আধ্যাত্ম হচ্ছে ভারতের একটি বিশেষ দর্শন। সৃষ্টিরচনার মূলে রয়েছে আত্মতত্ত্ব। আত্মতত্ত্ব হচ্ছে অব্যক্ত, অপরিবর্তনীয়, বিমূর্তকল্পনা যা থেকে এই ব্যক্ত সৃষ্টিনির্মিত হয়েছে। অব্যক্ত আত্মতত্ত্বই ব্যক্ত সৃষ্টিতে রূপান্তরিত হয়েছে। আত্ম ও সৃষ্টির মাঝে কোনাে পার্থক্য নেই। অব্যক্ত আত্মতত্ত্ব থেকে ব্যক্তি সৃষ্টি কেন হলাে তার কারণ কেবল আত্মতত্ত্বের সংকল্প।যেখানে যেখানেই একাত্মতা রয়েছে সেখানে সেখানেই আধ্যাত্মিক ভিত্তি রয়েছে এমনটা আমরা বলতে পারি। ভারতে গৃহব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, অর্থব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থার মূল অধিষ্ঠান অধ্যাত্মই বটে। তাই আধ্যাত্মিক অর্থশাস্ত্র বলার ক্ষেত্রে কোনাে অস্বাভাবিকতা নেই।ভারতের যুগ যুগের ইতিহাস প্রমাণ করছে যে এই দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের ব্যবস্থাসমূহকে এত উত্তমরূপে প্রস্তুত করেছে।
“অয়ং নিজঃ পরোবেতি গণনা লঘুচেতসাম।
উদার চরিতানাম তু বসুধৈব কুটুম্বকম।।”
- অর্থাৎ “এটা আমার, ওটা অন্যের , এই ভাব শুধু এক ক্ষুদ্র স্বার্থবাদী মানুষের। এক উদার চেতনা সম্পন্ন মানুষ এই পৃথিবীর সবাইকে একই পরিবারভুক্ত ভাবে।“ ভারতীয় সভ্যতার যে মূল মন্ত্র “বসুধৈব কুটুম্বকম” তার অপুর্ব ব্যাখ্যা স্বামীজি চিকাগো শহরে করেছিলেন। অতীতের সত্য ঘটনাগুলির নিখুত বিবরণ বা সমসাময়িক অবস্থার পর্যবেক্ষণই ঐতিহাসিকদের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্বাধীনােত্তর তথাকথিত বামপন্থী ঐতিহাসিকরা ইতিহাসকে বিকৃত করেই ক্ষান্ত হননি, বরং সত্যের অপলাপ করে রক্তাক্ত ইসলামিক ইতিহাসকে ‘হােয়াইট ওয়াশ’ করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছেন গত ৭০ বছর ধরে। অবশ্য তার পিছনে ছিল আন্তর্জাতিক গভীর ষড়যন্ত্র। হাজার বছরের গােলামির পর রক্তাক্ত ও দ্বিখণ্ডিত ভারতের প্রথম দূরদৃষ্টিহীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরুর প্রশ্রয়েই ওই ঐতিহাসিকরা কেন্দ্রীয় অনুদানে পুষ্ট জামিয়া মিলিয়া, জেএনইউ বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে ইতিহাসের নামে কল্পকাহিনি বা উপন্যাস লিখে চলেছিলেন। কিন্তু জাগছে ভারত , জাগছে মায়ের সকল সন্তান ,একজোট হয়ে একসূত্রে নিজেদের বেঁধে পুনরায় মায়ের কলঙ্কমোচনে জোটবদ্ধ হয়েছে। ইতিহাস শব্দের অর্থ হলাে ‘অতীতে যা বলা হয়েছিল। আবহমানকাল ধরেই দেখে এসেছি দেবাসুরের সংগ্রামে দৈব শক্তির কাছে পাশবিক শক্তিসম্পন্ন দানবীয় শক্তির বারংবার পরাজয় ঘটেছে।শাস্ত্রে আছে, সৃষ্টির শক্তিপুঞ্জ বিনাশের চেয়ে অনেকগুণ বেশি হয়।
দানবীয় শক্তি কেন দৈব শক্তিকে ভয় পায় ?
