে মাত্র ১৮টি, নভেম্বরে ২৮টি আর ডিসেম্বরে ২৩টি পেসমেকার বসেছে। ডিসেম্বরে এসএসকেএমে ‘হাই এন্ড পেসমেকার’ বা অত্যন্ত আধুনিক মানেরপেসমেকার বসেছে মাত্র চারটি। নীলরতনে এই পেসমেকার বসেছে মাত্র একটি। কলকাতা মেডিক্যালকলেজ এবং আর জি করে বসেনি একটিও।