অন্ধকূপে ডুবে ছিল জীবন! হামাস, ইজ়রায়েলের বন্দিবিনিময়ে মুক্তির হাসিকান্না পরিবার থেকে পরিবারে

প্রায় দু’বছর তাঁরা সকলেই ঘরছাড়া ছিলেন। কেউ ইজ়রায়েলের হাতে বন্দি। কেউ হামাসের। শান্তিপ্রস্তাবের প্রথম পর্বে সম্মত ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস শুরু করেছে বন্দিবিনিময়। সেই বন্দিদের মুক্তি, পরিবার-প্রিয়জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, হাসি-কান্না-আবেগের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বে।

দীর্ঘ দিনের বন্দিদশা কেটেছে। বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। কোথাও স্বামীর সঙ্গে দেখা হল স্ত্রীর। কোথাও মাকে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদলেন ছেলে। কোথাও গভীর আশ্লেষে প্রেমিক-প্রেমিকা। তাঁরা একই সঙ্গে কাঁদছেন এবং হাসছেন। সোমবার মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু প্যালেস্টাইনি বন্দিকে নিয়ে বেশ কিছু বাস ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের রামাল্লায় পৌঁছে যায়। আবার গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলি বন্দিদের মুক্তি দিতে শুরু করে হামাসও। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জীবিত সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে খবর।

গত শুক্রবার দুপুরে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর দেখা গিয়েছিল হাজার হাজার প্যালেস্টাইনি তাঁদের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছেন। বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও রাত কাটিয়েছেন অনেকে। তবে নির্ভয়ে, শান্তিতে। সোমবার বিকেলে গাজ়ায় পৌঁছোন বহু প্যালেস্টাইনি। দক্ষিণ গাজ়ার খান ইউনূসের নাসের হাসপাতালের বাইরে তাঁদের স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। তাঁরা সকলে উচ্ছ্বসিত এবং আবেগতাড়িত।

অনেক দিন পর, আবার চেনা মুখ!

তবে ইজ়রায়েল চায় না যে তারা যাদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে মনে করে, তাদের মুক্তির জন্য কোনও উদ্‌যাপন হোক কিংবা হামাসকে কোনও কৃতিত্ব দেওয়া হোক। প্যালেস্টাইনিদের কাছে আবার বন্দিরা প্রতিরোধের প্রতীক— তাদের উপর কঠোর আচরণের নিজস্ব বর্ণনা রয়েছে। সেই বন্দিরা যখন বাড়ি ফিরছেন, তাঁদের কারও মুখ ফ্যাকাশে। কেউ কেউ এতটাই দুর্বল যে হাঁটতে গিয়ে সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। একজন চিকিৎসক বিবিসিকে বলেন, ‘‘মুক্তি পাওয়ার ঠিক আগে কয়েক জনকে পেটানোর ফলে তাঁরা জখম হয়েছেন।’’

বিবিসি-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইজ়রায়েলে বন্দি থাকার পর সোমবার প্রায় ২ হাজার প্যালেস্টাইনি গাজ়া এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক দিয়ে বাড়ি ফেরেন। ইজ়রায়েলের জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, ১৯৮ বন্দিকে ডিটেনশন সেন্টার থেকে ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা। মোট দুটো দলে তাঁরা এলাকায় ফিরছেন।

প্রিয়জনকে দেখার আনন্দ।

উল্লেখ্য, সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেন। গাজ়ায় প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা দখল ইজ়রায়েল দখল করেছিল বলে অভিযোগ। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রথম দফায় সেনা সরানোর পর গাজ়ার ৫৩ শতাংশ এলাকা ইজ়রায়েলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, প্রথম ধাপের সেনা সরানোর কাজ ইতিমধ্যে শেষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.