পটভূমি – ৯/১১ এ আমেরিকাতে লাদেনের হামলার পর আমেরিকা প্রথমে ইরাক , ও তারপর আফগানিস্তান আক্রমণ করল । তার আগে পর্যন্ত সারা বিশ্বের মুসলমানের মধ্যে জেহাদী হওয়ার প্রেরণা ছিল দুটি স্পট । একটি প্যালেস্টাইন , দ্বিতীয়টি কাশ্মীর ।ইহুদীদের দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে দ্বিতীয় বিশ্ব মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে তৈরী হল ইজরায়েল । যদিও এটা ইহুদীদের আদি বাসস্থান , কিন্তু ১৮০০ বছর তারা বিতাড়িত থাকার সময় ইসলামের অভ্যুত্থানের পর সম্পূর্ণ মধ্য প্রাচ্য , অর্থাৎ পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা দখল করে নিয়েছিল মুসলিমরা । তাই তাদের মাঝখানে বিধর্মী ইহুদীদের এই অবস্থান তারা সহ্য করতে পারছিল । ১৪ ই মে ১৯৪৮ , ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার পরপরই ওই অঞ্চলের মুসলমানরা ইহুদীদের উপর আক্রমণ শুরু করল ।১৯৬৭ সালে তিনটি বড় মুসলিম রাষ্ট্র ইজিপ্ট, জর্ডন ও সিরিয়া একসঙ্গে ইজরায়েলকে আক্রমণ করল । আর তাদেরকে বিমান বাহিনী দিয়ে প্রত্যক্ষ সাহায্য করল পাকিস্তান , লিবিয়া , আলজিরিয়া , মরক্কো , কুয়েত ও সৌদি আরব । মাত্র ৬ দিন এই যুদ্ধ চলল । অতি ক্ষুদ্র ও নতুন রাষ্ট্র ইজরায়েল এই ৬ দিনেই ৯ টি মুসলিম রাষ্ট্রের সৈন্যবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে দিল । বিপুল জয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইজরায়েল ছিনিয়ে নিল ঈজিপ্ট থেকে গাজা স্ট্রিপ ও বিশাল সিনাই উপত্যকা ; জর্ডনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল পশ্চিম তট ( West Bank ) ও পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়া থেকে ছিনিয়ে নিল গােলান হাইট । এই যুদ্ধ দেখিয়ে দিল সাহস ও সংকল্প কী অসাধ্য সাধন করতে পারে । ১৯৭৩ সালে আবার আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে একই ফল হল । পরবর্তী সময় নিজেদের রণকৌশল অনুসারে সিনাই ও গােলান হাইট ছেড়ে দিলেও গাজা ও পশ্চিম তটকে ইজরায়েল নিজেদের দখলে রাখল । তারা যুক্তি দিল যে বার বার প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলি তাদের উপর হামলা করছে । তাই তাদের অর্থাৎ ইজরায়েলের সীমারেখার নিরাপত্তার জন্য তারা ওই অতিরিক্ত ভূমিটাকে নিরাপত্তা বলয় হিসাবে ব্যবহার করবে ।একে তাে জেরুজালেম দখল করে রেখেছে । তার উপর আবার গাজা পট্টি ও পশ্চিমতট । এখান থেকে কয়েক লক্ষ মুসলমানকে রিফিউজী হয়ে চলে যেতে হল জর্ডন ও সিরিয়াতে । মুসলমানদের এই দুঃখ , বেদনা ও আক্রোশ থেকে জন্ম নিল প্যালেস্টিনীয় মুক্তি বাহিনী বা পি.এল.ও .।ইসলামের প্রেরণায় সারা বিশ্বে তৈরী হতে থাকল জেহাদী ও আত্মঘাতী । আমেরিকা ও পশ্চিমী দেশগুলি যেহেতু ইজরায়েল নির্মাণে সাহায্য করেছে , এবং যেহেতু আমেরিকায় বসবাসকারী ইহুদীরা আমেরিকা সরকারের নীতি নির্ধারণে বিশেষ ভূমিকা নেয় , সেহেতু , মুসলমানদের রাগ আমেরিকার উপর গিয়ে পড়ল । তাই , ওই যে বিপুল সংখ্যায় জেহাদী আত্মঘাতী তৈরী হয়েছে , তারা সারা বিশ্বে আমেরিকান দূতাবাস ও আমেরিকান নাগরিক ও পর্যটকদের উপর হামলা চালাতে থাকল। এরই চুড়ান্ত পরিণতি ঘটল ১১ ই সেপ্টেম্বর ২০০১ নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে লাদেনের বিমান হানায় । এই হামলায় সাড়ে