লালবাজারে বসেই মণ্ডপে ‘লাইভ’ নজরদারি, পুজোয় নয়া ভাবনা পুলিশের

সভা-সমাবেশ থাকলে সেই সংক্রান্ত ভিডিয়ো ফুটেজ সরাসরি যায় লালবাজারে। বড় দুর্ঘটনা বা সেই সংক্রান্ত কোনও জমায়েত তৈরি হলেও বহু ক্ষেত্রে তার অন্যথা হয় না। যুগ্ম নগরপাল (সদর) বা অন্য পুলিশকর্তাদের ঘরে বসে টিভিতে ‘লাইভ’ দেখে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কী ধরনের পদক্ষেপ করা হবে, সে ব্যাপারে। এই ব্যবস্থা কি এ বার দেখা যাবে দুর্গাপুজোতেও! এ বছর পুজোর সময়ে শহরের নিরাপত্তা আরও কয়েক গুণ বাড়াতে এমনই ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন পুলিশকর্তারা।

এই ভাবনা বাস্তবায়িত হলে শহরের সমস্ত বড় পুজো মণ্ডপের লাইভ ফুটেজ সরাসরি পৌঁছবে লালবাজারে। নিজেদের ক্যামেরায় পুজোর চার দিন ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাবেন পুলিশকর্তারা। মূল ভাবনা যুগ্ম নগরপালের (সদর) ঘর থেকে নজর রাখা। এর জন্য আলাদা করে ক্যামেরা বসানো হবে, না কি পুজো কর্তৃপক্ষের ক্যামেরা থেকেই ‘ফিড’ নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে অবশ্য এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মাঝারি এবং ছোট পুজোগুলিকেও কী ভাবে এমন নজরদারির আওতায় আনা যায়, সেই ভাবনাচিন্তা চলছে। এমনিতে সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রে নিজস্ব ক্যামেরা পাঠায় পুলিশ। সেটির ফুটেজেই সরাসরি নজরদারি চলে। এ বিষয়ে লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই সাফল্য মিলেছে। পুজোর ক্ষেত্রেও এমনটা করা গেলে ভালই হবে।’’

পুলিশি সূত্রের খবর, এমন ভাবনার মূলে রয়েছে পুজোর মাসখানেক আগে হঠাৎ কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) বদল। এত দিন ওই পদে থাকা সূর্যপ্রতাপ যাদবকে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার পদে বদলি করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এত দিন ডিসি (ট্র্যাফিক)-২, অর্থাৎ, মূলত দক্ষিণ কলকাতা ও দক্ষিণের সংযুক্ত এলাকার দায়িত্ব সামলানো এইলওয়াড শ্রীকান্ত জগন্নাথরাওকে।

কিন্তু পুজোর ঠিক মুখে এমন পদক্ষেপ নজিরবিহীন বলে মত অনেকেরই। কলকাতা পুলিশের অন্দরেই গুঞ্জন চলছে, পুজোর সময়ে ট্র্যাফিক সামলানো যেখানে পুলিশের অন্যতম বড় পরীক্ষা হিসাবে ধরা হয়, সেখানে হঠাৎ ডিসি (ট্র্যাফিক)-র বদলির ঘটনা চাপ তৈরি করতে পারে। কারণ, পুজোর জন্য প্রায় তিন মাস আগে থেকেই ডিসি (ট্র্যাফিক) নিজের মতো পথের পরিকল্পনা করে ফেলেন। কোন রাস্তা কোন অভিমুখে খোলা রাখা হবে বা কোথায়, কী ভাবে যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেই সংক্রান্ত রিপোর্টও তিনি তাঁর ঊর্ধ্বতন পুলিশকর্তাদের কাছে জমা করে দেন। সেই অনুযায়ী এর পরে পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়। এই কাজ সূর্যপ্রতাপও সেরে ফেলেছিলেন বলে খবর। এখন নতুন ডিসি-কে গোড়া থেকে পরিকল্পনা করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গেই রয়েছে স্কুলের সামনের পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়। কিছু দিন আগে বেহালায় লরির ধাক্কায় এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পরে এ বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দিতে বলেছেন নগরপাল।

এই পরিস্থিতিতে পুজোর পুলিশি পরিকল্পনা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তৎপর হয়েছেন যুগ্ম নগরপাল (সদর) সন্তোষ পাণ্ডে। প্রায় প্রতিদিনই আলাদা আলাদা পুলিশ এলাকা ধরে বৈঠক করছেন তিনি। সেই বৈঠকে পুজোকর্তাদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্র্যাফিক গার্ড ও থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকেরাও থাকছেন। সূত্রের খবর, সেই বৈঠক অনুযায়ী, মধ্য কলকাতার পুজোগুলির মধ্যে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার এবং উত্তরের পুজোগুলির মধ্যে টালা প্রত্যয়ে ভিড় বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই জন্য ওই দুই পুজো ঘিরে পুলিশ আলাদা পরিকল্পনার ভাবনাচিন্তা করছে।

তবে, এ বারও উত্তরের চেয়ে দক্ষিণে বেশি ভিড় হবে ধরে নিয়ে বাড়তি বন্দোবস্ত রাখার ভাবনাচিন্তা চলছে সুরুচি সঙ্ঘ, চেতলা অগ্রণী, একডালিয়া এভারগ্রিন, ত্রিধারার মতো পুজোগুলি ঘিরে। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং সংলগ্ন রাস্তাগুলির যান নিয়ন্ত্রণও পরিকল্পনায় রয়েছে। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘এ বছর কোনও সেতু বা উড়ালপুলের সমস্যাও নেই। ফলে উত্তর এবং দক্ষিণ শহরতলি দিয়ে জনস্রোত বিনা বাধায় শহরে ঢুকবে। এটা একটা স্বস্তির কারণ হলেও বড় চিন্তা শ্রীভূমির পুজোর জন্য ভিআইপি রোডের পরিস্থিতি। এ বার প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের তরফে রাস্তা সাফ রাখতে কলকাতা পুলিশকে প্রথম থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশ চায়, আরও বেশি রাস্তা ঘুরিয়ে শ্রীভূমির মণ্ডপে দর্শক ঢোকানো হোক। তাতে ভিআইপি রোড বাঁচবে।’’ কিন্তু শ্রীভূমির পুজোকর্তারা এই পরামর্শ মানবেন কি? প্রশ্ন রেখেই ভাবনা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.