তিন হাজার মানুষকে হত্যা করল জেহাদী সন্ত্রাসবাদীরা। পটভুমি একই, লক্ষ্য এবার ভারত , কেননা গােটা পৃথিবীতে মুসলমানদের মধ্যে প্রচার করা হয়েছে যে ভারত অন্যায়ভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর দখল করে রেখেছে এবং কাশ্মীরীদের উপর খুব অত্যাচার করছে । ভারতীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মিথ্যা কাহিনী প্রচার করা হয়েছে । ফলে কাশ্মীর থেকে বহুদূরে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত জেহাদী তৈরী হচ্ছে কাশ্মীরকে আজাদ করার জন্য । এবং তারা পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে আসছে তাদের ধর্মভাইদের রক্ষা করার জন্য । রক্ষা করার উপয় কী ? হিন্দু হত্যা ও ভারতীয় সেনা হত্যা। এদিকে তৎকালীন আমেরিকা সরকার চাইল যে গাজা মুসলিমদের ফেরত দিতে হবে, অসুবিধা এক জায়গায়,ইজরায়েল ও ভারতকে দিয়ে এই প্রস্তাব গ্রহণ করাবে কি করে ? দুটো দেশেরই জনমত তাে এটা স্বীকার করবে না । যে সরকারই এই কাজ করতে যাবে তার বিরুদ্ধেই বিপুল জনমত তৈরী হবে এবং সেই সরকার গদিচ্যুত হবে।১৯৮২ সালের আরব ইজরায়েল যুদ্ধের সময় ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন শ্যারন । সেই সময় লেবাননে একটি প্যালেস্টিনীয় মুসলিমদের রিফিউজী ক্যাম্পকে ঘিরে রেখেছিল ইজরায়েলী সেনাবাহিনী । সেই অবস্থায় লেবাননের একটি খ্রীষ্টান সন্ত্রাসবাদী গােষ্ঠী ঢুকে ৩৫০০ মুসলমানকে হত্যা করেছিল । ইজরায়েল দ্বারা গঠিত একটি তদন্ত কমিশন এই ঘটনায় শ্যারনকে পরােক্ষভাবে দোষী সাব্যস্ত করলেও এই ঘটনায় তিনি সাধারণ ইহুদীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়েছিলেন । ২০০১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন । আমেরিকা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হতে সাহায্য করল । এদিকে শ্যারনের লােভ ক্ষমতায় , অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী পদে । আমেরিকা শ্যারনকে বােঝাল যে ‘ আমরা তােমাকে প্রধানমন্ত্রী করছি ‘ । এদিকে সাধারণ মানুষ তাে কড়া নেতা চায়ই । সুতরাং শ্যারনকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানাে কঠিন হল না , অথচ শ্যারন আমেরিকার কাছে কৃতজ্ঞ থাকলেন । শ্যারনের দুর্বলতা ( ১৯৮২ – র লেবাননে গণহত্যার অভিযােগ ) ও ক্ষমতার লােভকে কাজে লাগিয়ে আমেরিকা তাকে হাতের মুঠোর মধ্যে করে ফেলল এবং তাঁকে দিয়েই তাদের দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা – গাজা পট্টি ঈজিপ্টকে ফেরৎ দেওয়া করালাে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে । ইজরায়েলের সাধারণ মানুষ জোরালাে প্রতিবাদ করতে পারল না , কারণ তাদেরই পছন্দের নেতা এই কাজ করলেন । অনুরূপ পরিস্থিতি কাশ্মীরকে নিয়েও । কাশ্মীর আজ ভারতের অখন্ডতার সামনে বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে । শ্যামাপ্রসাদের বলিদান সারা ভারতের সমস্ত হিন্দু সংস্থাগুলির কর্মী , সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যে কাশ্মীর সম্বন্ধে অনমনীয় মনােভাবের সৃষ্টি করেছে । যদিও আজও কাশ্মীর হিন্দুশূন্য ( স্থায়ী বাসিন্দা আর কেউ নেই ) , কারগিল যুদ্ধ , অমরনাথ তীর্থযাত্রা , সবশেষে ৩৭০ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত সারা দেশের হিন্দুদেরকে কাশ্মীরের সঙ্গে মানসিক ভাবে যুক্ত করেছে ।রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ তথা আরএসএস প্রথম থেকেই ৩৭০ ধারার বিরোধী ছিলো। বেশ কিছু বক্তব্য এবং নিরন্তর সংগ্রামের দ্বারা তারা এই ধারার বিরোধী আন্দোলন সক্রিয় রেখেছিলো। সঙ্ঘের মতে সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে। অর্গানাইজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক সদাশিবরাও গোলওয়ালকর বলেছিলেন যে কাশ্মীরকে ধরে রাখার একটিমাত্র উপায় রয়েছে এবং তা হল ভারতের সাথে সম্পূর্ণ একীকরণ। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানিয়েছিলেন যে ৩৭০ ধারা অবশ্যই বর্জন করতে হবে এবং জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য পৃথক পতাকা এবং পৃথক সংবিধান পরিত্যাগ করতে হবে।স্বাধীনতার পর আরএসএস ৩৭০ ধারার বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিল। তা ছিলো ১৯৪৭ সালের ‘প্রজা পরিষদ আন্দোলন’। ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি ৩৭০ ধারা বাতিলের জন্য আরএসএস এর আন্দোলনকে স্লোগান দিয়েছিলেন: ‘এক দেশ মে দো বিধান, দো নিশান অর দো প্রধান না হো সক্তে’ (এক দেশে দুটি সংবিধান, দুটি চিহ্ন এবং দুটি মাথা থাকতে পারে না)। এবার ইজরায়েল-হামাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ,ইজরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণ একদিন না একদিন হতোই , ইজরায়েলও আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছিল। হামাস এর একটাকেও জীবন্ত রাখবে না এই মনোভাব নিয়ে তাদের আর্মি ও এয়ারফোর্স অভিযান চালিয়েছে।ইজরায়েল সরকার প্যালেস্তিনিয়দের কাছে আহ্বান রেখেছে যে পণবন্দী ইজরায়েলিদের ছেড়ে দিলে তারা গাজাতে জল , বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ পুনরায় চালু করবে। নাহলে এই সব সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।ইজরায়েলের হাসপাতালে ভর্তি হামাস এর জঙ্গিদের(যারা ইজরায়েলে নরসংহার করার সময় ইজরায়েল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে) চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছে। যদি হামাস এর হাতে আটক ইজরায়েলিদের ছাড়া না হয় তবে ওই আহত হামাস জঙ্গীদের আর কোন চিকিৎসা হবে না। ওইভাবেই পড়ে থাকবে। প্যালেস্টাইনের সমর্থনে মিছিল করা নিয়ে লন্ডন পুলিশকে কটাক্ষ করেছিলেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান। প্রথমে তাঁর পাশে দাঁড়ালেও পরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই মন্ত্রীকে সরিয়ে দিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে। একপক্ষ যখন ইহুদি রাষ্ট্রের পক্ষে, অন্যদের বক্তব্য- প্যালাস্টাইনের উপরে দশকের পর দশক ধরে অত্যাচার চালাচ্ছে ইজরায়েল (Israel)।ঠিক কতটা বর্বরতা চালিয়েছে হামাস এই কাপুরুষোচিত চটজলদি হামলায়..এক গায়িকাকে ধর্ষণ করে তাঁর নগ্নদেহ গাড়িতে করে ঘোরানো হয়েছে ।কয়েকশো মহিলাকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে।কয়েকশো নারী, শিশু সহ বৃদ্ধ ইহুদী নাগরিকেরা এখনও তাদের কাছে পণবন্দী।
ধর্ষিতা নারীদের মৃতদেহগুলির ওপরও যৌন আচরণ করা হয়েছে।সৌদি আরব সারা বিশ্বে জঙ্গিদের সবচেয়ে বড়ো মদতদাতা ও অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। সেই সৌদি আরবই এবার ৫৯ জন হামাস জঙ্গিদের ২১ বছরের কারাদণ্ড দিলো সৌদি আরব।ভারতের স্বাধীনতার ৯ মাস পর ইজরায়েলও একটি দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। বিগত ৭৩ বছরে ইজরায়েল ও ভারতের বন্ধুত্বে মতাদর্শগত সমর্থন রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ ও বিশ্বাস বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ। প্রবীণ সাংবাদিক সুধীর পাঠক বলেছেন, নিজেদের মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও সমগ্র বিশ্বজুড়ে থাকা ‘ইহুদি জনগণ’ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁদের পরবর্তী নতুন বছর মাতৃভূমি ইজরায়েলে উদযাপন করবেন। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, ‘ইহুদি জনগণ’ সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাঁদের নিজস্ব দেশ তৈরি করেছিল। ইজরায়েলের চিন্তাভাবনা এবং সঙ্ঘের আদর্শের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তৎকালীন মহারাষ্ট্র প্রান্তে সঙ্ঘের কার্যবাহ নানা পালকর ইহুদি জনগণের ইতিহাস নিয়ে ‘ছল সে বল কি ওর’ নামক বই লিখেছিলেন। যে কোনও দেশের ধারণায় জমির টুকরো গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং জাতীয়তাবাদ মানুষের মনে থাকা আবশ্যিক।
জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছে ভারতে, বস্তুত আসল কথা হল, ভারতের জাতীয় সংস্কৃতি প্রকৃতপক্ষে হিন্দু সংস্কৃতিই। এর পাশাপাশি অন্যান্য সংস্কৃতির কিছু অবশিষ্টাংশ বিদেশী শত্রু ও শাসকের মাধ্যমে আমাদের দেশে রয়ে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি এমনই শোচনীয় যে স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারাকেও বর্তমানে নেহরুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হয়। স্বামীজির বার্তার এক বিকৃত রূপ এমন ভাবে উপস্থাপিত করা হয় যাতে মনে হয় রাষ্ট্র সম্পর্কে স্বামীজি ও পরবর্তীকালে আগত নেহরুর চিন্তাধারা প্রায় একই। স্বামীজির বক্তব্য এমনভাবে প্রচারিত হয় যে, যে কেউ ভাবতে পারেন, স্বামীজি সেই সেই কথাই বলেছেন যা পরর্তীকালে নেহরু বলেছেন। বাস্তবে নেহরুর বক্তব্যকেই স্বামীজির বক্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।বাস্তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বামী বিবেকানন্দের সমস্ত লেখনীতে হিন্দুধর্ম, হিন্দুরাষ্ট্র, হিন্দুবর্ণ এবং ভারত – এই চারটি শব্দ সমার্থক এবং পরস্পর আন্তঃ–বিনিময়যোগ্য। বহু জায়গায় স্বামীজি ‘হিন্দু‘ ও ‘ভারত‘ এই দুটি শব্দকে একই অর্থে একই বাক্যে ব্যবহার করেছেন। স্বামীজির বার্তার প্রত্যেকটি শব্দ হিন্দু ব্যতীত আর কারোর উদ্দেশ্যে ছিল না। কিন্তু তিনি “ভারত” ও ” ভারতবাসী ” এই দুটি শব্দের ব্যবহার করেছেন কারণ তাঁর মতে হিন্দু, ভারত ও ভারতবাসী এই শব্দগুলি সমার্থক।ইজরায়েল হলো ইহুদি জাতির দেশ। আরবের সাত শতাংশ মানুষ এখানে রয়েছে যারা মুসলিম। ভারতে মুসলমানরা জনসংখ্যার এগার শতাংশ, ইজরায়েলের চেয়ে খুব বেশি নয়। ইজরায়েলে এই আরবীয়দের নাগরিকত্বের সম্পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয় এবং তাদের ধর্ম অনুসরণ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়। তবে তারা ইহুদি হিসাবে নয় বরং সংখ্যালঘু হিসাবে বিবেচিত। ইহুদি রাষ্ট্রের বিষয়গুলি কীভাবে পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে এই আরবীয়দের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন বলে মনে করা হয় না। ভারতের ইতিহাস তাে দুশাে বছরের নয়, লক্ষ বছরের ইতিহাস। এই লক্ষ বছরে কতগুলাে স্বাধীনতা দিবস এসেছে রাষ্ট্রের জীবনে? রাজা সুহেলদেব যেদিন তুর্কিদের তাড়িয়েছিলেন, সেটাও তাে স্বাধীনতা দিবস ছিল, তাই না? সম্রাট স্কন্দগুপ্ত যেদিন হুণদের তাড়িয়েছিলেন? শিবাজী যেদিন স্বরাজ্য ঘােষণা করেছিলেন? হরিহর বুক যেদিন স্বাধীন বিজয়নগরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন? লাচিৎ বরফকুন যেদিন সরাইঘাটে মােগলদের জলসমাধি দিয়েছিলেন? মার্তণ্ড বর্মা যেদিন কোলাচলে ডাচ আর্মাডার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিলেন? নেতাজী যেদিন আন্দামান নিকোবরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছিলেন? মৈরাংয়ে তেরঙ্গা উড়িয়েছিলেন? সেই স্বাধীনতা দিবসগুলে কেন উদ্যাপন হয় না?সত্যিই কী অখণ্ড ভারতের পুনর্নির্মাণ সম্ভব? অটক থেকে কটক এক রাজশক্তি, এক শাসন? একাগ্রতা, ধ্যেয়নিষ্ঠা ও নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকলে কোনাে কিছুই অসম্ভব নয়। কে ভেবেছিল, আরব আমিরাতের সঙ্গে ইজরায়েলের বন্ধুত্ব হবে? তুর্কির সঙ্গে ঝগড়া বাধবে গ্রিসের? চীনতুর্কি-পাকিস্তান-ইরান, এক নতুন অক্ষ নির্মাণ হচ্ছে। এদিকে খনিজ তেলের লাভের গুড় তলানিতে এসে ঠেকেছে, অন্যদিকে আরব-তুর্কি সংঘর্ষের আশঙ্কায় কাঁপছে মধ্যপ্রাচ্য।কে ভেবেছিল রামমন্দির নির্মাণ এই চোখে এই দেহে দেখে যেতে পারব? ভারতের ঘটনাবলী বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নব জোয়ার আনবে। পিছু হটা শেষ, এগিয়ে চলা শুরু। এই সময় লক্ষ স্থির রাখতে হবে। সুযােগ ঠিকই এসে যাবে।
অখণ্ড ভারত ছিল অর্থনৈতিকভাবে সফল একটা মডেল। এই মডেলে অন্তর্ভুক্ত হলে সবারই লাভ। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয় দুটি প্রণালী দিয়ে ভারতের পূর্বে মলাক্কা প্রণালী ও ভারতের পশ্চিমে হরমুজ প্রণালী। ভারত খণ্ডিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এই দুই প্রণালী থেকে দূরে সরে এসেছি। অখণ্ড ভারত এই সমস্যার নিরসন করবে। একদিকে মধ্য এশিয়া, ইউরােপ ও আফ্রিকা, অন্যদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে বাধাহীনভাবে ব্যবসা চালানাে সহজ হবে। মধ্যযুগে ভারতের, বিশেষত বঙ্গদেশের পতনের মূল কারণ ছিল ভারত মহাসাগরের সর্বত্র ভারতীয় নৌসেনার প্রভুত্ব প্রয়ােজন, ভারতের সার্বভৌমত্ব প্রয়ােজন। যাতে আমাদের বাণিজ্যপােতগুলাে নির্দ্বিধায় কারাের চোখ রাঙানি ছাড়াই মহাসাগর পাড়ি দিতে পারে। তাই শক্তিশালী স্বয়ংসম্পূর্ণ ভারতের মূল ভিত্তি হল হিন্দুত্ব , আর হিন্দুত্বই হল রাষ্ট্রীয়ত্ব। সকলকে হিন্দু বলা মানে এই নয় সকলের ধর্ম বা ভাষা পরিবর্তন করতে হবে। হিন্দুত্ব অতি পবিত্র একটি বিষয় এবং আমরা সকলেই আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের উপরে শ্রদ্ধাশীল।আমাদের ইজরায়েলের কাছ থেকে শিখতে হবে কিভাবে তারা তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে, আজ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে।
ভারত কিভাবে বিশ্বগুরু হয়ে উঠেছে ?
ঘটনা-১:- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে আটজন প্রাক্তন নৌবাহিনী কর্মকর্তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যাদের কয়েক মাস আগে কাতারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল , ভারতবর্ষের পররাষ্ট্রনীতির কূটনৈতিক সাফল্য, লাগাতার প্রচেষ্টা, প্রমাণের আদান প্রদান ও সবশেষে প্রধাণমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপে এই প্রক্রিয়া আশার আলো দেখেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
ঘটনা-২:- কানাডায় হচ্ছে টা কী? কে এলো? টপা টপ ভারত বিরোধী চক্রী, সন্ত্রাসীদের নিকেশ করছে কারা? খালিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জর যে রোজ ভারতকে টুকরো করে দেওয়ার হুমকি দিত তাঁকে মারলো কে? পার্কে বসে থাকা আরেক খালিস্থানি গ্যাংষ্টার খালাস। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তো শিশুদের মতো করছে। বলে ভারতের ইন্টেলজেন্স মেরেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে বলেছে অযৌক্তিক, হাস্যকর, অদ্ভুত অভিযোগ। কানাডায় বাড়িতে যাঁদের যাঁদের বিকৃত খালিস্থানি ম্যাপ ছিল, সবাই গুটিয়ে লুকিয়ে রেখেছে। হাই এলার্ট জারি।ভাবছেন ভারত বিরোধী হাওয়া তুলে, খালিস্থানিদেড় ফান্ডিং করে ও বিরাট নেতা হবেন , আবার গোটা শিখ সম্প্রদায়ের আশির্বাদও পাবে। বিরাট ভুল করছে। পাকিস্তানও এই ভুলটা করেছিল। বাংলাদেশের পাল্টা ভেবেছিল পঞ্জাবকে ভেঙে খালিস্তান বানাবে। দেশবাসী একত্রিত দিয়ে আটকে দিয়েছিল। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার প্রসঙ্গে কানাডার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “আমরা বুঝতে পারছি যে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার প্রশ্নে এটা (নিজ্জর হত্যা সংক্রান্ত বিতর্ক) একটা কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” এর পরই তাঁর সংযোজন, “কিন্তু দেশের আইন এবং নাগরিকদের রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই আমরা আমরা তদন্ত চালিয়ে সত্যিটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করব।”
ভারতে ধর্ম ও সংস্কৃতি রয়েছে, যা সব সম্প্রদায় এবং তাদের বিশ্বাসকে সম্মান করে কারণ ভারত হিন্দুদের দেশ। তার মানে এই নয় যে আমরা বাকিদের (ধর্মগুলিকে) প্রত্যাখান করব। আপনি যখন নিজেকে হিন্দু বলছেন, তখন আর বলার দরকার নেই যে মুসলমানরাও সুরক্ষিত। কেবলমাত্র হিন্দুরাই এটা করে থাকে। ভারতেই এটা হয়, আমরা বিশ্ববাসীকে নিজের আত্মীয় বলেই মনে করি , ভারতের এমন ইস্যুতে কখনওই যুদ্ধ হয়নি। শিবাজী মহারাজের আমলেও আগ্রাসন ছিল। কিন্তু এই ইস্যুতে আমরা কখনও কারও সঙ্গে যুদ্ধ করিনি। এই কারণেই আমরা হিন্দু।
Saptarshi Bhattacharya, Berhampore